নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
গঙ্গাস্নানে যাওয়ার পথে দুষ্কৃতীদের হাতে এক বৃদ্ধার খুন হওয়ার অভিযোগ এবং তাকে ‘দুর্ঘটনা’ বলে লেখার জন্য বৃদ্ধার আত্মীয়দের উপরে পুলিশের চাপ সৃষ্টির অভিযোগ এই দুই ঘটনায় দিনভর উত্তাল বড়দিনের হাওড়া। এলাকাবাসীরা হাওড়া থানায় বিক্ষোভ দেখালে বিকেলের দিকে পুলিশ অবশ্য খুনের অভিযোগ নেয় ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রোজ ভোরে বাড়ির কাছে রামকৃষ্ণপুরে গঙ্গার ঘাটে স্নানে যেতেন হাওড়ার গঙ্গাধর মুখার্জি রোডের বাসিন্দা, পঁচাত্তর বছরের বিধবা বৃদ্ধা হরিকলা থাপা। ছেলে, বৌমা ও দুই নাতি-নাতনি নিয়ে ওই এলাকার একটি বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন তিনি। পুলিশ জানায়, অন্য দিনের মতো মঙ্গলবারও দরজায় তালা দিয়ে স্নানে বেরোন হরিকলাদেবী। এর পরে সকালে বাড়ির কাছে গঙ্গাধর মুখার্জি রোডেরই একটি নর্দমা থেকে তাঁর রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
পুলিশ জানায়, সকাল সাতটা বেজে গেলেও মা ফিরছেন না দেখে হরিকলাদেবীর ছেলে তিলবাহাদুর তাঁকে খুঁজতে বেরোন। দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁর মা নর্দমায় পড়ে রয়েছেন। মুখ বীভৎস ভাবে থেঁতলানো। চারপাশে ভিড়।
দেহ যেখানে পড়ে ছিল, তার প্রায় ২০ ফুট দূরে রাস্তার পাশে মাটিতে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত। রক্ত লেগে নর্দমার পাশের দেওয়ালেও।
তিলবাহাদুরের অভিযোগ, তাঁর মা যখন স্নান সেরে ফিরছিলেন, তখন দুষ্কৃতীরা তাঁকে আক্রমণ করে সোনার কানের দুল ও রুপোর হার ছিনিয়ে নেয়। এর পরে তাঁর মাথায় এবং মুখে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে নৃশংস ভাবে খুন করে রাস্তার পাশে একটা বড় নর্দমায় দেহটি ফেলে দেয়। তাঁর সন্দেহ, দুষ্কৃতীদের মধ্যে কাউকে চিনে ফেলায় হরিকলাদেবীকে এ ভাবে খুন করা হয়েছে।
এ দিকে, তিলবাহাদুর বলেন, “পুলিশের কাছে এফআইআর করার সময়ে আমার সন্দেহের কথা লিখেছিলাম। কিন্তু প্রথমে পুলিশ এফআইআর নিতে চায়নি। উপরন্তু খুনের অভিযোগ কেটে তা ‘দুর্ঘটনা’ বলে উল্লেখ করে নতুন করে লিখে আনতে বলে।” একই অভিযোগ এলাকার বাসিন্দা অম্বুজ শর্মারও। তিনি বলেন, “থানা ১০ মিনিট দূরে হলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে দু’ঘণ্টা দেরিতে। তার উপরে এফআইআর থেকে ‘খুন’ শব্দটি কেটে দিতে বারবার চাপ দিচ্ছিল তারা।”
এমনিতেই এ দিন ওই বৃদ্ধার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল গঙ্গাতীরবর্তী ফোরশোর রোড সংলগ্ন গঙ্গাধর মুখার্জি রোড এলাকায়। তার উপরে পুলিশ সেটিকে ‘দুর্ঘটনা’ বলে লিখতে চাপ দেওয়ার খবর রটে যাওয়ায় উত্তেজনা ছড়ায় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। শেষে এলাকাবাসী দল বেঁধে হাওড়া থানায় জমায়েত হলে বিকেলের দিকে খুনের অভিযোগ নেয় পুলিশ। |
নর্দমা থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে হরিকলাদেবীর দেহ। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র |
এ দিন হাওড়া থানার দেখা যায়, সেখানে মানুষের ভিড়। পুলিশি অসহযোগিতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ প্রথম থেকেই ঘটনাটি লঘু করে দেখে নিজেদের দায় এড়াতে চাইছে। কারণ, ঘটনাটি খুন বলে প্রমাণিত হলে পুলিশ কমিশনারেট যে এলাকার মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তা প্রমাণিত হবে।
হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “ওই ব্যক্তি ঠিক মতো এফআইআর লিখতে পারেননি বলে তাঁকে খুনের অভিযোগ ভাল করে লিখে আনতে বলা হয়েছিল। আমরা অভিযোগ পেয়েই খুনের মামলা করে তদন্ত শুরু করেছি।”
পুলিশ কমিশনারের মতে, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে নিশ্চিত হওয়া যাবে ঘটনাটি খুন, না দুর্ঘটনা। তবে প্রাথমিক তদন্তের পরে মনে করা হচ্ছে, ভারী কিছুর আঘাতেই মৃত্যু হয়েছে হরিকলাদেবীর। এমনও হতে পারে, দ্রুতগামী কোনও গাড়ির ধাক্কায় ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তবে সবটাই তদন্তের পরে নিশ্চিত হওয়া যাবে। |