কলকাতা আন্তর্জাতিক শিশু-কিশোর চলচ্চিত্র উৎসবে বদলে যাওয়া পরিবেশের ছবি সবুজালয় নামে একটি ছবি তুলে তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রামের পড়ুয়ারা। বছর খানেক আগেই স্কুল-ছুট সহপাঠীদের নিয়ে ‘ইস্কুল’ নামে একটি সিনেমা বানিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাই। ওই অভিজ্ঞতা থেকেই মাত্র ৬ দিনে তারা হ্যান্ডিক্যামে এই সিনেমা ‘সবুজালয়’ বানিয়েছে।
স্কুলের বাগান পরিচর্যার সময়ে সবুজ বাঁচানোর তাগিদ থেকে সিনেমা তৈরির ভাবনা মনে আসে। যেমন ভাবনা তেমনই কাজ। হ্যান্ডিক্যাম ক্যামেরায় ১১ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের সিনেমাটি তৈরি করে মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের ইন্দ্রাণী হাসনামায়ানী উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। দ্বিতীয় শিশু-কিশোর চলচ্চিত্র উৎসবে ‘মাই চেঞ্জিং এনভায়রনমেন্ট’ বিভাগে অংশ নিয়ে সেই সিনেমা তৃতীয় পুরস্কার এনে দিয়েছে। ওই বিভাগে প্রথম ও দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে যথাক্রমে চেতলার লক্ষ্মীপত সিংহানিয়া অ্যাকাডেমি ও বাগবাজারের শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়। সবুজালয়কে পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে ১১ সদস্যের জুরি বোর্ড। |
গত ২২ ডিসেম্বর নন্দনে ওই চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হয়। পরের দিন ২৩ ডিসেম্বর নন্দন-৩ প্রেক্ষাগৃহে সবুজালয় দেখানো হয়। উৎসবে ‘মাই ক্যামেরা, মাই ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের তৈরি সিনেমা ‘মাই চেঞ্জিং এনভায়রনমেন্ট’ এবং পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়াদের তৈরি সিনেমা ‘লাইফ অ্যারাউন্ড মি’ নামে দু’টি বিভাগে ঠাঁই পায়। মোট ২৫টি স্কুলের ৫৪টি সিনেমা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কলকাতার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আমাদের স্কুলের তুলনা করা যায় না। অসচ্ছল ঘরের ছেলেমেয়েরা স্কুলে পড়ে। হাতে-কলমে ক্যামেরা চালনার প্রশিক্ষণও তাদের নেই। ক্যামেরা হাতে নেওয়া তাদের কাছে উল্লাসের বিষয়। ওরা পুরস্কার পাওয়ায় আমরা গর্বিত।”
তবে বছর খানেক আগেই স্কুল-ছুট সহপাঠীদের নিয়ে ‘ইস্কুল’ নামে একটি সিনেমা বানিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল ইন্দ্রাণীর ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাই। ওই অভিজ্ঞতা থেকেই মাত্র ৬ দিনে তারা ‘সবুজালয়’ বানিয়েছে। সিনেমায় শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী মিলিয়ে ১৫ জন অভিনয় করেন। পরিচালক অনুময় দত্ত দশম শ্রেণির ছাত্র। তার কথায়, “গাছ পরিচর্যার চেয়ে মানুষ গাছ নিধনে ব্যস্ত। সেই ভাবনা থেকে গ্রামে সবুজায়নের স্বপ্ন মনে গেঁথে দেন শিক্ষকরা। সেখান থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতেই সিনেমা তৈরির কথা মাথায় আসে।”
শিক্ষক সৈয়দ তৌফিকুল ইসলাম বলেন, “পিছিয়ে পড়া গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের কাছে সিনেমা বলতে বাজার চলতি সিনেমা। এ জন্য শিশু-কিশোরদের সিনেমা নিয়ে স্কুলে চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা হয়। যাতে ছাত্রছাত্রীদের ভাল সিনেমা দেখার মন ও চোখ তৈরি হয়।” |