আনন্দ-বীণায় বিষাদেরও সুর
-ত বছর বাদে বাপ-বেটার ফের দেখা হয়েছে। দু’জনের ক্রিসমাস দারুণ কাটছে, কী বলিস!
মঙ্গলবার মল্লিকবাজারের কবরস্থানে দাঁড়িয়ে ভাই রিচার্ড ও ব্র্যান্ডনকে হেসে বললেন বড়দা লেসলি (জুনিয়র)। শুনে দু’জনেই সায় দিয়ে মাথা নাড়লেন। তাঁদের সামনে ফুলে-ঢাকা একটি সমাধি। যেখানে চিরবিশ্রামে শায়িত কলকাতার এক তারকা-নাগরিক। লেসলি ক্লডিয়াস।
রিচার্ড-ব্র্যান্ডনদের আর এক সহোদর রবার্ট ওরফে ববিকেও সেখানেই শোয়ানো হয়। অলিম্পিয়ান হকি তারকা লেসলির মেজ ছেলে রবার্টও ইন্ডিয়া খেলেছেন। তিন দশক আগে এ শহরের এক পথ-দুর্ঘটনা বছর কুড়ির যুবাকে কেড়ে নিয়েছিল। সদ্যপ্রয়াত লেসলি এখন সেই ছেলের পাশেই শুয়ে।
বড়দিনের কলকাতার চিরকেলে উৎসবের মেজাজ, দিনভর ছুটি, পিকনিক, চিড়িয়াখানা, সার্কাস, ভুরিভোজ সব-কিছুর ফাঁকে বিষাদের ওই একটি কোণও থাকল। লেসলির তিন ছেলে বিকেলের দিকে এক বার নিঃশব্দে বাবা ও ভাইকে দেখে এলেন। অবশ্য শুধু তাঁরাই নন। বড়দিনের দুপুরে মল্লিকবাজারের ওই কবরস্থানটিতে প্রয়াতদের প্রিয়জন ছাড়াও কেউ কেউ নিয়মিত আসেন।
যেমন, সন্তোষপুরের সঙ্ঘমিত্রা দাশগুপ্ত। বলছিলেন, ছোটবেলায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কাছে থাকার সময় থেকেই বড়দিনে এক বার কবরস্থানে আসার অভ্যেস! পার্ক স্ট্রিটের পুরনো গোরস্থানে জরার জীর্ণ বড্ড বেশি প্রকট। মল্লিকবাজারে সমাধির গায়ে ক্রিসেনথিমাম, লিলি, মোরগফুল মাথা তুলেছে। লেসলির সমাধির সামনে সঙ্ঘমিত্রাদেবী, তাঁর স্বামী অতীশবাবু ও ক’জন আত্মীয় মিলে চুপ করে দাঁড়ালেন। তার পরে তাঁরাও মোমবাতি জ্বালালেন।

লেসলি ক্লডিয়াসের সমাধির সামনে তাঁর ছেলেরা। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
বেহালার অনুপম বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো খেলাপাগলেরও দেখা মিলল মল্লিকবাজারে। পাঁড় মোহনবাগান সমর্থক। লেসলির থেকে সামান্য দূরে শুয়ে আছেন মোহনবাগানের শিল্ডজয়ী দলের রেভারেন্ড সুধীর চট্টোপাধ্যায়। রেভারেন্ড সুধীরের স্মৃতিসৌধের কাছ থেকে ঘুরে অনুপমও লেসলির অন্তিম ঠিকানার খোঁজ করলেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন, দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজদের পড়শি হয়ে মল্লিকবাজারের সমাধিস্থলে নতুন ভিআইপি লেসলি ক্লডিয়াস।
বড়দিনে শহরের তাপমাত্রা আরও নীচে নামলেও দিনের রোদেলা আমেজে ফাঁকি ছিল না। মহানগরে দিনভর দূর মফস্সল, শহরতলির সঙ্গে মিলেমিশে টো টো কোম্পানি তাই জমে উঠেছে।
দিনের আলো নিভতেই সাজানো আলোয় দিন হয়ে গিয়েছে পার্ক স্ট্রিটে। রেস্তোরাঁগুলিতেও ঠাঁই নাই অবস্থা। ম্যাকলয়েড স্ট্রিটে লেসলি-পত্নী অশীতিপর ভিলিয়া সারাদিন গৃহবন্দি। পাড়ার ছেলে ওয়ারেন ক্লাইভ টাকার বলছিলেন, “ব্র্যান্ডনরা আমার বন্ধু। তাই এক সময়ে বড়দিনে আঙ্কল লেসের সঙ্গে আমাদের দেখা হতোই!”
লেসলির ছেলেরা বলছিলেন, বড়দিনের দু’দিন বাদে (২৭ ডিসেম্বর) মা-বাবার বিবাহ-বার্ষিকী। ক্রিসমাসে তারও একটি মহড়া শুরু হয়ে যেত। মেলবোর্ন-প্রবাসী লেসলি (জুনিয়র)-রিচার্ডদের এ বার মা-বাবার বিয়ের জন্মদিনেই কলকাতায় আসার কথা ছিল। খারাপ খবরটা পেয়ে একটু আগেই আসতে হয়েছে।
‘হাসি বিষাদকে ঢেকে রাখলেও তার সঙ্গী থাকে দুঃখ-যন্ত্রণাও! কোনও কোনও মানুষ না-থাকলেও তাঁর কথা রোজই মনে পড়ে।’ কবরস্থানে রবার্টের সমাধিফলকে ইংরেজিতে লেখা কথাগুলি এক বার পড়লেন লেসলি (জুনিয়র)। অস্ফুটে বললেন, “বিউটিফুল ওয়ার্ডস’! তার পরে স্মিত হেসে বাইরে বড়দিনের রঙিন কলকাতার দিকে হেঁটে গেলেন তিনি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.