রেভিনিউ স্ট্যাম্প অমিল, আঙুল রাজ্যের দিকেই |
জেলা ও গ্রামাঞ্চলের বহু ডাকঘরে রেভিনিউ স্ট্যাম্পের টানাটানি তো চলছেই। এমনকী খাস মহাকরণেও ডাকঘরের কাউন্টারে ঝুলছে নোটিস ‘রেভিনিউ স্ট্যাম্প নাই’।
গ্রাম-শহর সর্বত্র রেভিনিউ স্ট্যাম্প না-পেয়ে সঙ্কটে পড়ছেন আমজনতা। আকালের দায় রাজ্য সরকারের উপরে চাপিয়ে দিচ্ছেন ডাক-কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ইন্ডিয়া সিকিওরিটি প্রেস (নাসিক) থেকে ওই স্ট্যাম্প আনিয়ে ডাকঘরে পাঠানোর দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। সেই কাজ চলছে ঢিমেতালে। ফলে জোগানে ব্যাপক ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। শুধু রেভিনিউ স্ট্যাম্প নয়, আদালতের কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য স্ট্যাম্প এবং স্ট্যাম্প-পেপার সরবরাহেরও বেহাল অবস্থা। কিন্তু সমস্যার দ্রুত সমাধানের বদলে টানাপোড়েন অব্যাহত।
রাজ্য সরকার কী বলছে? সরকারের বক্তব্য, নাসিক থেকে স্ট্যাম্প আনতে সময় তো লাগবেই। তবে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
রাজ্যের রেজিস্ট্রার জেনারেল বিশ্বজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বল ঠেলে দিয়েছেন অর্থ দফতরের কোর্টে। তাঁর কথায়, “এটা দেখার দায়িত্ব রাজ্যের অর্থ দফতরের অধীন ক্যালকাটা কালেক্টরেটের।” ডাক বিভাগের সহ-অধিকর্তা দুর্গা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কালেক্টরেটকে অনেক বার বলা হয়েছে, সরবরাহ স্বাভাবিক করতে হবে। সমস্যার কথা স্বীকার করে কালেক্টরেটের কর্তা অবনীন্দ্র সিংহ বলেন, “নাসিকে এই সমস্যার কথা জানিয়েছি। ওখান থেকে স্ট্যাম্প আনার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে।” তিনি জানান, এ মাসেই নাসিক থেকে কিছু রেভিনিউ স্ট্যাম্প আসার কথা। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মহাকরণে আর্জি জানানো হয়েছে। |
মহাকরণের খবর, নাসিক থেকে বছরে দু’বার রেভিনিউ স্ট্যাম্প আনাতে পারে সরকার। রাজ্যের চাহিদা বছরে প্রায় ছ’লক্ষ রেভিনিউ স্ট্যাম্প। এর একটা বড় অংশ কালেক্টরেটের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলার ডাকঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাজ্যে গত বছরের ৬ জানুয়ারি রেভিনিউ স্ট্যাম্প এসেছে। তা প্রায় শেষের পথে। অল্প কিছু পড়ে রয়েছে জিপিও-র মতো কয়েকটি বড় ডাকঘরে। জিপিও-র এক অফিসার বলেন, ‘‘এখানে কেবল জরুরি ক্ষেত্রেই ক্রেতাদের রেভিনিউ স্ট্যাম্প বিক্রি করা হচ্ছে। ১০টা কিনতে চাইলে দেওয়া হচ্ছে মাত্র দু’টো।” কালেক্টরেট সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগে নাসিকে স্ট্যাম্পের বরাত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্ট্যাম্পের আকাল দেখা দিতে পারে বুঝেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন?
কালেক্টরেটের এক মুখপাত্রের সাফাই, “এই ব্যাপারে তদ্বির-তদারক করার মতো লোকের বড় অভাব। মে মাসে এক অফিসারকে উর্দু অ্যাকাডেমিতে বদলি করা হয়েছে। তাঁর পরিবর্তে কোনও লোক আসেনি।” কালেক্টরেট সূত্রের খবর, স্ট্যাম্পের বরাত দেওয়া হলেও রাজ্য থেকে নাসিকে সময়মতো টাকা না-পাঠানোও দেরির অন্যতম কারণ। টাকা পাঠাতে দেরি কেন? অর্থ দফতরের পক্ষে রেভিনিউ স্ট্যাম্পের বিষয় দেখেন যুগ্মসচিব (অর্থ) সমীরণ পাল। তিনি এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। |
রেভিনিউ স্ট্যাম্প ছাড়াও আকাল চলছে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নোটারি স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি স্ট্যাম্প, স্পেশ্যাল অ্যাডহেসিভ স্ট্যাম্পের মতো আদালতে ব্যবহৃত নানা ধরনের স্ট্যাম্প ও স্ট্যাম্প-পেপারের। তথ্য জানার আইনে (আরটিআই) আবেদন করা এবং রান্নার গ্যাসের পরিচয়পত্র দাখিল করার জন্য ১০ টাকার স্ট্যাম্পের চাহিদা বেড়েছে। বাধ্য হয়ে তা কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। উত্তর কলকাতার একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধিকর্তা সঞ্জীব কুণ্ডুর অভিযোগ, “১০ টাকার স্ট্যাম্প কিনেছি ৩০ টাকায়। হলফনামা থেকে ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ অনেক কাজের জন্যই স্ট্যাম্প কিনতে বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে।” কালেক্টরেটের এক অফিসার বলেন, “মাস তিনেক আগে হায়দরাবাদ থেকে বেশ কিছু নন-জুডিশিয়াল স্টাম্প আনা হয়েছে। কিন্তু একটা চক্র এই স্ট্যাম্প মজুত করে কৃত্রিম অভাব তৈরি করছে।” |