ত্রিফলা-ধাক্কা মানছে না পুরসভা
প্রতি মাসে ১২ কোটি খরচ বেড়েছে বিদ্যুতে

লক্ষ্য: সৌন্দর্যায়ন।
স্থান: কলকাতার পথ। সারি সারি হলুদ সোডিয়াম আলো। সঙ্গে তার চেয়ে ঘন-ঘন তিন ফলা বাহারি বাতি।
কাল: সন্ধে থেকে ভোর। কখনও বা ভুল করে দিনেও।
পাত্র: মেয়র। চিন্তিত। গত বছর এই সময়ে পুরসভায় মাসিক বিদ্যুৎ বিল আসত ১৩-১৪ কোটি টাকা। এখন আসছে ২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে বাড়তি খরচ ১১-১২ কোটি টাকা। বছরে অন্তত ১৩০ থেকে ১৪০ কোটি টাকা!
ফল: উন্নয়নে কোপ। মানছেন খোদ মেয়রও।
সমাধানের পথ: পুরসভার মতে এনার্জি অডিট। খুঁজে দেখা হবে, কোথায় হচ্ছে বিদ্যুতের বাড়তি খরচ!
অডিট কী রিপোর্ট দেবে সেটা পরের কথা। কিন্তু একই পথে দু’রকম বাতির মধ্যে সময় ভাগ করে দিলেই যে বিদ্যুতের অপচয় ও বিলের বহর কমতে পারে, সে কথা কেন ভাবা হচ্ছে না? মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বুধবার বলেন, “কিছুটা অপচয় নিশ্চয়। আমরা টাইমার বসানোর কথা ভাবছি। আলো দফতর এর ব্যবস্থা করেনি কেন, তা জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” পুর-কমিশনার অবশ্য এর আগে একাধিক বার আলো দফতরকে টাইমার বসানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই তা মানা হয়নি। মেয়র স্বীকার করেন, অনেক রাস্তায় রাতভর ত্রিফলা আলো জ্বলে। সেগুলি বন্ধ রাখা সম্ভব। তবে এ দিনও মেয়রের দাবি, “ত্রিফলা নয়। তার জন্য বিদ্যুৎ বিল হয়তো কিছুটা বাড়তে পারে, বছরে ১১-১২ কোটি টাকা হতে পারে না। পুরসভায় অনেকগুলি পাম্পিং স্টেশন চলছে জল সরবরাহ ও নিকাশির জন্য। আগে অত ছিল না। বেড়েছে স্ট্রিট লাইটও।” মেয়রের আরও যুক্তি, “আগে স্ট্রিট লাইটের মিটার ছিল না। এখন মিটার বসানোয় বিদ্যুতের বিল বেড়েছে।”
কিন্তু এনার্জি অডিট করে কি বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধ হবে? মেয়র বলেন, “কী ভাবে বিদ্যুতের বিল বাড়ছে, তা জানাটা জরুরি।” এ নিয়ে পুরসভার এক কর্তার অবশ্য বক্তব্য, অডিট যাঁরা করবেন, তাঁদের সুপারিশ মানাও জরুরি।
সিইএসসি-র এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “পাম্পে হাইটেনশন লাইন ব্যবহার হওয়াও বিল বাড়ার অন্যতম কারণ।” যদিও রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, কলকাতায় পাম্পের ব্যবহার বছরখানেক আগেও ছিল। হয়তো এখন তা বেড়েছে। তার জন্য বিদ্যুতের বিল এত বাড়তে পারে না।” তাঁর মতে রাতে স্ট্রিট লাইটের ব্যবহার কমালে অনেকটা সাশ্রয় হবে।
বিদ্যুৎ বিলের বহর নিয়ে পুরসভার অর্থ দফতরের এক অফিসার বলেন, “গত এক বছরে সিইএসসি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাতেও বিল এত বাড়ার কথা নয়। আগেকার সোডিয়াম আলো রেখে দিয়েই যথেচ্ছ ভাবে ত্রিফলা বাতি লাগানোয় খরচ এতটা বেড়ে গিয়েছে। সেই রিপোর্ট আমরা পুর-কর্তৃপক্ষকে দিয়েছি।”
আর্থিক সঙ্কটের কারণ দেখিয়ে পুরসভা ইতিমধ্যেই মূলধনী প্রকল্প, স্বয়ংক্রিয় নিকাশির কাজ স্থগিত রেখেছে। কিন্তু বন্ধ হয়নি ত্রিফলা আলো লাগানো। আর্থিক সঙ্কটের জন্য এখন অন্য উন্নয়নমূলক কাজেও কোপ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পুর-কর্তাদের অনেকেই। এমন অবস্থায় বিদ্যুতের ব্যয়সঙ্কোচ যে জরুরি, তা তাঁরা মেয়রকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি করেন ওই পুর-কর্তারা। বিদ্যুতের খরচে বিপুল বৃদ্ধি নিয়ে বুধবার পুর কমিশনারের ঘরে পুর কমিশনার খলিল আহমেদ, যুগ্ম কমিশনার, কন্ট্রোলার অফ মিউনিসিপ্যাল ফিনান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস (সিএমএফএ), ডিজি (আলো), ডিজি (জল)ও নিকাশি দফতরের পদস্থ অফিসারদের নিয়ে বৈঠক হয়। পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদেরও পরামর্শ নেবে পুরসভা। ডাকা হবে যাদবপুর এবং শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের একাধিক বিশেষজ্ঞকে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.