জঙ্গলমহলের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ঢেলে সাজতে চলতি বছরের গোড়ায় ঝাড়গ্রামকে স্বাস্থ্য জেলা হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। কিন্তু বছর পেরোতে চললেও পরিকাঠামোগত দিক থেকে এখনও মহকুমা হাসপাতালের পর্যায়েই রয়ে গিয়েছে এই হাসপাতাল। নিয়োগ করা হয়নি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ অন্য আধিকারিকদেরও। এ হেন পরিস্থিতিতে রোগীর অবস্থা একটু খারাপ হলেই বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কিংবা কলকাতায় ‘রেফার’ করে হাঁফ ছাড়েন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
|
মাস কয়েক আগে ঝাড়গ্রাম শহরের ব্যবসায়ী বছর চল্লিশের দীপাঞ্জন হাজরাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে এনে সমস্যায় পড়েছিলেন তাঁর পরিজনেরা। আইসিইউ না থাকায় দীপাঞ্জনবাবুকে ফের কাছেই একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করাতে হয়। কলকাতায় বাইপাস সার্জারির পর সুস্থ হয়ে উঠে দীপাঞ্জনবাবু বলেন, “আইসিইউ নেই, এমন জেলা হাসপাতালের কী দরকার। ওই নার্সিংহোমে তবু আইসিইউ ছিল বলে প্রাণে বেঁচেছি।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, আইসিইউ এবং আইটিইউ তৈরির জন্য এখনও স্বাস্থ্য দফতরের প্রয়োজনীয় অনুমোদন মেলেনি।বস্তুত, জেলা হাসপাতালে যা যা প্রয়োজন, তার অধিকাংশই ঝাড়গ্রামের হাসপাতালে নেই। এমনকী শয্যা সংখ্যাও বাড়েনি। রোগীর চাপ অবশ্য বেড়েছে। ফলে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বাড়তি রোগীদের মেঝেতে শুইয়ে রেখে চিকিৎসা করতে হয়। মহকুমা হাসপাতালে যত জন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মী থাকার কথা, তার থেকেও ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে সংখ্যাটা কম। প্রয়োজনীয় সংখ্যায় চিকিৎসক না থাকায় বহির্বিভাগে নাক-কান-গলা (ইএনটি), দাঁত, অস্থি ও চর্ম বিভাগগুলি সপ্তাহে সব দিন নিয়মিত খোলা রাখা সম্ভব হয় না। ঝাড়গ্রামের সুমিত্রা মাহাতো, বেলপাহাড়ির সাবিত্রী সিংহের মতো বহির্বিভাগে আসা রোগীদের বক্তব্য, “জেলা হাসপাতালের কোনও সুযোগ-সুবিধা এখান থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের সেই মেদিনীপুর কিংবা বাঁকুড়ায় যেতে হয়।”সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে অ্যাপেনডিক্স অপারেশন করাতে গিয়ে মহা সমস্যায় পড়েছিলেন বেলপাহাড়ির ভুলাভেদার বছর আটত্রিশের মন্টু মাহাতো। মন্টুবাবু বলেন, “সার্জেন না থাকায় বার বার ঘোরাচ্ছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অপারেশন করাই।” হাসপাতাল সূত্রে খবর, ৩৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের জায়গায় রয়েছেন মাত্র ২১ জন। রেডিওলজি বিশেষজ্ঞ পদের একটি খালি। ব্লাড ব্যাঙ্কে এক জন প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক-সহ মোট চার জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু সাধারণ এক জন চিকিৎসককেই সমস্ত কাজ চালাতে হয়। এ ছাড়া ব্লাড ব্যাঙ্কের নিজস্ব গাড়ি নেই। সিটি-স্ক্যান ইউনিট এবং ডিজিট্যাল এক্স-রে মেশিনও নেই হাসাপাতালে। ইউএসজি মেশিনটি মান্ধাতা আমলের। তিন জন শল্য চিকিৎসক থাকার কথা। অথচ আছেন মাত্র এক জন। |
নেই-তালিকা |
আইসিইউ/আইটিইউ।
ক্যানসার নির্ণয় কেন্দ্র।
বার্ন ইউনিট।
রেডিও-থেরাপি ইউনিট। |
সিটি-স্ক্যান ইউনিট।
ডিজিট্যাল এক্স-রে।
ব্লাড ব্যাঙ্কের গাড়ি।
অডিওমেট্রি বিভাগ।
অর্থোপেডিক ওটি। |
পরিষেবা |
থাকার কথা |
আছে |
চিকিৎসক |
৬০ |
৩৩ |
নার্স |
১২০ |
৭৭ |
স্বাস্থ্যকর্মী |
১২০ |
৬০ |
শয্যা |
৫০০ |
২৬৫ |
|
|
এই অবস্থা কেন?
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর জবাব, “সদ্য জেলা হাসপাতাল হয়েছে। ফলে অভাব থাকবেই। তা পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। সদ্যোজাতদের চিকিৎসার জন্য সিক-নিওনেটাল কোয়ার ইউনিট খোলা হচ্ছে। শীঘ্রই মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার হাব খোলা হবে ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে।” |