অস্ত্রোপচারে গাফিলতিতে শিশু মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সোমবার শিলিগুড়ির দক্ষিণ ভারতনগরের বাসিন্দা প্রসূতি অঞ্জনা মণ্ডলের অস্ত্রোপচার করে প্রসব করানো হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রসূতি মৃত শিশু প্রসব করেছেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকদের একাংশ জানান, প্রসবের পর সদ্যোজাত নড়াচড়া করছে না দেখে বাঁচানোর চেষ্টা করতে বুকে বিশেষ ‘ম্যাসাজ’ (কার্ডিও পালমোনারি রেসাসিটেশন) করা হয়। সে সময় সদ্যোজাতের বুকে চামড়া উঠে যেতে পারে। তবে শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
প্রসূতির স্বামী বাপি মণ্ডলের অভিযোগ, বাচ্চাটি জন্মাবার পর ভাল রয়েছে বলে স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান। ক্ষণিক পরেই নার্স জানান বাচ্চা মারা গিয়েছে। বাচ্চার বুকে ধারাল জিনিস দিয়ে চিরে যাওয়া দাগ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসকের গাফিলতিতেই এই ঘটনা। তদন্ত করে অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া হোক।” পরিবারের লোকেরাও রাতেই ঘটনা খতিয়ে দেখার দাবি করে হাসপাতালের সহকারি সুপারের কাছে এবং হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ জানান। সেই মতো মঙ্গলবার মৃত শিশুর ময়নাতদন্ত করা হয়।
হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস জানিয়েছেন, কাজে বাইরে থাকলেও তিনি খোঁজ নিয়ে প্রাথমিক ভাবে জেনেছেন প্রসূতি মৃত বাচ্চা প্রসব করেছিলেন। তা হলে শিশুটির বুকে ক্ষত হল কী ভাবে? সুপারের যুক্তি, যে ক্ষত দেখা যাচ্ছে তা ‘ম্যাসাজ’ দেওয়ার সময় ঘটতে পারে। জন্মাবার পর বাচ্চাটি নড়াচড়া করছে না দেখে তার শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা হয়। তাতেই বুকে কোনও কারণে আঁচড় লেগেছে। তবে ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, অস্ত্রোপচারের সময় ছ-সাত জনের একটি দল বা ইউনিট ছিল। প্রসূতির জরুরি বিভাগে থাকা এক মহিলা সিনিয়র চিকিৎসকই অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন। প্রসূতি অঞ্জনাদেবী শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন গত শনিবার। বাচ্চার অবস্থা ভাল না থাকায় সেখান থেকে তাঁকে রেফার করা হলে সোমবার দুপুরের পর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রসূতি বিভাগের প্রধান বাইরে থাকায় দায়িত্বে রয়েছেন অনির্বাণ মৈত্র। তিনি বলেন, “বিভাগের প্রধান মঙ্গলবার কাজে যোগ দেবেন। তাঁকে বিস্তারিত জানাব।” ওই বিভাগের চিকিৎসকদের একাংশ জানিয়েছেন, গর্ভস্থ সন্তানের ‘পালস রেট’ কম থাকায় জরুরি ভিত্তিতে প্রসূতির অস্ত্রোপচার করা হয়। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গড়ার কথা জানান, ভারপ্রাপ্ত সুপার শেখর রঞ্জন বসু এবং সহকারি সুপার ইসমাইল খানরা। শেখরবাবু জানান, বড় দিনের ছুটির পর বুধবার অফিস খুললেই তদন্ত কমিটি গড়ে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট চাওয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |