কনকনে হাওয়ায় শুরু হয়েছিল ক্রিসমাস ইভ। ঝলমলে আলোয় সাজানো পার্ক স্ট্রিট বা বো-ব্যারাকে তখন নানা রঙের পোশাকের বাহার। ছবিটা বদলে গেল রাত এগারোটার পর থেকেই। অন্য বছর যেখানে ভিড় সামলাতে নাজেহাল হয় পুলিশ, এ বার সেখানেই যেন ভাঙা হাটের চেহারা।
দিল্লির ধর্ষণ-কাণ্ডের পরে কলকাতায় রাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাত আটটা থেকেই পথে ছিল দ্বিগুণের বেশি পুলিশ। কিন্তু তাতেও ভরসা পেলেন না সাধারণ মানুষ। আগেভাগেই উদ্যাপন সেরে ঢুকে পড়লেন বাড়িতে। ক্রিসমাস ইভ-এ ভিড়ে ঠাসা কলকাতার চেনা ছবিটা তাই দেখা গেল না সোমবার রাতে। ১১টার পরে তাই কার্যত ফাঁকা হয়ে গেল পার্ক স্ট্রিট-সহ রেস্তোরাঁ পাড়াগুলো।
সোমবার সন্ধ্যা থেকেই পার্ক স্ট্রিট-সহ রেস্তোরাঁ পাড়ায় জমেছিল ভিড়। রাত বাড়তেই ফাঁকা হতে শুরু করল সে সব ঠিকানা। রাত সাড়ে বারোটা-একটায় প্রায় ফাঁকা পার্ক স্ট্রিটও। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি দিল্লি আর পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের আতঙ্কেই এ বার তড়িঘড়ি ঘরমুখো মানুষ? একাংশের বক্তব্য, উৎসবের রাতে পুলিশি নিরাপত্তার আশ্বাস সত্ত্বেও ‘সাহসী’ হওয়ার ক্ষেত্রে সংশয় ছিল। তার উপরে যোগ হয়েছে কনকনে ঠান্ডাও। আর দুইয়ে মিলেই এ বার কিছুটা বেরঙিন ক্রিসমাস ইভের রাত। যদিও গত বছরের বড়দিন ছিল সাম্প্রতিক কালের শীতলতম। তাই শীতের জন্য তড়িঘড়ি বাড়ি ফেরার যুক্তিটা মানছেন না অনেকেই। |
রাত দু’টোর আগেই সুনসান পার্ক স্ট্রিট। ক্রিসমাস ইভে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক |
প্রতিবারের মতোই মধ্যরাতের প্রার্থনায় যোগ দিতে সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রাল-সহ বিভিন্ন গির্জায় হাজির হন বহু মানুষ। যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়ান। প্রার্থনায় যোগ দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তাঁরা। অভিঋ
ষি দে নামে একটি শিশু মুখ্যমন্ত্রীকে চকোলেট উপহার দেয়। মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা ফিরিয়ে দেন তাকেই।
মাঝরাতের প্রার্থনা শেষেই দেখা গেল ঘরে ফেরার উদ্যোগ। যা কিন্তু দৃশ্যতই অন্য বারের চেয়ে আলাদা। পুলিশের একাংশই বলছে, প্রতি বার প্রার্থনা শেষে প্রচুর মানুষ ফিরে আসেন পার্ক স্ট্রিটে। হুল্লোড় চলে ভোর পর্যন্ত। কিন্তু এ বার তড়িঘড়ি শেষ হয়ে গেল ক্রিসমাস ইভ। সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রাল থেকে বেরোনো তিন তরুণী ট্যাক্সির জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁদের এক জন, স্মিতা মুখোপাধ্যায় বললেন, “রাস্তাঘাট ফাঁকা। পার্ক স্ট্রিটেও তেমন লোক নেই। পার্টিটা তাই তাড়াতাড়ি শেষ করলাম।”
তা হলে কি পুলিশি নিরাপত্তার প্রতি আশ্বাস নেই? ওই তরুণীদের বক্তব্য, “এ বার রাস্তায় অনেক বেশি পুলিশ। কিন্তু দক্ষিণ শহরতলিতে ফেরার পথে এমনটা থাকবে কি না, তা তো জানি না।” যদিও শহরের প্রান্তিক এলাকাগুলিতেও এ বার পুলিশি প্রহরা অনেক বেশি চোখে পড়েছে। রাত দেড়টায় তিলজলা-তপসিয়ার গলিতে সন্দেহজনক গাড়ি-মোটরবাইক থামিয়ে তল্লাশি চলেছে। মাঝরাতে শুনশান ছিল ট্যাংরার চিনে পাড়াও। রাত একটায় দেখা গেল, সব ক’টি রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাস্তায় তখনও ঘুরছেন জনা কয়েক পুলিশকর্মী।
তা সত্ত্বেও ভিড় জমল না কেন?
দমদমের বাসিন্দা রাজীব মিত্র বলেন, “গত বছর স্ত্রীকে নিয়ে পার্ক স্ট্রিটে বেড়াতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের আশঙ্কা ছিল।”
কেন? রাজীববাবুর কথায়, “পার্ক স্ট্রিট বা শহরে পুলিশ থাকবে। কিন্তু শহরতলিতে ফেরার সময়ে বিপদে পড়লে সাহায্য করবে কে?”
পুলিশের হিসেবে, সোমবার রাতে পার্ক স্ট্রিটে হাজার তিরিশেক মানুষের জমায়েত হয়েছিল। অন্যান্য বার যেখানে সংখ্যাটা সাধারণত পঞ্চাশ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তা হলে কি উৎসবের রাতেও নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্ক কাটল না মানুষের? এক পুলিশকর্তার ব্যাখ্যা, এ বার বড়দিনের উৎসব এক সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই অনেকেই আগেভাগে ঝলমলে পার্ক স্ট্রিট দেখে গিয়েছেন। আর যাঁরা এসেছিলেন, জাঁকিয়ে শীতের কারণে তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরে গিয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যেই অবশ্য ক্রিসমাস ইভে গ্রেফতার হয়েছেন মোট ১১০ জন। যার মধ্যে তিন জনের বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। |