মিউচুয়াল ফান্ড নিয়মিত আয় আর একটু বেশি রিটার্ন
ত দিন ধরে আলাদা আলাদা ভাবে ইক্যুইটি ও ডেট ফান্ডের বহু খুঁটিনাটি আলোচনা করেছি। ফলে দু’টি ফান্ডেরই নিজস্ব কিছু সুবিধা ও ঝুঁকির বিষয়গুলি এখন আপনাদের কাছে মোটামুটি পরিষ্কার। আর সেখানে দাঁড়িয়েই এ বার একটা নতুন প্রশ্নের জবাব খোঁজার জন্য তৈরি আপনি। সেটি হল— ‘মিউচুয়াল ফান্ডের দু’টি আলাদা আলাদা জগতের সব থেকে ভাল দিকগুলি মিলিয়ে-মিশিয়ে দিলে কেমন হয়?

মান্থলি ইনকাম ফান্ড কী
আপনার মনে জমে থাকা ওই প্রশ্নের জবাব দিতেই যেন তৈরি হয়েছে মান্থলি ইনকাম প্ল্যান (এমআইপি)। বাংলা করলে দাঁড়ায়, মাসে মাসে আয় দেয় যে মিউচুয়াল ফান্ড। ইক্যুইটি ও ডেট ফান্ডের মিশ্রণে তৈরি এটি। লগ্নির মাধ্যম হিসেবে মিশ্র ফান্ডগুলির মধ্যে অনবদ্য। যে-লগ্নিকারীরা নিরাপত্তা চান, তাঁদের নিরাশ করে না। আবার যাঁরা অল্প-বিস্তর ঝুঁকি নিতে পিছপা নন, ফেরায় না তাঁদেরও। তবে এই পর্বে আলোচনার বিষয়বস্তু সেই সমস্ত মিশ্র ফান্ড, যাতে ডেট ফান্ডে লগ্নির পরিমাণ বেশি থাকে অর্থাৎ ঋণপত্র ভিত্তিক মিশ্র ফান্ড। নির্ভীক লগ্নিকারীরা অবশ্য ইচ্ছে করলে শেয়ার বা ইক্যুইটি ভিত্তিক মিশ্র ফান্ড বাছতে পারেন। স্বাভাবিক ভাবেই সেগুলিতে ঝুঁকি অনেকটাই বেশি।

জনপ্রিয়তার রহস্য
এমআইপি-তে লগ্নির অর্থের বড় অংশ খাটানো হয় ঋণপত্রে। ফলে নিয়মিত, স্থায়ী আয়ের পথ তৈরি হয়। আর তহবিলের একটা ছোট অংশ লাগিয়ে রাখে ইক্যুইটিতে। যদিও বাস্তবে এই ছোট অংশটাই কখনও কখনও অত্যন্ত বড় ভূমিকা নিয়ে নেয় লগ্নিকারীর সম্পদ তৈরিতে। আসলে শেয়ার বাজারে টাকা খাটানোর ক্ষেত্রে কিছুটা আশঙ্কা তো থাকেই। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লগ্নির অর্থ ফুলে-ফেঁপে উঠে সব ভয় মুছে দেয়।
আর এখানেই লুকিয়ে এমআইপি-র জনপ্রিয়তার মূল রহস্য। ডেট ও ইক্যুইটি মিলে-মিশে থাকায় ফান্ডটি থেকে লগ্নিকারী বেশ ভাল রিটার্ন পান। অন্তত যাঁরা বিনিয়োগে ঝুঁকি নেওয়ার প্রশ্নে গুটিয়ে থাকেন এবং বিশুদ্ধ ডেট ফান্ড ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারেন না, তাঁদের কাছে এমআইপি-র আয় দেওয়ার ক্ষমতা আশাতীত। ফলে সামান্য ঝক্কি পোহাতে যাঁদের আপত্তি নেই, এমআইপি তাঁদের আকর্ষণ করবে না, এমন দৃষ্টান্ত সত্যিই বিরল।

নামে না-ভোলাই ভাল
একটি বিষয়ে সতর্ক করে রাখি। মান্থলি ইনকাম প্ল্যান— এই নামটি দিয়ে ফান্ডের চরিত্র বুঝতে গেলে কিন্তু সমস্যায় পড়বেন। মাসে মাসে আয় দিতে পারে এই ফান্ড। কিন্তু দেবেই যে, তার ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি নেই। মানে, এমআইপি মূলত ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ-এ লগ্নি করে এই কারণেই, যাতে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিয়মিত আয় নিশ্চিত থাকে। তবে সেটা যে প্রত্যেক মাসে হবেই, তার স্থিরতা নেই। মনে করুন, জীবনের বিভিন্ন বাঁকে আপনাকে যে কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়, এটা তেমনই একটা ব্যাপার। অর্থাৎ যা ঘটবে বলে ভেবেছিলেন কিংবা মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন, শেষে হয়তো সেটা ঘটল না।

শেয়ারে খাটবে কতটা?
এ প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোনও উত্তর হয় না। সাধারণ ভাবে কোনও এমআইপি-র ১০% থেকে ২৫% ইক্যুইটিতে বরাদ্দ করা হতে পারে। তবে পুরোটাই নির্ভর করবে লগ্নির লক্ষ্য, পছন্দ ও প্রকৃতির উপর। ফান্ড ম্যানেজার চাইলে আপনার তহবিলের ৩০% পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন শেয়ারে।
আমজনতার তহবিল সুরক্ষিত রাখার স্বার্থে অবশ্য সম্পদ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলি (অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি) বাড়তি ঝুঁকি নেওয়ার বিষয়টিতে কিছুটা রাশ টেনে রাখে। যে কারণে এমআইপি-র কতটা ইক্যুইটিতে লাগানো যাবে তার একটা ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেয় তারা। এ বার ফান্ড ম্যানেজার তাঁর প্রয়োজন ও পছন্দমতো ওই সীমার মধ্যেই ঘোরাফেরা করবেন। তবে একটা কথা আমি প্রথম থেকেই বলছি যে, এখানে ইক্যুইটি কিন্তু ফুটবল মাঠের ফরওয়ার্ডে থাকা খেলোয়াড়ের মতো। যে কোনও সময় গোল করে বাজিমাত করতে পারে। চাঙ্গা বাজারে এটাকেই রিটার্ন বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন ফান্ড ম্যানেজার।

এমআইপি কখন এবং কেন
• এত দিন শুধু ডেট ফান্ড নিয়েই নাড়াচাড়া করার পর এখন যদি সামান্য স্বাদ বদলাতে মন চায়।

• নিয়মিত আয়ের সঙ্গে যদি একটু বড় রিটার্ন পেতেও ইচ্ছে হয়।

• যদি অন্তত একটু ঝুঁকি নিতে আপত্তি না-থাকে।

আগে এই উত্তরগুলি খুঁজুন
• কতটা লগ্নি করতে পারবেন ইক্যুইটিতে?

• যে ফান্ডটি বাছলেন, সেটির ইক্যুইটি-তে লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা কী?

• ফান্ডটি অতীতে কেমন লাভ দিয়েছে?

• কী কৌশলে তহবিল বণ্টন করা হচ্ছে?

• আয় ও রিটার্নের ক্ষেত্রে যে লক্ষ্য নিয়ে এমআইপি-তে লগ্নি করা হচ্ছে, তাতে চাপে পড়ছেন না তো?

সহজ করতে উদাহরণ
আইডিএফসি মান্থলি ইনকাম প্ল্যান: যে দিন লেখাটা তৈরি করছি (৫ ডিসেম্বর, ২০১২), এই এমআইপি সে দিনই এক বছরে প্রায় ১৬% রিটার্ন দিয়েছে। ফলে সেই মুহূর্তে রিটার্ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তারাই শীর্ষে। আইডিএফসি এমআইপি-র ব্যাপারে আমার কিন্তু কোনও পক্ষপাতিত্ব নেই। আমি শুধু এটির পারফরম্যান্সের কথা বলছি। রিটার্নের নিরিখে আইডিএফসি এমআইপি-র কাছাকাছি রয়েছে রিলায়্যান্স, এইচএসবিসি ও ডিএসপি ব্ল্যাকরক-এর পরিচালনাধীন কিছু মান্থলি ইনকাম প্ল্যান।

লগ্নি কৌশল কী?
এখানে তহবিলের ৫০ শতাংশের বেশি খাটানো হয়েছে গিল্টস (গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিজ)-এ। প্রায় ২০% লগ্নি হয়েছে বন্ডে। এবং ২৩% লাগিয়েছে ইক্যুইটিতে অর্থাৎ শেয়ার বাজারে। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, শেষের অংশটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটাই এখানে প্রমাণিত হল। এমন সাহসী তহবিল বণ্টন বড় একটা দেখা যায় না। আইডিএফসি-র ফান্ড ম্যানেজারের ইক্যুইটি-স্ট্র্যাটেজির সৌজন্যেই ইউনিটহোল্ডাররা বেশ ভাল মুনাফা ঘরে তুলতে পেরেছেন।
তবে আগামী দিনে আইডিএফসি এই পারফরম্যান্সই তুলে ধরতে পারবে কি না, তা বলতে পারব না। কারণ, অতীতের পুনরাবৃত্তি না-ও ঘটতে পারে।

প্রকল্পের রকমফের
রক্ষণশীল এমআইপি-তে ইক্যুইটির ঊর্ধ্বসীমা বেশ কম।
বাজার চাঙ্গা থাকলে ডেট ফান্ড ভিত্তিক এমআইপিগুলি শেয়ার বাজারে বেশি টাকা লাগায়।
মাঝামাঝি থাকার পন্থা নিয়েছে, এমন ফান্ডও আছে।
কিছু সম্পদ পরিচালনাকারী সংস্থা (যেমন, বিড়লা সান লাইফ ও ফ্র্যাঙ্কলিন টেম্পলটন) তাদের ফান্ডের নামকরণ এমন ভাবে করে, যাতে বোঝা যায় সেগুলির ইক্যুইটিতে লগ্নির কৌশল।
এমআইপি-র শিকড় লুকিয়ে পূর্বতন ইউনিট ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ায়। দীর্ঘ দিন আগেই তারা ক্লোজ-এন্ডেড, গ্যারান্টিড-রিটার্ন প্রকল্প এনেছিল লগ্নিকারীদের জন্য।
এমআইপি অনেক বড় জায়গা। চেক বই বার করার আগে সতর্ক হয়ে ফান্ড বাছুন।

লেখক উইশলিস্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজার্সের ডিরেক্টর
(মতামত ব্যক্তিগত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.