নিজস্ব সংবাদদাতা • রায়গঞ্জ |
বন দফতরের উদাসীনতায় রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাস চত্বরে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে পিকনিক চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার বড়দিনে পক্ষিনিবাসের পিকনিক স্পটে শতাধিক পর্যটক ৫০টির বেশি সাউন্ডবক্স বাজিয়ে পিকনিক করেছেন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, বনকর্মীদের নজরদারির অভাবে যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বলে পরিবেশপ্রেমীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ঘটনার কথা পৌঁছেছে বনমন্ত্রী হীতেন বর্মনের কানেও। তিনি বলেন, “উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব। কোনও মতেই পক্ষিনিবাসে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে পিকনিক ও দূষণ বরদাস্ত করা হবে না।”
রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিক অপূর্ব সেনের মোবাইল পরিষেবা এলাকার বাইরে থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে পক্ষিনিবাসের রেঞ্জার রঞ্জিৎ সরকারের যুক্তি, “বনকর্মীর অভাবে পিকনিকের মরশুমে ঠিকমত নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না। এতেই সাউন্ডবক্স বাজিয়ে পিকনিক ও দূষণ ছড়ানোর ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” তিনি জানান, পক্ষিনিবাসে ৮ জন বনকর্মী আছেন। পিকনিক স্পটে নজরদারি চালানোর জন্য মাত্র ১ জন আছেন। এত কম সংখ্যক বনকর্মীকে দিয়ে সরকারি নির্দেশ কার্যকরী করা খুব কঠিন। |
প্রায় ৮০ একর এলাকাজুড়ে ওই পক্ষিনিবাস রয়েছে। এরমধ্যে ১২ বিঘা এলাকায় পিকনিক স্পট রয়েছে। পিকনিক স্পটে বন দফতরের তরফে একাধিক সাইনবোর্ডে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে পিকনিক না করেন তা বলা হয়েছে। পাশাপাশি, পর্যটকেরা যাতে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে আবর্জনা ফেলেন সেই কথাও লেখা রয়েছে। কিন্তু কোনওটাই মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। বন দফতর সূত্রের খবর, পর্যটকদের বিধি অমান্য করে পিকনিক করতে দেখা গেলে প্রথমে তাঁদের সতর্ক করে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তাতে কাজ না হলে প্রয়োজনে পুলিশের সাহায্য নেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এদিন পর্যটকেরা সাউন্ডবক্স বাজিয়ে পিকনিক করছেন বলে দেখা গেলেও কেনও পুলিশের সাহায্য নেওয়া হল না সেই প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি, কাউকে সতর্কও করা হয়নি বলে অভিযোগ।
এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত অনিল সিংহ বলেন, “আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়ে দিই। পুলিশের সাহায্য চাওয়ার এক্তিয়ার তাঁদেরই।” আর এই প্রসঙ্গে রঞ্জিৎবাবু শুধু বলেছেন, “আমরা বিষয়টি দেখছি। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরণের ঘটনা না ঘটে তা দেখা হবে।”
প্রতি বছর জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত পক্ষিনিবাসে পরিযায়ী পাখিরা থাকে। পরিযায়ীদের টানেই ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসজুড়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে বহু পর্যটক পক্ষিনিবাসের পিকনিক স্পটে আসেন। দেড় বছর আগে বনমন্ত্রী সাউন্ডবক্স না বাজানো এবং নোংরা আবর্জনা ফেলার জন্য ডাস্টবিন ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তার পরেও বন দফতরের উদাসীনতায় ঘটনাগুলি ঘটছে বলে পরিবেশপ্রেমীরা অভিযোগ করেছেন।
পিপল ফর অ্যানিম্যালের জেলা সম্পাদক গৌতম তান্তিয়া বলেন, “বন দফতরের কর্তাদের নজরদারির অভাবেই উচ্চশব্দে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে পিকনিক চলছে। বনমন্ত্রীকে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি।” আর রায়গঞ্জ নাগরিক কমিটির সম্পাদক তপন চৌধুরী বলেন, “যত্রযত্র আবর্জনা ছড়ানোয় দূষণ বাড়ছে। বন কর্তারা সজাগ না হলে পক্ষিনিবাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে।” |