|
|
|
|
বাঙালিয়ানায় বড়দিন মীরপুরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
প্রায় ২৭০ বছর ধরে বাস করতে করতে আদবকায়দায় বাঙালি হয়ে উঠেছেন সকলেই। আচারে পাশ্চাত্যের ছোঁয়া থাকলেও মিশেল রয়েছে বাঙালিয়ানার। তাই কেক-মোমবাতি-জিঙ্গল বেলের সঙ্গে খোল-কর্তালের সংকীর্তনএমন ঐক্যতানেই বড়দিন পালন করলেন হলদিয়ার মহিষাদলের হুগলি ও রূপনারায়ণের সঙ্গমস্থল গেঁওখালির মীরপুরের পর্তুগীজরা। প্রতি বছরের মতো এবারও সাতটা দিনের জন্য চেনা মীরপুর সাজন অন্যরূপে। সোমবার মাঝরাত থেকেই কেক কেটে খ্রিস্টের উপাসনার মাধ্যমে শুরু হয় উৎসব।
কীভাবে এসেছিলেন এঁরা? তখন ১৭৪২, আলিবর্দ্দি খাঁয়ের শাসনকাল। বর্গি আক্রমণে জেরবার বাংলা। মহারাষ্ট্র থেকে লুটেরাবাহিনী এসে বাংলার ঘরে ঘরে তাণ্ডব চালাচ্ছে। মহিষাদলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বন্দরের রমরমা অবস্থা তখন। বর্গি হামলা থেকে মহিষাদলকে বাঁচাতে তাই মহিষাদলের রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায় গোয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখানে বন্দি ১২ জন পর্তুগিজ জলদস্যুকে নিয়ে আসা হয় মহিষাদল রক্ষা করতে। |
|
চড়ুইভাতি এগরায়। ছবি তুলেছেন কৌশিক মিশ্র। |
পরবর্তীতে রানি জানকী তাঁদের বসবাসের জায়গা দেন মীরপুরে। সেই রোজারিও, টমাস, তেসরা, লবু, রথা পদবির ১২জন এখন ১৩০টি পরিবারে পরিণত হয়েছেন। দু’টি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে রোমান ক্যাথলিক চার্চ ও চার্চ অফ নর্থ ইন্ডিয়া (সিএনআই) গড়েছেন তাঁরা। তবে নামেই আলাদা সাজ, পোষাক, আচরণ সবেতেই পুরোদস্তুর বাঙালি তাঁরা। তবে প্রথাগত ভাবে এখনও বড়দিন আসতেই শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। বাড়িতে বাড়িতে কর্মসূত্রে বাইরে থাকা আত্মীয়দের আনাগোনা বাড়ে। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। গত দু’তিন ধরেই সেজে উঠেছে গির্জা দু’টি। তবে গির্জা পৃথক হলেও ভেদাভেদ ভুলে সম্প্রীতিতেই বিশ্বাসী এই বাঙালি-ওলন্দাজরা। বড়দিনে একে ওপরের বাড়ি গিয়ে আনন্দে মেতেছে খ্রিস্টকলোনির ছেলেমেয়েরা। সোমবার রাতের উপাসনার পরে মঙ্গলবার সকালে ফের খ্রিস্ট্রের গানের বই ও আবহ সঙ্গীতে চলেছে উপাসনা। এর পর দুপুরে হারমোনিয়ম, খোল-কর্তাল নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চলেছে আরাধনা। নতুন বছর পর্যন্ত চলবে এই উৎসব। বাইবেল পাঠ করেছেন রোমান ক্যাথলিকের ফাদার পিটার মার্ক ও সিএনআই-এর ফাদার ভিভি গায়েন। |
|
তমলুকের চার্চে বড়দিনের প্রার্থনা। ছবি তুলেছেন পার্থপ্রতিম দাস। |
এলাকার সিএনআইয়ের সদস্য স্বপন তেসরা বলেন, “দিনটায় শুধু আনন্দ করি। পূর্বপুরুষদের নিয়মে জাঁকজমক করে প্রভুর জন্মদিন পালন করি। তবে বাংলায় বাস করে বাঙালি সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে তো উৎসব পালন সম্ভব নয়।” আবার রোমান ক্যাথলিকের মনোজ তেসরার কথায়, “উপাসনার সময় চার্চে যাই। বছরভর একসঙ্গে থাকা বন্ধুদের থেকে ভেদাভেদ কি সম্ভব? তাই বন্দনা সেরে কে কোন চার্চের সদস্য না দেখেই মিলেমিশে আনন্দ করি।”
শুধুমাত্র মীরপুরের ওলন্দাজ পরিবারেরা নয়, সুতাহাটার শ্রীকৃষ্ণপুর, মঞ্জুশ্রী মোড়ের বাসুদেবপুর, হলদিয়া টাউনশিপের গির্জাগুলিতেও ধর্মীয় উপাসনা সেরেছেন আশপাশের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা। এ ছাড়াও মহকুমা ও তার বাইরের প্রায় সমস্ত নাগরিকই এ দিন বড়দিনের আমেজ উপভোগ করেছেন সমান তালে। গেঁওখালি, হলদিয়া টাউনশিপ, পাতিখালি, সুতাহাটার কুকড়াহাটির হলদি, হুগলী, রূপনারায়ণ নদীর কোনও চরই ফাঁকা যায়নি। কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা থেকেও নদী পেরিয়ে সুপরিচিত ‘পিকনিক স্পট’ গেঁওখালিতে এসেছেন উৎসবমুখর বাঙালি। তবে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পুলিশও মোতায়েন ছিল পিকনিক স্পটগুলিতে। নজরদারি চলেছে রাস্তাতেও। হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, “ছোটবড় পিকনিকের জায়গাগুলিতে পুলিশকর্মীরা টহল দিয়েছেন। কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই।” |
|
|
|
|
|