মাওবাদীদের অযোধ্যা স্কোয়াডের দুই সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে বলে দাবি করল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “আত্মসমর্পণকারী দুই মাওবাদী সদস্যেরা হলেন বিজয় সিং সর্দার ও তাঁর স্ত্রী মৌমিতা পাহাড়িয়া। তাঁরা দু’টি দোনলা বন্দুক ও ১০টি গুলি জমা দিয়েছেন।” এর আগে অযোধ্যা স্কোয়াডের আরও এক দম্পতি দুর্যোধন রাজোয়াড় ও আকরি সহিস আত্মসমর্পণ করেছেন।
পুলিশ সুপার জানান, ওই মাওবাদী দম্পতি গত শনিবার তাঁর অফিসে এসে আত্মসমর্পণ করেছেন। ওই দিনই বাঁকুড়া পুলিশ সুপারের কাছেও এক তরুণী-সহ তিন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছিলেন। বাঁকুড়া জেলা পুলিশের মতোই পুরুলিয়া পুলিশও এই আত্মসমর্পণ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেনি। কিন্তু রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর মাওবাদীদের আত্মসমর্পণ কখনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় কিংবা মহাকরণে নতুবা পুলিশ কর্তাদের সামনে সাংবাদিকদের ডেকে দেখানো হয়েছে। এই দু’টি ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হল।
পুলিশ জানিয়েছে, বিজয়ের বাড়ি ঝাড়খন্ডের সরাইকেলা-খরসওঁয়া জেলার নিমডিতে। ২০০৮ সালে তিনি অযোধ্যা স্কোয়াডে যোগ দেন। তার আগে কয়েক বছর দলমা স্কোয়াডে ছিলেন। সেখানেই তাঁর প্রশিক্ষণ হয়। অযোধ্যা স্কোয়াডের নেতা বিক্রম তাঁকে নিজের স্কোয়াডে নিয়ে আসেন। পুলিশের দাবি, বিজয় এখানে প্রথম সারিতে ছিলেন। তাঁর পরিচয় ছিল কখনও ছোট বিজয়, কখনও বিজয় ভূমিজ। |
আবার কৃষ্ণ, বিপিন নাম নিয়েও তিনি কাজ করেছেন। অযোধ্যা স্কোয়াডে থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে অযোধ্যা পাহাড়ের কলাবেড়া গ্রামের বাসিন্দা মৌমিতা পাহাড়িয়া, ওরফে মৌ, ওরফে সুমিতার পরিচয় হয়। মৌমিতাও ২০০৮ থেকে এই স্কোয়াডে ছিলেন। ২০১০-র অগস্ট মাসে মাওবাদীদের বেড়সা ক্যাম্পে তাঁদের ‘কমরেড ম্যারেজ’ হয়। চলতি জুলাইয়ে বিক্রম ধরা পড়ার পরে তাঁরা দু’জনে পাহাড় ছেড়ে ঝাড়খণ্ডের চান্ডিলে পালিয়ে যান।
পুলিশের দাবি, অযোধ্যা পাহাড়ের জামপানিতে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ, পার্থ-সৌম্যজিৎ অপহরণ ও খুন, বাগবিন্ধ্যার গণহত্যা-সহ একাধিক ঘটনায় বিজয় জড়িত বলে পুলিশের অনুমান। এ ব্যাপারে স্পষ্ট হতে তাঁদের জেরা করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার বলেন, “যেহেতু ২০০৮ থেকে বিজয় অযোধ্যা স্কোয়াডে ছিলেন, তাই ওই সময়কার মাওবাদীদের বিভিন্ন নাশকতায় তাঁর জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।” তিনি জানান, আপাতত তাঁদের জেলা পুলিশের ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হবে। আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের জন্য রাজ্য সরকারের বিশেষ প্যাকেজের সুবিধা তাঁদের দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানানো হবে। |