কাঁচামাল, দক্ষ কর্মীর অভাব নেই। তবুও বাম আমলে জলপাইগুড়ি জেলায় বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে তেমন বিনিয়োগ আসেনি। এখন তৃণমূল জমানায় আসছে না কেন? এই প্রশ্ন সামনে রেখেই চুলচেরা বিশ্লেষণ চলল জলপাইগুড়ির ষষ্ঠ বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনে। মঙ্গলবার ন্যাশনাল চেম্বার অব কর্মাস, নর্থ বেঙ্গলের উদ্যোগে আয়োজিত মেলায় উঠে এল অনেক সমস্যার কথা। কিছু তথ্য-পরিসংখ্যানও। সব কিছুকে ছাপিয়ে উঠল যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা ও এক লপ্তে জমি মেলার সমস্যাক বিষয়টি তুললেন মেলার উদ্যোক্তারা। যেমন, মেলার যুগ্ম সম্পাদক অভিজিৎ মিত্র বলেন, “বৃহৎ অথবা মাঝারি শিল্প সংস্থা এসেই বড় জমির খোঁজ করে। এক লপ্তে জমি না পেলে সমস্যা হবেই।”
জলপাইগুড়িতে শিল্প গড়তে দীর্ঘদিন বিনিয়োগ টানতে বামেদের ব্যর্থতার প্রশ্নে সরব হয়েছেন মেলার উদ্বোধক উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গের মত জলপাইগুড়ি জেলাও স্বাধীনতার পর থেকে শিল্প ক্ষেত্রে পিছোতে শুরু করে। রাজ্য সরকার উত্তরবঙ্গের জন্য পৃথক দফতর গড়ে উন্নয়নের চেষ্টা করছে। জলপাইগুড়ির প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে জেলায় শিল্প টানার চেষ্টা চলছে।” |
আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় জানান, আগে শিল্প না এলেও এখন যে সকলে তা নিয়ে উদ্যোগী সেটাই আশার আলো দেখাচ্ছে। ঘটনাচক্রে, ওই অনুষ্ঠানেই ময়নাগুড়ির আরএসপি বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারীও কবুল করেন, “সত্যিই এখানে বেশ কয়েকটি বড় শিল্প সংস্থা থাকলে ভাল হত।” উদ্যোক্তা সংগঠনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে একটি বহুজাতিক পানীয় সংস্থার বটলিং প্ল্যান্ট এবং পরে বেশ কয়েকটি গবাদি পশুর খাদ্য প্রস্তুতকারী সংস্থার কারখানা হয়েছে। এর পরে তেমন কোনও বিনিয়োগ জলপাইগুড়িতে হয়নি। অথচ বণিক সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, জেলার রাজগঞ্জ থেকে ধূপগুড়ি পর্যন্ত ফল প্রক্রিয়াকরণ, ধূপগুড়িতে খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ, মালবাজার, আলিপুরদুয়ারে পর্যটনে বড় সংস্থার লগ্নি করতে আগ্রহী অনেক বড় সংস্থাই। উদ্যোক্তারা এটাই জানান, ফি বছর মেলায় গুজরাত, রাজস্থান, হরিয়ানা থেকে একাধিক সংস্থা অংশ নেয়। অথচ জমি কোথায় মিলবে সেই প্রশ্নেই আগ্রহীরা হোঁচট খান বলে বণিক সংগঠনের দাবি। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ি জেলার ল্যান্ডব্যাঙ্কে প্রায় ২ হাজার একর জমি রয়েছে। সেখানে এক লপ্তে পাওয়া বড় জোর ৬০ একর জমি মিলতে পারে। অথচ জেলায় সরকারি ‘ফাঁকা’ জমির পরিমাণ অন্তত ৬ হাজার একর। ওই জমির কোথাও কেউ এক মরসুম চাষ করেন। আবার কোথাও বসতি রয়েছে। এই প্রসঙ্গে মেলার উদ্যোক্তা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সমরেন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “এ বার উত্তরবঙ্গ তথা জলপাইগুড়ির জেলার শিল্প টানতে এতদিনের যাবতীয় উদ্যোগের একটি মূল্যায়ণ দরকার। জটিলতা কাটানোর রাস্তা খোঁজাও জরুরি।” |