ভুবনেশ্বর কুমারকে পুণে ওয়ারিয়র্স টিমে আমরা নিয়েছিলাম দু’টো কারণে।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ওকে নিয়েও ফেলে রেখেছিল দু’টো বছর। কিন্তু মাঝে-মাঝেই আমি দেখতাম, রঞ্জিতে উত্তরপ্রদেশ কোনও বিপদে পড়লেই ও কিছু না কিছু করে দিচ্ছে। বলটা কী রকম করে, সেটা মঙ্গলবার রাতই বুঝেছেন। সঙ্গে বলি, ওর ব্যাটের হাতটাও কিন্তু বেশ ভাল। উত্তরপ্রদেশ ৫০-৫, ভুবি (এই নামেই আমরা ওকে ডাকতাম পুণে ড্রেসিংরুমে) ঠিক এসে সত্তর-আশি করে দিয়ে যাবে। আবার ধরুন উইকেট পড়ছে না, ঠিক দু’টো-তিনটে নিয়ে চলে যাবে। আর আমাদের যেটা সবচেয়ে ভাল লেগেছিল, সেটা হচ্ছে ওর মানসিকতা। হাজার চাপেও এতটুকু প্রভাবিত হয় না! এমন ক্রিকেটার আজকের দিনে পাওয়া যায় নাকি?
দেখুন, আমি বলছি না ও বিরাট কিছু করে ফেলেছে। ওর মতো দু’দিকে সুইং করাতে পারে, এমন বোলার আগেও এসেছে ভারতে। সেরা ফর্মের প্রবীণ কুমার ছিল। বেঙ্কটেশ প্রসাদ ছিল। কিন্তু প্রবীণকে আমি কোনও দিন মাথা ঠান্ডা রাখতে দেখিনি। যেটা প্রসাদ রাখত। তাই বলব, ভুবি অনেকটাই প্রসাদ ঘরানার। |
৪-০-৯-৩ |
আবিষ্কার। পাক ব্যাটিংকে শুরুর ধাক্কা দিয়ে ভুবনেশ্বর কুমার। |
|
• ‘নতুন বলেও তা হলে সুইং হচ্ছে। তথ্যটা জানানোর জন্য ভুবনেশ্বর কুমারকে ধন্যবাদ।’ সঞ্জয় মঞ্জরেকর
• ‘ভারত-পাকিস্তান দুই দেশ ক্রিকেটের মাঠে। দারুণ ম্যাচ। বাহ্, বাহ্। ইউ গাইজ আর এন্টারটেইনিং।’ সানিয়া মির্জা
• ‘ভুবনেশ্বরের দুর্দান্ত অভিষেক। কিন্তু...।’ শাহিদ কপূর |
|
আজকেও দেখুন। কেউ বলবে, জীবনের প্রথম ইন্ডিয়া জার্সি পেয়েছে? তা-ও আবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে! হাতে রান বলতে মাত্র ১৩৩, সেখানে কী বলটাই না করল! পাঁচটা বল বাইরে একটা বল আচমকা ভেতরে আনছে। তাতেই বারোটা বাজল জামশেদ আর উমর আকমলের। ওর গতি বেশি নয়। কিন্তু কোনও দিন দেখিনি, ও সেটা নিয়ে চিন্তিত বলে। বরং ওই গতি নিয়েও ও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। জানে, ও পারবে। কারণ ওর ইস্পাত-কঠিন মানসিকতা। পেস বোলারদের মধ্যে একটা আগ্রাসন থাকে। ‘খুনে’ মানসিকতা থাকে। ওর সেটা নেই। কিন্তু সাইলেন্ট কিলার বলতে যা বোঝায়, ও তাই। ওকে দেখে হয়তো ভয় পাবেন না, কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখবেন উইকেটটা চলে গিয়েছে। আপনি কাউকে ইনসুইং শেখাতে পারেন, আউটসুইং শেখাতে পারেন, কিন্তু মানসিকতা শেখানো যায় না। ওটা যার হয়, হয়। যার হয় না, কোনও দিনই হয় না।
ড্রেসিংরুমেও কিন্তু ছেলেটা অদ্ভুত চুপচাপ। কোনও দিন উঁচু গলায় কথা বলতে শুনিনি। ঝামেলাটামেলায় যাওয়া তো দূরের ব্যাপার। মানে, উঠতে বললে উঠবে। বসতে বললে বসবে ঘরানার। এমন একটা ছেলে, যার খারাপ আপনি চেষ্টা করলেও মন থেকে চাইতে পারবেন না। মেরঠের মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছে। ওর দাদা খুব সাধারণ ব্যবসা করে। |
ভুবনেশ্বরের উঠে আসার কাহিনিও এমন আহামরি কিছু নয়। অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৯ খেলে আর পাঁচটা ছেলের মতো উঠে আসা। কিন্তু মানসিকতাটাই তো আসল। পুণে-তে থাকত যখন দেখতাম সবার আগে প্র্যাক্টিস করতে নামত। সবার আগে জিমে ঢুকত। অসম্ভব সিরিয়াস। অসম্ভব সাহসীও। গত আইপিএলেই দেখেছি, নিজে থেকে ডেথে বল করতে চাইত। সবাই এটা পারে না। আইপিএলে আমাদের প্রত্যাশাও মিটিয়েছে ও। ওকে আমরা অলরাউন্ডার হিসেবে খেলাচ্ছিলাম। সেক্ষেত্রে ক’টা উইকেট পেয়েছে, সেটা দিয়ে শুধু বিচার করা ঠিক হবে না।
ভুবি-র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকটা দুর্দান্ত হল। কিন্তু এখনই কত দূর যাবে, বলা কঠিন। কারণ আমদাবাদ ম্যাচ থেকেই ওকে খেলার ফর্মূলা পাকিস্তান বার করে ফেলতে চাইবে। তখন কতটা কী করতে পারে, সেটাই দেখার। |