কেজরিওয়ালদের দাবি ওড়াল পুলিশ-পরিবার
আহত পুলিশের মৃত্যু, শুরু চাপান-উতোর
রুণী গণধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পরে প্রথম বলি হলেন দিল্লি পুলিশের এক কনস্টেবল। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের একাংশের হাতে রবিবার গুরুতর জখম হন সুভাষ চাঁদ তোমর। আজ সকালে তিনি মারা যান। আর সেই মৃত্যু কী ভাবে হয়েছে, তাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়ে গেল চাপানউতোরের রাজনীতি।
রাষ্ট্রীয় সম্মানে মৃত কনস্টেবলের শেষকৃত্য সম্পন্ন করে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আসরে নামেন পুলিশ ও সরকারের নেতারা। কনস্টেবলের শেষকৃত্যে পুলিশের কর্তারা ছাড়াও সামিল হন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর পি এন সিংহ। তাঁদের বার্তা, হিংসার ফলে আখেরে কারও লাভ তো হলই না। শুধু প্রাণ গেল এক ব্যক্তির। পুলিশ ও কংগ্রেস নেতারা আজ আর একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চান। তা হল, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই স্বতঃস্ফূর্ত জন-আন্দোলনকে হিংসাত্মক বিক্ষোভে পরিণত করা হয়েছে এবং এর পিছনে রয়েছে রাজনীতির মস্তিষ্ক। ওই কনস্টেবলকে মারধরের অভিযোগে আট জন বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় মামলাও দায়ের করেছে পুলিশ। দিল্লি পুলিশের অভিযোগ, এঁরা অধিকাংশই অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম-আদমি পার্টির সদস্য।

কনস্টেবল সুভাষ চাঁদ তোমরের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী।
পুলিশের দাবি, রবিবারের হাঙ্গামায় জখম হয়েই মৃত্যু তোমরের।
বসে নেই আম-আদমি পার্টি নেতৃত্বও। কেজরিওয়াল বলেন, “মিথ্যা চক্রান্ত করছে পুলিশ।” কেজরিওয়ালদের দাবি, ওই কনস্টেবলের মৃত্যু হয়েছে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে। তা প্রমাণ করার জন্য ভিডিও ফুটেজ এবং ঘটনার দিনের ছবি তাঁরা আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছেন। কেজরিওয়ালের এ-ও দাবি, পুলিশ যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে, তাঁরা অন্যত্র শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন।
দিল্লির পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার অবশ্য জানিয়েছেন, গত রবিবার বিক্ষোভকারীরা যখন ইন্ডিয়া গেটে গোলমাল করছিলেন, তখন সেখানেই কর্মরত ছিলেন সুভাষ। বিক্ষোভকারীদের আঘাতেই তিনি আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করার পরে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখতে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, নেতৃত্বহীন বিক্ষোভে ঢুকে রাশ নিজেদের হাতে নেওয়ার একটা চেষ্টা অন্যদের মতো কেজরিওয়ালরাও করেছিলেন। কিন্তু এ বার তাঁদেরই কেউ কেউ খুনের মামলায় জড়িয়ে পড়ায় প্যাঁচে পড়ে গিয়েছেন। আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসতেই পাল্টা ছবি প্রকাশ করে মৃত্যুর পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
সুভাষের পরিবার কিন্তু কেজরিওয়ালদের দাবি মানতে নারাজ। ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তাঁরা। সুভাষের বড় ছেলে দীপক বলেন, “জনতার মার খেয়েই মৃত্যু হয়েছে বাবার। উনিই ছিলেন পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস।” দীপক এ-ও বলেন, “জনতার কাছে একটাই প্রশ্ন, বাবাকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন কি?”

কিন্তু সে দিনের এই ছবিটি প্রকাশ করে কেজরিওয়ালদের দাবি,
সে দিনের হিংসায় নয়, তোমরের মৃত্যু হয় হৃদরোগ।
তাঁরা হিংসা বন্ধের আবেদনও করেছেন। কিন্তু পুলিশ ও তাঁদের এই আবেদন শেষ পর্যন্ত কাজে আসবে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় কংগ্রেস। বরং কংগ্রেস তথা সরকারের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “পুলিশ মারা গেলে সব সময় মানুষের সহানুভূতি পাওয়া যায় না।” তাঁর ব্যাখ্যা, বিক্ষোভকারীদের মারধরে যেমন ওই কনস্টেবল-সহ প্রায় ৬৪ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছিলেন, তেমনই দিল্লি এ-ও দেখেছে যে, পুলিশ কী ভাবে লাঠিপেটা করেছে বিক্ষোভকারীদের। কনস্টেবলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেও কিন্তু যন্তরমন্তরে বিক্ষোভ থামেনি।
আর এখানেই কপালের ভাঁজ যাচ্ছে না কংগ্রেসের একটি বড় অংশের। তার সঙ্গে সরকারের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ তো রয়েইছে। এরই মধ্যে এ দিন নীরজ কুমার ঘোষণা করেছেন, সব পুলিশকর্মীর এক দিনের বেতন দেওয়া হবে সুভাষের পরিবারকে। এই ঘোষণাতেও ক্ষুব্ধ শাসক দলের একাংশ। দলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, পুলিশ যদি ওই এক দিনের বেতন ধর্ষিতা তরুণীর জন্য ব্যয় করার কথা ঘোষণা করত, তা হলে অনেক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যেত। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বড়দিনের ছুটি বাতিল করে আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠকে যোগ দেন সনিয়া গাঁধী। পরে দলের শীর্ষ সূত্রে বলা হয়, মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য ধারাবাহিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সেই পথেই সরকারের ওপর আস্থা ফেরানোর চেষ্টা হবে। যে কাজ বস্তুত গত কাল থেকেই শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

দিল্লিতে বিক্ষোভ চলল মঙ্গলবারেও। তারই খণ্ডচিত্র।
এ দিন কোর গ্রুপের বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম সে কথাই মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, “বিচারবিভাগীয় কমিশন থেকে শুরু করে সব কর্তৃপক্ষকে সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।”
শান্তি বজায় রাখার ব্যাপারে ফের আবেদন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। আজও তিনি জানান, ধর্ষণের ঘটনায় মানুষের ক্ষোভ প্রকাশ স্বাভাবিক। কিন্তু হিংসা কখনওই সমাধানের রাস্তা হতে পারে না।

ছবি: রয়টার্স, এএফপি, পিটিআই


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.