|
|
|
|
সশক্তিকরণে টাকা পেতে ব্যর্থ বহু পঞ্চায়েত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
রাজ্য জুড়ে একের পর এক প্রকল্পে উন্নয়নের টাকা ফেরত চলে যাওয়ার পাশাপাশি এ বার ভাল কাজ করতে না পারায় সশক্তিকরণ কর্মসূচিতেও উন্নয়নের অর্থ পাচ্ছে না পশ্চিম মেদিনীপুরের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত। জেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে আর্থিক নয়ছয়, কম্পিউটার পরিকাঠামো গড়ে তুলতে না পারার অভিযোগও রয়েছে। অথচ ভাল কাজ করতে পারলেই পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে ন্যূনতম ১২ লক্ষ টাকা পেতে পারে একটি পঞ্চায়েত। জনসংখ্যার নিরিখে কেউ কেউ ৫০-৬০ লক্ষ টাকাও পায়। যে টাকায় পঞ্চায়েত তার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন করতে পারে। কিন্তু প্রশাসনিক তদন্ত বলছে, এমন তহবিলের টাকা নিতেও ব্যর্থ পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশির ভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত। তাই এ বার পঞ্চায়েতের কাজে নিয়মিত নজরদারির পাশাপাশি আর্থিক দুর্নীতি রুখতেও তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম দত্ত বলেন, “আমরা চাই স্বচ্ছ ভাবে দ্রুত গতিতে উন্নয়নের কাজ হোক। তাতে যা পদক্ষেপ করা প্রয়োজন সবই করা হবে।”
পঞ্চায়েতের কাজের মানোন্নয়নের জন্যই ‘গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাতিষ্ঠানিক সশক্তিকরণ কর্মসূচি প্রকল্পে’ অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। কয়েকটি সরকারি শর্ত মানলে এই প্রকল্প থেকে মিলবে অর্থ। শর্তগুলি হল, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে পরের অর্থবর্ষের পরিকল্পনা ও বাজেট ঠিক করে নিতে হবে, এক্সটারনাল অডিটে বিরূপ মন্তব্য থাকা চলবে না, পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতের ৬০ শতাংশ অর্থ খরচ করতে হবে, দফতরে পঞ্চায়েত ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থাকতে হবে এবং মাসিক জমা-খরচের হিসেব ব্লককে জানাতে হবে। চলতি বছর থেকে অবশ্য আরও একটি শর্ত যোগ হয়েছে। তা হল, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের ঠিক করা বাইরের সংস্থাকে দিয়ে বছরভর কাজের সমীক্ষা করাতে হবে। এই সমীক্ষায় প্রথম বছর ১০০-র মধ্যে অবশ্যই ৬০ নম্বর পেতে হবে। পরের বছর পেতে হবে ৭০ ও তার পরের বছর ৮০ নম্বর।
কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছিল ২৯০টির মধ্যে ১৭২টি পঞ্চায়েতকে। মোট পঞ্চায়েতের ৬০ শতাংশ এই সুযোগ পায়। পরিসংখ্যান বলছে, পঞ্চায়েতের কাজের গুণগত মান কিছুটা বাড়লেও চার বছরেও তা একশো শতাংশ হয়নি। ২০১০-১১ অর্থবর্ষে ১৭২টির মধ্যে ৫৫টি পঞ্চায়েত এই প্রকল্পে অর্থ পেয়েছিল। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৯টি। চলতি আর্থিক বছরে আবার কমে দাঁড়ায় ১০৯টিতে। আগামী অর্থবর্ষের জন্যও পঞ্চায়েত চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। দেখা যাচ্ছে ১২৬টি পঞ্চায়েত ওই খাতে অর্থ পাবে। প্রশাসন জানিয়েছে, আরও ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতও অর্থ পেতে পারে। এ ছাড়া আগামী অর্থ বর্ষের মধ্যেই কাজের নিরিখে ঠিক করা হবে ২০১৪-১৫-তে কোন কোন গ্রাম পঞ্চায়েত এই সুবিধে পাবে। কী ভাবে ১৭২টি পঞ্চায়েতই এই সুযোগ পেতে পারে তার জন্য সমীক্ষা শুরু করে জেলা প্রশাসন। তাতে দেখা যাচ্ছে, ৪৬টি পঞ্চায়েতের হাল খুব খারাপ। এমনকী ৩টি পঞ্চায়েত পরের বছরের পরিকল্পনা ও বাজেট তৈরির ব্যাপারে এখনও কিছুই করে উঠতে পারেনি। অথচ, জানুয়ারির মধ্যেই তা শেষ করার নির্দেশ রয়েছে। জানা গিয়েছে, ২৫টি পঞ্চায়েত পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতের অর্থ ঠিকমতো খরচ করতে পারছে না। এক্সটারনাল অডিট ১০টি পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে বিরূপ মন্তব্য করেছে। অর্থাৎ খরচের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা রয়েছে ওই পঞ্চায়েতগুলির। আর ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এখনও কম্পিউটার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই সব পিছিয়ে পড়া পঞ্চায়েতের কাজেই নজরদারি চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খরচের হিসেব দেখতে তদন্তও করা হবে। স্বচ্ছতার অভাব ধরা পড়লেই ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “একটি পঞ্চায়েত যদি পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে ১২ লক্ষ থেকে ৫০-৬০ লক্ষ পর্যন্ত টাকা পায় তাহলে অনেক কাজই করতে পারে। আইসিডিএস কেন্দ্র, শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, কালভার্ট, পানীয় জলের ব্যবস্থাও করা যায়। কাজের গুণগত মান বাড়লে সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও নজির তৈরি সম্ভব।” এই প্রকল্পের আওতায় থাকা প্রতিটি পঞ্চায়েতই যাতে এই সুযোগ পায় এ বার থেকে সেদিকে লক্ষ রাখা হবে বলেও প্রশাসন জানিয়েছে। |
|
|
|
|
|