ট্যাক্সিচালক দুর্ব্যবহার বা অপরাধ করল। আপনি হয়তো ট্যাক্সির নম্বর নিয়েও রাখলেন। তবে তাতে যে সব সময়ে কাজ হবেই, এমন গ্যারান্টি নেই। এমনকী ওই নম্বর আসল হলেও না। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ দেখছে, যার নামে ট্যাক্সির রেজিস্ট্রেশন, সেই মালিকের ঠিকানাই অসম্পূর্ণ কিংবা ভুয়ো।
কলকাতার রাস্তায় যা0ত্রীদের, বিশেষত মহিলা যাত্রীদের সঙ্গে এক শ্রেণির ট্যাক্সিচালকদের দুর্ব্যবহার ও অপরাধ যখন উত্তরোত্তর বাড়ছে, তখন ট্যাক্সি-মালিকের হদিস পেতে অনেক সময়েই নাজেহাল হতে হচ্ছে পুলিশকে। পুলিশের হিসেবে, এখন কলকাতায় বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার ট্যাক্সি চলে। তার মধ্যে এই ধরনের ট্যাক্সির সংখ্যা কত, তার হিসেব পরিবহণ দফতরের কাছে নেই। তবে ওই দফতরের এক কর্তার হিসেব, সংখ্যাটা হাজারের বেশি। যে-সব ক্ষেত্রে মালিকের ঠিকানা ভুয়ো কিংবা অসম্পূর্ণ, সেই সব ট্যাক্সিকে চিহ্নিত করে তথ্য সংশোধনের প্রক্রিয়া পরিবহণ দফতর এখনও শুরু করেনি।
ট্যাক্সি-মালিকের নাম-ঠিকানায় কী ধরনের অসম্পূর্ণতা আছে?
পরিবহণ দফতরের নথিতে দেখা যাচ্ছে, কোনও কোনও ট্যাক্সি-মালিকের ঠিকানায় জায়গা বা রাস্তার নাম থাকলেও পিনকোড নেই। কখনও বা ইংরেজি বর্ণমালার একটি মাত্র অক্ষর দিয়ে রাস্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক সময়েই দেখা যাচ্ছে, ওই ঠিকানার কোনও অস্তিত্বই নেই। |
এক মহিলা শনিবার রাতে লেক থানায় এক ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে তাঁকে হত্যার চেষ্টা এবং অভব্য আচরণের অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু ট্যাক্সির রেজিস্ট্রেশন নম্বর পেয়ে পরিবহণ দফতরের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, মালিকের ঠিকানা অস্পষ্ট ও অসম্পূর্ণ। ঠিকানায় পিনকোড দেওয়া নেই। অগত্যা ট্রাফিক পুলিশ ওই নম্বরটি জানিয়ে সব থানা ও ট্রাফিক গার্ডকে সতর্ক করে দিয়েছে। ট্যাক্সিটি ধরা না-পড়লে চালকের হদিসই পাবে না পুলিশ।
নথিতে দেখা যাচ্ছে, ওই ট্যাক্সির ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’-এর মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়ে গিয়েছে। তার পরেও ওই শংসাপত্রের পুনর্নবীকরণ ছাড়াই ট্যাক্সিটি দিব্যি চলছিল শহরের রাস্তায়। এই ধরনের গাড়ি ধরে বাজেয়াপ্ত করার কথা পুলিশেরই। ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “আমরা বেআইনি ট্যাক্সির বিরুদ্ধে দিনে-রাতে বিশেষ অভিযান চালাই। কোনও ট্যাক্সির কাগজপত্রে গোলমাল থাকলেই ব্যবস্থা নিই।” কিন্তু ওই ট্যাক্সিটি যে প্রায় ছ’মাস ধরে বেআইনি ভাবে চলছে, সেটা আগাম জানার কোনও উপায় নেই পুলিশের। কারণ, এ ক্ষেত্রে পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের মধ্যে কোনও সমন্বয়ই নেই।
এই ধরনের গাড়ির বিরুদ্ধে পরিবহণ দফতর কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?
পরিবহণসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা বলেন, “আমরা এখন নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন বুক বা স্মার্ট কার্ড ডাকযোগে মালিকের ঠিকানায় পাঠাচ্ছি। ঠিকানা ভুয়ো বা অসম্পূর্ণ হলে সেই নথি মালিকের কাছে পৌঁছবেই না। সেই সঙ্গে আমরা এই ব্যাপারে আরও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
কিন্তু এই ধরনের পুরনো গাড়িগুলির ক্ষেত্রে কী হবে?
কলকাতায় বেলতলা ও আলিপুরে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন বা নথিভুক্তি করানো হয়। বেলতলায় নথিভুক্তি ট্যাক্সির সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি বলে পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর। আলিপুরে নথিভুক্ত ট্যাক্সির সংখ্যা সেই তুলনায় অনেক কম। বেলতলা মোটরযান দফতরের কর্তাদের দাবি, তাঁদের অফিসে ট্যাক্সির রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কোনও তথ্য অসম্পূর্ণ নেই এবং সব তথ্যই কম্পিউটারে তোলা আছে। কিন্তু সেই সব তথ্যের কোনটি আসল আর কোনটি ভুয়ো, সেটা বেলতলার অফিসারেরা জানেন না বলে জানাচ্ছে খাস মহাকরণই।
আলিপুর মোটরযান দফতরের কর্তারাই মানছেন, ২০০৪-এর আগে তাঁদের কাছে নথিভুক্ত ট্যাক্সির নথি অসম্পূর্ণ। নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ঠিকানা অসম্পূর্ণ থাকলে কম্পিউটারচালিত ব্যবস্থা সেটি গ্রহণই করবে না। আলিপুরের কর্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ বার থেকে যাঁরা গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট পুনর্নবীকরণের আবেদন নিয়ে আসবেন, তাঁদের সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখে নতুন করে শংসাপত্র দেওয়া হবে। |