তহবিলের হিসেব নেই, সহায়তায় বঞ্চিত রোগীরা
হরমপুর জেলা হাসপাতালে অন্ত্রের অস্ত্রোপচার হয়েছিল সুমিত্রা পাখিরার।
বেশ কিছু দামি ওষুধ কিনতে হয়েছিল বাইরে থেকে। নিয়মানুযায়ী সুমিত্রাদেবীর মতো দারিদ্রসীমার নীচের (বিপিএল) রোগীরা ওই ওষুধের বিল জমা দিয়ে হাসপাতালের রোগী সহায়তা তহবিল (ইলনেস অ্যাসিস্ট্যান্স ফান্ড) থেকে দু’হাজার টাকা পর্যন্ত ফেরত পেতে পারেন। সেই মতো ওঁরা বিল জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতাল জানিয়ে দিয়েছে, টাকা দেওয়া যাবে না। কেন?
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: ওই তহবিল উঠে গিয়েছে। তা শুনে সুমিত্রাদেবী এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে অভিযোগ দাখিল করেছেন স্বাস্থ্য দফতরে। কোনও সুরাহা হয়নি। তাঁরই মতো অবস্থা সীমান্ত গোয়ালার। বিপিএল কার্ড দেখিয়ে যিনি মালদহ জেলা হাসপাতালের ফ্রি বেডে ভর্তি হয়েছিলেন হার্টের চিকিৎসার জন্য। ডাক্তারবাবুরা কিছু দামি ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে বলেন। চেয়ে-চিন্তে কোনও মতে জোগাড় হয়। এখন স্বাস্থ্য ভবনে সীমান্তবাবুর অভিযোগ, বিল দেখিয়ে টাকা চাইতে গেলে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানান, সহায়তা তহবিলে টাকাই নেই!
একই রকম অভিযোগ একের পর এক আসতে থাকায় স্বাস্থ্য-কর্তারা নড়েচড়ে বসেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোগী সহায়তা তহবিলের টাকা খরচ সম্পর্কে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে ২০১০ সাল ইস্তক কোনও রিপোর্ট আসেনি। ২০০৫-এর পরে মালদহও নীরব। বস্তুত রাজ্যের সাত-আটটি জেলা থেকে বছরের পর বছর ওই রিপোর্ট আসছে না। ফলে তহবিলে আদৌ টাকা আছে কি না, থাকলে কত রয়েছে, বাকিটা কী ভাবে খরচ হয়েছে কিছুই জানা যাচ্ছে না। এবং হিসেব না-আসায় স্বাস্থ্য ভবন থেকে টাকাও পাঠানো হয়নি। এখন স্বাস্থ্য-কর্তারা স্বীকার করছেন, এই ক’বছরের মধ্যে ওই সব জেলায় যত রোগী তহবিলের সহায়তা চাইতে গিয়েছেন, প্রায় সকলেই ফিরেছেন শূন্য হাতে!
এত দিন চোখ বুজে থাকার জন্য গত ১৯ নভেম্বর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য-অধিকর্তাদের কলকাতায় ডেকে ভর্ৎসনা করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। তাঁর কথায়, “অত্যন্ত লজ্জার ব্যাপার। স্রেফ অবহেলার কারণে অনেক জেলায় গরিব রোগীরা ইলনেস অ্যাসিস্ট্যান্স ফান্ডের টাকা পাননি! অকল্পনীয়! ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট না-পাঠালে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।”
গরমিলের ভাঁড়ার
জেলা হিসেব নেই
মালদহ ৭ বছর
কোচবিহার ৪ বছর
নদিয়া ৩ বছর
মুর্শিদাবাদ ২ বছর
জলপাইগুড়ি ২ বছর
সরকারি হাসপাতালে শয্যার অভাবে সব বিপিএল রোগী সব সময়ে ফ্রি বেড পান না। পেলেও অনেক সময়ে দামি ওষুধ-ইঞ্জেকশন বাইরে থেকে কিনতে হয়, ব্যয়বহুল পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করাতে হয় বাইরের প্রতিষ্ঠান থেকে। এই পরিস্থিতিতে সহায়তা তহবিলের টাকার জন্য অনেকে হত্যে দিয়ে থাকেন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ তহবিলের অর্থ খরচের হিসেব দীর্ঘ সময় বকেয়া পড়ে রইল কেন? মুর্শিদাবাদের স্বাস্থ্য-কর্তাদের দাবি, প্রক্রিয়ার মধ্যেই গোলমাল। “তহবিলটা সরকার তুলে দিয়েছে, এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল।” বলছেন ওঁরা। এবং এ জন্য স্বাস্থ্য ভবনের নজরদারির অভাবের দিকেও আঙুল তুলছেন কেউ কেউ। মালদহের কর্তারা অবশ্য নিজেদের গাফিলতি মানছেন। “২০০৫ থেকে আমাদের তহবিলে ২০ হাজার টাকা পড়ে আছে। নিছক গড়িমসিতেই খরচ হয়নি। হিসেব পাঠানো হয়নি, নতুন করে টাকা চাওয়া হয়নি।” স্বীকারোক্তি এক কর্তার। জলপাইগুড়ির স্বাস্থ্য-কর্তারা আবার অন্য কারণ দর্শিয়েছেন। তাঁদের কথায়, “টাকা পেতে হলে রোগীর পরিজনকে বিস্তর বিল জমা দিতে হয়। এত হ্যাপা অনেকে নিতে চান না। হাসপাতালও মাথা ঘামায় না।” কোচবিহার ও নদিয়ার কর্তারা মুখই খুলতে চাননি।
আর্থিক সহায়তার হাত আবার কবে বাড়ানো হবে? প্রতীক্ষায় রয়েছেন দুঃস্থ রোগীরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.