ধর্ষণ-কাণ্ডে উত্তাল রাজধানীতে মহিলাদের সুরক্ষায় নতুন হেল্পলাইন চালু করেছে দিল্লি পুলিশ। মহিলাদের জন্য এই পরিষেবা মাস দু’য়েক আগেই চালু হয়ে গিয়েছে কলকাতায়। কিন্তু প্রচারের অভাবে তার উদ্দেশ্যই এখন ভেস্তে যাওয়ার মুখে। কারণ, লালবাজারে ঘটা করে চালু হওয়া ওই ফোন নম্বরগুলির কথা জানেন না কলকাতার অধিকাংশ মহিলাই।
আচমকা বিপদে পড়লে তাই ‘১০০’ নম্বরে ফোনই ভরসা সার্ভে পার্কের শ্রী ঘোষাল, বেহালার মৌসুমী সেন বা ঢাকুরিয়ার রিয়া গঙ্গোপাধ্যায়ের। তাঁদের মতো অনেকেরই বক্তব্য, ‘‘কোথাও চোখে পড়ার মতো বিজ্ঞাপন না-দিলে ওই নম্বরের কথা জানব কী ভাবে?”
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ অবশ্য প্রচারে খামতির অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “ওই হেল্পলাইনগুলির সম্পর্কে টিভি ও রেডিওয় আগে যথেষ্ট প্রচার করা হয়েছে। তবে নাগরিকদের প্রয়োজনে ফের নতুন ভাবে প্রচার করা যেতে পারে।” গত অক্টোবরের শুরুর দিকে লালবাজারে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ‘উইমেন ইন ডিস্ট্রেস’ এবং ‘আস্ক’ নামে মহিলাদের দু’টি হেল্পলাইন চালু করেছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা। শহরের কোথাও বিপদে পড়লে কোনও মহিলা ‘উইমেন ইন ডিস্ট্রেস’ হেল্পলাইন ‘১০৯১’ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ দ্রুত সেখানে পৌঁছবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। মোবাইলে অশ্লীল এসএমএস, এমএমএস-এর বিষয়ে জানাতে ‘আস্ক’ হেল্পলাইনের ৮০১৭১০০১০০ নম্বরে ফোন করার কথাও বলা হয়েছিল। লালবাজারের খবর, দু’টি হেল্পলাইনের একটি (১০৯১) রয়েছে গোয়েন্দা বিভাগের উইমেন’স্ গ্রিভান্স সেলের অফিসে। অন্যটি সাইবার থানায়।
২৪ ঘণ্টার ওই দু’টি হেল্পলাইন চালু তার পর থেকেই। কিন্তু দু’মাস পেরিয়ে গেলেও সে কথা জানেন না সার্ভে পার্কের শ্রী ঘোষাল। বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ওই তরুণীর কথায়, “রাস্তাঘাট বা মেট্রোয় কোথাও ওই নম্বরগুলো দেখিনি। হঠাৎ বিপদে পড়লে তাই ১০০ নম্বরেই ফোন করব।” একই কথা বললেও বেহালার বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষিকা মৌসুমী সেনের বক্তব্য, “আমাদেরও একটু সচেতন হতে হবে। তবে হেল্পলাইনের নম্বরগুলো রাস্তায় চোখে পড়ার মতো জায়গায় লিখে দিলে ভাল হয়।” লালবাজারের এক কর্তা বললেন, “১০০ নম্বরে যে কেউই ফোন করতে পারেন। তবে মহিলাদের সুরক্ষায় আরও বেশি তৎপর হতেই ওই নতুন হেল্পলাইনগুলি চালু হয়েছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতার মহিলাদের জন্য চালু ওই দু’টি হেল্পলাইনে এ শহরের লোকেদের ফোন কম যায়। দিনে ‘উইমেন ইন ডিস্ট্রেস’ হেল্পলাইনে যায় ২০-২৫টি ফোন। ‘আস্ক’-এ পঁচাত্তরের কাছাকাছি। তবে অর্ধেকের বেশি ফোনই আসে রাজ্যের অন্যান্য জেলা, এমনকী দিল্লি, অসম, ঝাড়খণ্ডের মতো পড়শি রাজ্য থেকেই। মোবাইলে অশ্লীল মেসেজ পাঠানোর অভিযোগে যে হেল্পলাইন, সেখানে যায় পারিবারিক অশান্তি, বধূ নির্যাতনের মতো অভিযোগ। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, ওই নম্বরে যে কেউই ফোন করুন না কেন, তাঁকে যথাসাধ্য সাহায্যের চেষ্টা করা হয়। |