প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো দ্রুত গড়ে তোলার মুচলেকা দিয়ে চলতি বছরে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র অনুমোদন আদায় করেছিল রাজ্যের তিনটি মেডিক্যাল কলেজ। নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষার পরে এমসিআইয়ের পরিদর্শকেরা যখন কার্যত কলেজগুলোর দরজায় কড়া নাড়ছেন, তখন তারাই স্বাস্থ্য ভবনকে জানাল, কিচ্ছুটি তৈরি নেই!
মালদহ, বহরমপুর ও কলকাতা লাগোয়া কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের এ হেন পরিস্থিতি সম্পর্কে এমসিআই-কর্তৃপক্ষও বিলক্ষণ অবহিত, অসন্তুষ্টও। দিল্লিতে কাউন্সিল-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বলেছেন, তিনটি কলেজ নিয়ে তাঁরা যথেষ্ট বিরক্ত। খোলাখুলি তা রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তাদের জানানো হয়েছে। এবং এমসিআই-কর্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, আগামী পরিদর্শনেও বেহাল দশা ধরা পড়লে তাঁরা কঠোর পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবেন।
এর প্রেক্ষিতে তিন মেডিক্যাল কলেজের এ বারেও ফেল করার আশঙ্কা ষোলোর উপর আঠারো আনা বলে মনে করছেন চিকিৎসক মহলের বড় অংশ। ডাক্তারের অভাবে এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চিকিৎসা-পরিষেবা নড়বড়ে। তার উপরে তিন-তিনটি মেডিক্যাল কলেজের অস্তিত্ব এ ভাবে প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ায় রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তারাও যারপরনাই অস্বস্তিতে। বিশেষত মুচলেকার ঘটনাটা অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে। ডাক্তারি পঠন-পাঠনের ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই এই যুক্তিতে ছ’মাস আগে তিন মেডিক্যালে ছাত্রভর্তির অনুমোদন বাতিল করেছিল এমসিআই। রাজ্যের কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পরে বরফ গলে। তিন কলেজে অবিলম্বে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে এই মর্মে মুচলেকা জমা দিয়ে আপাতত মিলেছে অনুমোদন। কিন্তু পরিকাঠামোর কী হাল? |
নেই তালিকা |
সাগর দত্ত |
মালদহ |
বহরমপুর |
কলেজ বিল্ডিং |
অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং |
অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং |
ইমার্জেন্সি |
আইসিসিইউ |
ইমার্জেন্সি |
প্রায় অর্ধেক ডাক্তার |
বহু ডাক্তার |
প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি |
অচিকিৎসক কর্মী |
ওপিডি |
ওপিডি |
গ্রন্থাগারিক |
টেকনিশিয়ান |
টেকনিশিয়ান |
|
ছ’মাস বাদে দেখা যাচ্ছে, প্রায় কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। যেমন সাগর দত্তে। চারতলা কলেজ ভবন ও জরুরি বিভাগ গড়ে ওঠেনি। চারশো অ-চিকিৎসক কর্মী প্রয়োজন। সরকার ৭৬টি পদ অনুমোদন করেছে, আছেন সাকুল্যে ছ’জন। লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বই কিনতে বলেছিল এমসিআই। সাড়ে তিন হাজার বই এলেও কোনও গ্রন্থাগারিক আসেননি। চিকিৎসক পদের অন্তত ৪০% শূন্য, আরএমও-র তিরিশটি পদ খালি। ৪১ জন সিনিয়র আরএমও থাকার কথা, এক জনও নেই। মালদহ মেডিক্যালে প্রতিশ্রুত কাজের বড়জোর ৪০% হয়েছে। অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ের সবে একটা তলা ঢালাই শেষ, সেখানে বালি-সিমেন্ট-লোহা ডাঁই করে রাখা। তা হলে ক্লাস হচ্ছে কোথায়?
এক শিক্ষক-চিকিৎসক বলেন, “হস্টেল বিল্ডিংয়ে ক্লাস চলছে।” বহির্বিভাগের বাড়ি ঢালাই হয়নি। আইসিসিইউয়ের আর্থিক অনুমোদন সদ্য মিলেছে।
বহরমপুরও তথৈবচ। প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ গড়ে ওঠেনি। বায়োকেমিস্ট্রি, ফিজিওলজি-তে টেকনিশিয়ান নেই। নতুন অ্যাকাডেমিক ও আউটডোর বিল্ডিং সম্পূর্ণ হতে ঢের দেরি। এক ডাক্তারের আক্ষেপ, “সকাল ন’টা থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত ইমার্জেন্সি আর আউটডোর এক সঙ্গে চলে। তখন সঙ্কটজনক রোগী এলে আপৎকালীন চিকিৎসার বদলে আউটডোরে পাঠানো হয়।
এ ভাবে মেডিক্যাল কলেজ চলতে পারে?”
কী বলছে স্বাস্থ্য দফতর?
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, “কাজ এগোচ্ছে। তবে একটু সময় লাগছে। ডিসেম্বরে এসে এমসিআই হয়তো সন্তুষ্ট হবে না। মার্চে ফের আসতে হতে পারে।” এ কি ফেল করার মানসিক প্রস্তুতি?
সুশান্তবাবুর জবাব, “এটা ফেল নয়। সাময়িক অনুমোদন না-দেওয়া। মার্চের পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তারের সমস্যা তো অনেকটা মেটাতে পেরেছি। বাড়ি তৈরিও গতি পেয়েছে।” |