|
|
|
|
অনাথরাও সামিল বড়দিনের উৎসবে |
উত্তম সাহা • শিলচর |
কেউ শিশু, কেউ-বা শিশুরই মতো। হাঁটতে পারে না, নড়তে-চড়তে পারে না। বেশ ক’জন বধির। মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজ-এর শিলচর শাখার ৯৫ আবাসিকের প্রায় সবাই হিন্দু। তবু তারা মুখিয়ে থাকে বড়দিনের জন্য। কারণ এ দিন তাদের নতুন জামা-জুতো মেলে, বিছানায় বিছিয়ে দেওয়া হয় নতুন কভার। খাওয়া-দাওয়ায়ও বেশ রকমফের।
বিভিন্ন গির্জা, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরের মতোই আজ মিশনারিজ অব চ্যারিটিজ-এর শিলচর শাখাও সেজে উঠেছে। সকলের মধ্যে উৎসবের মেজাজ। ২০টি শিশুর সকলের পরনে নতুন জামা-কাপড়। বাদ পড়েনি এক বছরের কম বয়সীরাও। একটু বড়রা কেউ
বেলুন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কেউ লজেন্স হাতে হাঁটছে। খেলাধুলায় স্বাধীনতা পেয়ে চত্বর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এরা। সিস্টাররা চতুর্দিক থেকে খেয়াল রাখছেন এদের। সকলকে ঘিরেই আনন্দের ঝর্না।
|
যিশুর জন্মদিনে নতুন জামায়। শিলচরে স্বপন রায়ের তোলা ছবি। |
মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজের শাখা-প্রধান সিস্টার বেঢে বলেন, “সকলেই এই উৎসবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। আনন্দ হবে না কেন! এ দিনে বহু মানুষ খাওয়াতে চান। কেউ প্রাতরাশ, কেউ দুপুরের আহারের বিশেষ পদ, কেউ জানতে চান উৎসবের রাতে এরা কী খেতে ভালবাসবে? আজ সারা দিন তাদের জন্য ভাল ভাল খাবারের ব্যবস্থা।
তবু প্রতিষ্ঠানের তহবিলে বিশেষ হাত পড়বে না। কারণ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ তাদের জন্য এগিয়ে এসেছেন।”
এই আবাসিকরা যেমন অনাথ হয়েও আট সিস্টারের সান্নিধ্যে উৎসবের আনন্দে দিন কাটাচ্ছেন, তেমনই আর এক দলকে দেখা গেল, যাঁদের সব কিছু থেকেও উৎসবের দিনে নিকটাত্মীয়দের কাছে পাননি। এঁরা এনআইটি শিলচরের বিদেশি ছাত্ররা। কেনিয়া, কঙ্গো, ইউসোপিয়া, উগান্ডা, ক্যামেরুন প্রভৃতি দেশ থেকে ছাত্রবৃত্তি নিয়ে মাস চারেক আগে এসেছেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। এই প্রথম এমন দিনে বাড়ির বাইরে। তাই সকাল সকাল চলে আসেন শিলচর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে। প্রার্থনা সেরে কুশল বিনিময় করলেন সকলের সঙ্গে।
উগান্ডার নাধোমি ইয়াকোবি, কেনিয়ার মৌরিচ কেভিন চেভি, ক্যামেরুনের ইস্থার বললেন, বাড়ির সবার কথা খুব মনে পড়ছে। তবু যেটুকু পারা যায়, উৎসবের আনন্দে যোগ দিতে চাই। ব্যাপ্টিস্ট গির্জায় উপস্থিত জনতা অবশ্য প্রার্থনা সেরে তাঁদের নিয়েই মেতে ওঠেন। কেউ তাদের দেশ সম্পর্কে জানতে চান, কেউ প্রশ্ন করেন রুচিপছন্দ, প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে। চলে ফোটোসেসনও।
ব্যাপ্টিস্ট, ক্যাথলিক, প্রেসবেটেরিয়ান শিলচরের সব গির্জাতেই বড়দিন পালিত হয় উৎসাহ ভরে। |
|
|
|
|
|