বাবার মাখন ও চিনি মাখা শেষ হতে না হতেই এক গাল হেসে শিশুসুলভ ভঙ্গিতে একটার পর একটা ডিম ফাটিয়ে চলেছেন পারমিতা লুইস। পাশেই রয়েছে পারমিতার বছর পাঁচেকের মেয়ে রূপসা। জন্মাবধি বড়দিনের আগে কেক তৈরির সময় মায়ের এই উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বিশেষ পরিচিত ছোট্ট রূপসা। বছরভর এই দিনটির জন্যই হাপিত্যেশ করে অপেক্ষা করেন পারমিতাদেবী। শত কাজ সত্ত্বেও এই দিনটায় তিনি বাবার বাড়িতে ফিরবেনই। ডিম-মাখা হাত দুটি ঘষতে ঘষতে তিনি বলেন, “সেই ছোটবেলা থেকেই বাবার কেক তৈরির সময় ডিম ফাটানোর গুরুদায়িত্ব পালন করে আসছি আমি। কেক বানানোতে বাবার বিশেষ সুনাম রয়েছে। ছোট থেকেই আমার ধারণা আমি ডিম ফাটায় বলেই কেক এত সুস্বাদু হয়। আমরা বাবা-মেয়ে দু’জনই বড়দিনের এই বিশেষ মুহূর্তের জন্য বছরভর অপেক্ষায় থাকি।” মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন বছর ষাটেকের অর্ণব লুইস। তারপর আবার মনোনিবেশ করেন ময়দা মাখার কাজে। খ্রিষ্ট সমাজের বড়দিন আর কেক তৈরির সম্পর্ক অচ্ছেদ্য। যদিও সময়াভাবে এখন বহু পরিবার কেক তৈরির সমস্ত উপকরণ বেকারিতে দিয়ে আসেন। তা সত্ত্বেও এখনও অনেক পরিবার নিজেরাই কেক তৈরি করে থাকেন। কোনও কোনও পরিবারে বড়দিনের এক সপ্তাহ আগেই শুরু হয়ে যায় কেক বানানোর প্রস্তুতি। পারমিতাদেবীর মতো আরও অনেকের কাছে এই দিনটি স্মৃতি হয়ে থাকে। এক এক পরিবার কেক তৈরিতে এক এক রকম প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন কেকের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ। এক টুকরো চেখে দেখেই বলা দেওয়া যায় এই কেক কার হাতে তৈরি। কিন্তু কী ভাবে তৈরি করা হয় এই কেক? কেকের তৈরির কারিগররা জানিয়েছেন প্রদ্ধতিটা মোটামুটি একই রকম। আর বাকিটা? সেটা গোপনীয়। কারণ, সেটার প্রয়োগেই এক একজন কারিগর বিশেষ স্বাদের কেক বানান। কেক তৈরি হয় কীভাবে? প্রথমে এক কেজি মাখন ও এক কেজি চিনি একসঙ্গে ভাল করে মাখতে হবে। তারপর তাতে ২২টি মুরগির ডিম দিতে হবে। দেশির মুরগির ডিম হলে ২২টির পরিবর্তে লাগবে ৩০টি। কারিগরেরা জানিয়েছেন, দেশি মুরগির ডিমই ভালো। এতে স্বাদ বাড়াবে। কেকের রং আরও আকর্ষণীয় হয়। এ বার এর ভিতরে এককেজি ময়দা, সাড়ে তিনশো গ্রাম কিশমিশ ও মোরাব্বা আর তিনশো গ্রাম ভাঙা কাজুবাদাম দিয়ে ভাল করে মাখতে হবে। কেকের অভিজ্ঞ কারিগরেরা বলেন, বাজার চলতি চেরি ফল না দেওয়ায় ভাল। এতে কেকের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। প্রসিদ্ধ কারিগর মিহির এ লুইস বলেন, “পুরো জিনিসটা তৈরি করে বেকারিতে যাওয়াই ভালো। কারণ, বাড়িতে মাইক্রোওভেনে তৈরি করলে সুস্বাদু হবে না।” |