মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, কাজ করার টাকাই নেই। আর তাঁর সরকারই কি না উন্নয়নের টাকার রং বিচার করছে! ফরওয়ার্ড ব্লকের সাংসদ বরুণ মুখোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা এবং অভিযোগ অন্তত এমনই।
রাজ্যসভার সাংসদ বরুণবাবু এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় দক্ষিণ কলকাতায় কিছু প্রকল্পের জন্য আবেদন জমা দিয়েছিলেন বছরখানেকেরও বেশি আগে। প্রকল্প মঞ্জুরই হয়নি। নিয়ম হল, সাংসদের প্রস্তাব মঞ্জুর না হলে ৪৫ দিনের মধ্যে জানাতে হয়, কিংবা ৭৫ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করতে হয়। দু’টোর কোওটাই না হওয়ায় বিধিভঙ্গের
|
বরুণ মুখোপাধ্যায় |
অভিযোগ তুলেছেন বরুণবাবু। বিস্মিত, ক্ষুব্ধ সাংসদ শেষ পর্যন্ত কলকাতা পুরসভায় গিয়ে নিজের প্যাডে লিখিত ভাবে জানিয়ে এসেছেন, তাঁর ওই তহবিলের সব টাকা যেন উন্নয়নের কাজে খরচ করে ফেলা হয়। নিজের আবেদন করা প্রকল্প এগোচ্ছে না দেখে পুরসভার দেওয়া প্রস্তাবেও শেষমেশ সায় দিয়েছেন বর্ষীয়ান এই সাংসদ। তেমন দু’টি প্রকল্পে তাঁর তহবিল থেকে প্রয়োজন মতো টাকাও মঞ্জুর হয়েছে বলে পুরসভার একটি সূত্র জানিয়েছে। তবু গোটা ঘটনায় বরুণবাবুর ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে চেতলার বাসিন্দা পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের উপরে।
বরুণবাবুও থাকেন চেতলায়। চেতলা সেন্ট্রাল রোডে বাসস্ট্যান্ডের ছাউনি করতে চেয়েছিলেন তিনি। যুগ্ম পুর-কমিশনারের (উন্নয়ন)-এর কাছে এ নিয়ে চিঠি জমা পড়েছিল ২০১১-র ১২ সেপ্টেম্বর। এসএসকেএমে রোগীদের স্বজনদের জন্য যাত্রিনিবাস গড়ার প্রস্তাবও দেন গত বছর। তাতে সাড়া না মেলায় ওই হাসপাতালেই এইমস-এর ধাঁচে মেডিক্যাল উপকরণের বিপণি তৈরিতে টাকা দিতে চেয়েছিলেন। জবাব মেলেনি তারও! সরকারি নথিতে আবেদনগুলির জন্য ‘ফান্ডস নট বুক্ড’ দেখানো হয়েছে। ঘটনাচক্রে, ফিরহাদই এসএসকেএমের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান। ক্ষুব্ধ, বিস্মিত বরুণবাবুর মন্তব্য, “চেতলা এলাকায় বামপন্থী কারও নামে কোনও কাজের ফলক, হোর্ডিং এ সব থাকবে না! চেতলার প্রভুর কাছ থেকে পুরসভা বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবুজ সঙ্কেত পাননি। তাই তাঁরা পিছিয়ে গিয়েছেন!”
এমন অভিযোগে অবশ্যই বিড়ম্বিত পুরমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “এমন হওয়ার কথা নয়। বরুণদা চাইলে আমার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আমিও কথা বলার চেষ্টা করব।” পুরমন্ত্রী আরও বলেন, “বরুণদার সঙ্গে হার্দিক সম্পর্ক। দেখা হলে কথা হয়। উনি প্রথম বার সাংসদ হওয়ার পরে আমি বাড়ি গিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে আসি।” এলাকার বিধায়ক হিসাবে তিনিই উন্নয়নের কাজ করবেন, বাম সাংসদ সুযোগ পাবেন না এমন অভিপ্রায় তাঁর নেই বলেই বোঝাতে চেয়েছেন ফিরহাদ।
বরুণবাবু জানাচ্ছেন, নিজের প্রস্তাবিত প্রকল্পে সায় না মেলায় তিনি এসএসকেএমে স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ কিনতে দেড় কোটি এবং পুরসভার আওতায় রাস্তার কুকুরের নির্বীজকরণের জন্য ল্যাপারোস্কোপ সেট-সহ সরঞ্জাম কিনতে ২০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন সাংসদ তহবিল থেকে। তবে জনপ্রতিনিধিরা সচরাচর এমন প্রকল্পে ব্যয় করতে উৎসাহী হন, যা ভোটারদের চোখে পড়ে। বরুণবাবুর আবেদনগুলি ছিল সেই রকমই। ফব সূত্রের খবর, এর আগে ফিরহাদের আবেদনে সাড়া দিয়েই বরুণবাবু চেতলা গার্লস স্কুলের জন্য তহবিলের টাকা দিয়েছিলেন। পরে ওই স্কুলে গিয়ে দেখেন, তাঁকে ছাড়াই ফলক বসে গিয়েছে। জমেছে ধুলোও! বরুণবাবু বলছেন, “একটা নামী মিষ্টির দোকানের উল্টো দিকে বাসস্ট্যান্ডের ছাউনি করে দিতে চেয়েছিলাম। পরে আমাকে বলা হয়, ওই জায়গা ছেড়ে একই রাস্তায় অন্যত্র করতে হবে। আপত্তি করিনি। তাতেও কিছু হয়নি!”
বাস-ছাউনির প্রস্তাবিত জায়গাতেই পুরমন্ত্রীর নামে হোর্ডিং অবশ্য বরুণবাবুর চোখ এড়ায়নি! |