বিমানভাড়া বাড়ায় রাজারহাটের রজনীগন্ধার রফতানি কার্যত বন্ধ হতে বসেছে। যদিও রজনীগন্ধা চাষিরা জানাচ্ছেন, এ বছর রাজারহাটে উৎপাদন হয়েছে গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তা সত্ত্বেও রফতানি কার্যত বন্ধ হওয়ায় তাঁরা স্থানীয় বাজারেই সেই ফুল কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
রাজারহাটের গেড়াগেড়ি, ঝালিগাছি, জগদীশপুর, পাথরঘাটার বিস্তীর্ণ জমিতে রজনীগন্ধার চাষ। সেই দুই পাপড়িযুক্ত রজনীগন্ধার মান এতই ভাল যে অধিকাংশই কুঁড়ি অবস্থায় রফতানি হত নেদারল্যান্ডসে। রাজ্যের উদ্যান পালন দফতরের রফতানি বিভাগের আধিকারিকেরা জানান, রাজারহাটের রজনীগন্ধার কদর সবচেয়ে বেশি নেদারল্যান্ড্সেই। গত বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সেখানে রফতানি হয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ রজনীগন্ধার স্টিক।
এ বছর ছবিটা অন্য রকম। গত বছর এক কিলো রজনীগন্ধার বিমানভাড়া ছিল ১১০ টাকা, এখন তা হয়েছে ১৫৫ টাকা। অথচ রফতানির জন্য প্রয়োজনীয় সব মাপকাঠিই ওই রজনীগন্ধায় আছে। পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন নিগমের রফতানি বিভাগের আধিকারিক শিবাজী রায় বলেন, “বিদেশে ফুল রফতানির কিছু মানদণ্ড আছে। ফুল ব্যাকটিরিয়া বা ছত্রাক-মুক্ত কি না, বিমানবন্দরেই পরীক্ষা করা হয়। রাজারহাটের রজনীগন্ধা পরীক্ষায় সব সময়েই উত্তীর্ণ হয়েছে।” |
রাজারহাটের রজনীগন্ধার খেত। ছবি: শৌভিক দে |
স্থানীয় চাষি বাবলু মণ্ডল বলেন, “গত বছর দেড় লক্ষ স্টিক নেদারল্যান্ডসে রফতানি করেছি। এ বছর উৎপাদন বেশি হলেও বিমানভাড়া বাড়ায় পড়তায় পোষাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কম দামে মল্লিকঘাট ফুলবাজারের মতো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছি।” চাষিরাই জানাচ্ছেন, স্থানীয় বাজারে রাজারহাটের রজনীগন্ধার জোগান এত বেশি যে মল্লিকঘাট ফুলবাজারে তাঁরা প্রতিটি স্টিক ৫-৭ টাকায় বিক্রি করছেন।
যদিও গত বছর পর্যন্ত রজনীগন্ধা রফতানিতে চাষিদের উৎসাহ ছিল যথেষ্ট। তাঁদের বক্তব্য, খেত থেকে রজনীগন্ধা তুলে তার মান ঠিক রাখতে তাকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে হয়। চাষিরা নিজেদের উদ্যোগে কুলিং মেশিন ভাড়া করে রজনীগন্ধা রাখতেন। পরে প্যাকেজিং হয়ে সেগুলি উঠত বিমানে। মেশিন ভাড়া থেকে প্যাকেজিংয়ে খরচ বেশি হলেও রফতানি করে লাভ হত। এ বছর বর্ধিত বিমানভাড়ায় রফতানি করতে চাষিদের কার্যত লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। তাঁদের কথায়, বিদেশে গত বছর একটি স্টিকের দাম ছিল সাড়ে তেরো থেকে চোদ্দো টাকা। এ বছর বিমানভাড়া বাড়ায় সেই ফুলই বিদেশে পাঠানোর খরচ পড়বে ১৪ থেকে ১৫ টাকার কাছাকাছি।
তবে পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন নিগমের রফতানি বিভাগের আধিকারিকদের মতে, রাজারহাটের রজনীগন্ধা রফতানির জন্য পরিকাঠামোর উন্নতিও দরকার। রাজারহাট থেকে কলকাতা বিমানবন্দর কাছে হওয়ায় এই অঞ্চলে ফুল রাখার হিমঘর থাকলে ভাল হয়। এ ছাড়া, আগে কলকাতা থেকে আমস্টারডামের সরাসরি বিমান ছিল। ফলে রজনীগন্ধা পৌঁছতো অনেক তাজা অবস্থায়। বর্তমানে ওই বিমান পরিষেবা বন্ধ হওয়ায় সেই ফুল দুবাই হয়ে পৌঁছয় নেদারল্যান্ডসে। ফলে পথের ধকলেও রাজারহাটের রজনীগন্ধার সেই তাজা ভাব আর থাকে না। |