পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় স্কুল নির্বাচনগুলিকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে এখন তুমুল ব্যস্ততা। রবিবার দুই ২৪ পরগনায় যে সব স্কুলে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে যেগুলির ফল জানা গিয়েছে, তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার দু’টি মহকুমার পাঁচটি স্কুলের পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে তৃণমূল হেরে গিয়েছে। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনার গ্রামীণ এলাকার ৮টি স্কুলে তারা জিতেছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার মহকুমায় মন্দিরবাজারের গাব্বেড়িয়া বালিকা বিদ্যালয়ের ভোটে ৬টি আসনের মধ্যে ৫টির দখল করে সিপিএম। ১টি পায় তৃণমূল। আগে ওই স্কুলের পরিচালন সমিতি তৃণমূলেরই দখলে ছিল। একই ভাবে রায়দিঘির পাকুড়তলা রামকৃষ্ণ হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির ভোটেও সিপিএমের কাছে হারতে হয় তৃণমূলকে। ওই স্কুলেও তৃণমূলই ক্ষমতায় ছিল।
একই চিত্র কাকদ্বীপের ভুবননগর ভুবনমোহন বিদ্যাপীঠেও। ৬টির আসনের সব ক’টিতেই সিপিএমের কাছে হেরে যান শাসক দলের প্রার্থীরা। আগের বার দু’টি দলই তিনটি করে আসন পেলেও সমিতি চালাত তৃণমূলই। সাগরের খাসরামকর কুমোরঅম্বু উচ্চ মাধ্যমিক হাইস্কুলে তৃণমূল ক্ষমতা ধরে রাখলেও ৬টি আসনের মধ্যে ২টি সিপিএম দখল করে নেয়। ওই বিদ্যালয়ে আগে সব ক’টি আসন তৃণমূলের দখলে ছিল। পাথরপ্রতিমার ক্ষেত্রমোহনপুর হাইস্কুলেও জেতে সিপিএম। আগে ওই স্কুলে ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল। অন্য দিকে, ওই ব্লকেরই মহেন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃণমূল এবং লক্ষ্মীনারায়ণপুর যুধিষ্ঠির বিদ্যাপীঠে সিপিএম ক্ষমতা ধরে রাখে। নামখানা ইউনিয়ন হাইস্কুলেও এ ক্ষমতা ধরে রেখেছে শাসক দল। অন্য দিকে, গোসাবার ছোটমোল্লাখালি গোবিন্দনগর হাইস্কুলে পরিচালন সমিতিতে ক্ষমতা ধরে রাখে আরএসপি।
স্কুল ভোটে দলের এ ভাবে পরাজয়কে অবশ্য বিশেষ গুরুত্ব দিতে রাজি নন তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি চৌধুরীমোহন জাটুয়া। তাঁর দাবি, “ভিতরে ভিতরে সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি এক জোট হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লড়েছে।” তবু, হারের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এই সরকারের আমলে রাজ্য জুড়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য চলছে, তা সাধারণ মানুষ বুঝে গিয়েছেন। তারই প্রতিফন ঘটছে স্কুলভোটগুলিতে।”
উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির আগারহাটি গৌরহাটি বিদ্যাপীঠে তৃণমূল ৪টি সিপিএম ২টি আসনে জিতেছে। গত বছর এই স্কুলে ক্ষমতায় ছিল সিপিএম। এই ব্লকেরই ছোট সেহেরা হাইস্কুলে তৃণমূল ৩টি, বিজেপি ২টি সিপিএম ১টি আসন পেয়েছে। বসিরহাটের খোলাপোতা ঋষি অরবিন্দ তপোবন হাইস্কুলে ৬টি আসনেই জিতেছে তৃণমূল। গত বছর এই স্কুলে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তারা জিতেছিল। কিন্তু এ বার দু’টি দলই আলাদা ভাবে লড়াই করেছিল। হিঙ্গলগঞ্জের সৃষ্টিধর ইনস্টিটিউশনের নির্বাচনে ৬টি আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। বসিরহাটের গোঠরা হাইস্কুল এবং দেগঙ্গার সুবর্ণপুর হাইস্কুলে জিতেছে কংগ্রেস। মিনাখাঁর বামনপুকুর এসএমএম হাইস্কুল ও হাসনাবাদের চকপাটলি হাইস্কুলে জয়ী হয়েছেন বাম জোটের প্রার্থীরা। গাইঘাটার চাঁদপাড়া বাণী বিদ্যাবীথি হাইস্কুল, পুরাতন বনগাঁ হাইস্কুল, গোপালনগরের ন’হাটা হাইস্কুলে ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে শাসক দল। হাবরার বাওগাছি হাইস্কুলে চতুর্মুখী লড়াই সত্ত্বেও ৬টি আসনেই জেতে তৃণমূল। এই স্কুলে ক্ষমতায় ছিল সিপিএম। তবে গাইঘাটার টিএসডি মনমোহন হাইস্কুলে তৃণূল ও সিপিএম উভয় দলের প্রার্থীরাই তিনটি করে আসন পেয়েছেন। এই স্কুলে আগে ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল। অন্য দিকে, পৃথিবা রাধারানি গালর্স হাইস্কুলে জিতে গিয়েছে সিপিএম। ২টি আসন পায় তৃণমূল। গত বছর এখানে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট ক্ষমতায় থাকলেও এ বছর জোট হয়নি। |