রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় শুরুতেই হেরে ছিটকে গিয়েছে তাদের দল। কিন্তু স্রেফ ক্রীড়া নৈপুণ্যের জোরে তারাই এ বার বাংলা দলে চলে এসেছে। বান্দোয়ানের ওই চার কিশোর-কিশোরী আজ বৃহস্পতিবার থেকে যুবভারতীতে সাইয়ের ফুটবল কোচের তত্ত্বাবধানে এক সপ্তাহের অনুশীলনে নামছে। পাইকার জাতীয় স্তরের ফুটবল প্রতিযোগিতায় ঘরের ছেলেমেয়েরা ডাক পাওয়ায় খুশি বান্দোয়ানের মানুষজন।
বাংলার মহিলা ফুটবল দলে ডাক পেয়েছে পচাপানি গ্রামের সরলা টুডু, সুমিত্রা হেমব্রম ও ডাঙরজুড়ি গ্রামের শুকুরমণি মুর্মু। পুরুষদের ফুটবল দলে যাচ্ছে শিরীষগোড়া গ্রামের শান্তনু হাঁসদা। ওই চার জনের নাম দু’টি বিভাগে ১৬ জনের তালিকায় চূড়ান্ত হয়েছে বলে সাই-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পুরুলিয়া জেলা যুব ও ক্রীড়া আধিকারিক বিকাশ মণ্ডল জানান, পাইকার ফুটবল প্রতিযোগিতায় পুরুষ ও মহিলাদের দু’টি বিভাগেই বান্দোয়ানের দু’টি দল জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ১৪-১৬ ডিসেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে আয়োজিত রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় পুরুষদের বিভাগে পুরুলিয়া ২-০ গোলে হাওড়ার কাছে পরাজিত হয়। মহিলারাও একই দিনে নদিয়ার কাছে ২-১ গোলে হারে। তাঁর কথায়, “রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়ায় ওদের মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওদের কয়েকজনের খেলা সাইয়ের ফুটবল কর্তাদের নজরে পড়ে। তাঁরা ওই চার জনকে বাংলা দলের ১৬ জনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।” |
প্রশিক্ষণে প্রবোধ মাহাতো। —নিজস্ব চিত্র। |
ওই উঠতি প্রতিভারা সকলেই নিতান্তই দরিদ্র পরিবারের। পরিবারের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই তাদের অনেকে বাইরে জনমজুরের কাজ করতেও যায়। কিন্তু পড়াশোনা ছাড়েনি। কুচিয়া হাইস্কুলে সরলা অষ্টম শ্রেণিতে, শুকুরমণি দশম শ্রেণিতে পড়ে ও শান্তনু সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। সুমিত্রা ডাঙ্গরজুড়ি জুনিয়র হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। বান্দোয়ান ফুটবল দলের কোচ প্রবোধ মাহাতো বলেন, “প্রশাসন থেকে খেলোয়াড় বাছাইয়ের দায়িত্ব পেয়ে স্কুলে স্কুলে ঘুরেছি। সেই সময় ওই চার ছেলেমেয়ে আমার নজরে আসে। ওদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখন ওরা বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার ডাক পাওয়ায় আমি তৃপ্ত।” সাইয়ের ফুটবল কোচ দেবাশিস ঘোষ বলেন, “বান্দোয়ানের তিনটি মেয়ে ও একটি ছেলের নাম পাইকার জাতীয় দলে খেলার জন্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৫ থেকে ১৮ জানুয়ারি ভুবনেশ্বরে জাতীয় স্তরের ফুটবল প্রতিযোগিতা রয়েছে।”
ওই খেলার পর কী হবে জানা নেই। কিন্তু রাজ্যের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার এই ডাক অবশ্য এখনই বদলে দিয়েছে ওই কিশোরকিশোরীদের। সুমিত্রার বাবা বিরাম হেমব্রম বলেছিলেন, “প্রতিদিন কাজে না বেরোলে আমাদের সংসার চলে না। এই অবস্থায় বাড়ির ছেলেমেয়েরা মাঠে কাজ না করে ফুটবল খেললে মনে হত ওরা সময় নষ্ট করছে। কিন্তু প্রবোধবাবু যে ভাবে ওদের খেলার মান উন্নয়ন ঘটিয়ে জাতীয় স্তর অবধি পৌঁছে দিয়েছেন, তাতে আমাদের ভুল ধারণা ভেঙে গিয়েছে। আমরা চাই ওরা গ্রামের তথা জেলার মুখ উজ্জ্বল করুক।” সরলা বলে, “আমি তো বাড়ির বড়দের সঙ্গে কাজ করতে যাই। মাস্টারমশাই (প্রবোধবাবু ) বাড়িতে এসে অনুশীলনের জন্য আমাকে ধরে নিয়ে যেতেন। জাতীয় স্তরের খেলায় মাস্টারমশাইয়ের জন্য ভাল খেলতেই হবে।” বাড়ি ছাড়ার আগে ঝলমল করছিল ছেলেমেয়েগুলোর মুখ। |