কোথাও চলল প্রচার। কোথাও তল্লাশি চালিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হল মদ। কোথাও ভেঙে দেওয়া হল মদের বোতল। উল্টে দেওয়া হল টেবিল। টানা নজরদারি চালাল পুলিশ। দিল্লিতে ধর্ষণ কাণ্ড এবং তার জেরে রাজধানীতে অশান্তির ঘটনার পরে বড়দিনে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে হুগলির পিকনিক স্পটগুলিতে এমনই তৎপরতা দেখা গেল পুলিশের। বড়দিন বা বর্ষবরণের দিন অবাধে মদ্যপান চলে বিভিন্ন পিকনিক স্পটে। তা নিয়ে ছোটখাট অশান্তির নজিরও বিরল নয়। এ বার অবশ্য সেই পরিস্থিতি কার্যত দেখা যায়নি।
মঙ্গলবার, বড়দিনের সকাল থেকে আরামবাগ মহকুমা জুড়ে চড়ুইভাতিতে মদ্যপান নিষিদ্ধ করতে মাইকে প্রচার চালায় পুলিশ-প্রশাসন। |
খানাকুল থানার পুলিশ রাধানগরে রামমোহন রায়ের আমবাগানে চড়ুইভাতি করতে আসা বিভিন্ন দলের কাছ থেকে প্রায় ২০ লিটার বিলিতি মদ উদ্ধার করে তা নষ্ট করে দেয়। একই অভিযান চলেছে গোঘাটের গড় মান্দারণ, আরামবাগের চাঁদুর ফরেস্ট, দ্বারকেশ্বর নদীর চর এবং পুড়শুড়ার দেউলপাড়া-সংলগ্ন দামোদরে বিস্তীর্ণ চরে।
এই সমস্ত জায়গায় কয়েকশো মানুষ আসেন বনভোজনে। প্রশাসনের কথা মেনে অনেকে নিজেরাই মদের বোতল তুলে দেন পুলিশের হাতে। এসডিপিও (আরামবাগ) শিবপ্রসাদ পাত্র বলেন, “শ্লীলতাহানি-সহ যাবতীয় অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে পিকনিক স্পটগুলিতে মদ্যপান বন্ধ করার উপরে জোর দেওয়া হয়েছিল। ব্যাপক প্রচারের পাশাপাশি সর্বত্র টহলদারি চলছে। মানুষের সহযোগিতা পাওয়া গিয়েছে।” |
রসভঙ্গ। বড়দিনে সিঙ্গুরে ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর দে। |
ভদ্রেশ্বরে দিল্লি রোডের ধারে ছুটি পার্কে সকাল থেকেই পুলিশি টহলদারি ছিল। সেখানে প্রকাশ্যে মদ্যপান চোখে পড়েনি। তবে নিউ দিঘা পার্কে সকাল থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে মদ্যপান চলছিল। দুপুরে পুলিশকর্মীরা মদের টেবিল উল্টে দেন। বোতল ভেঙে দেওয়া হয়।
বড়দিনে জেলা সদরের পিকনিক স্পটগুলিতে অবাধে মদ্যপান আটকাতে রবিবার থেকেই পুলিশ রাস্তায় নামে। পিকনিক স্পটের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ওই সমস্ত জায়গায় যে সব দোকানে মদ বিক্রি হয়, তাদেরও পুলিশের তরফে সতর্ক করা হয়। সর্বোপরি, পিকনিক স্পটগুলিতে এ দিন সকাল থেকেই পুলিশ কর্মীরা সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) দেবশ্রী সান্যাল বলেন, “পুলিশ সজাগ ছিল। কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”
হুগলির বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও হাওড়া, কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা এমনকি বীরভূমের মতো দূরের জেলা থেকেও মানুষ এসেছেন বনভোজন সারতে। খানাকুলের রাধানগর, আরামবাগের চাঁদুর, গোঘাটের মান্দারণ থেকে শুরু করে বলাগড়ের সবুজ দ্বীপ বা ব্যান্ডেল চার্চ লাগোয়া গঙ্গার পাড় কোথাও তিল ধারণের জায়গা ছিল না। চন্দননগরের কেএমডিএ পার্ক, দিল্লি রোডের ধারে ছুটি পার্ক, নিউ দিঘা, দিয়ারার ওয়ান্ডার ওয়ার্ল্ড বা হুগলির অ্যাকোয়ামেরিনা সব জায়গার ক্ষেত্রেই একই কথা প্রযোজ্য। এ দিন বিভিন্ন গির্জা আলোর মালায় সেজে ওঠে। সকালে বিশেষ উপাসনা হয়। বড়দিন এবং আসন্ন নতুন বছর উপলক্ষে শ্রীরামপুর-জন্নগর ব্যাপটিস্ট চার্চ (সিএনআই) গত ২১ তারিখ থেকেই নানা কর্মসূচি পালন করছে। শ্রীরামপুর মিশন চার্চে উপাসনায় ছিলেন বহু মানুষ। আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলবে। |
উপরে, আরামবাগ ও নীচে ব্যান্ডেল চার্চে ছবি দু’টি তুলেছেন মোহন দাস ও তাপস ঘোষ। |