পৌষমেলা মেলা দেখে আপ্লুত তো বটেই, তবে তাঁরা আরও বেশি খুশি হয়েছেন সেখানে লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে বিহু নাচ দেখাতে পেরে। বীরভূম সফরে এসে এ ভাবেই অসমের বঙ্গাইগাঁওয়ের রেনবো যুব ক্লাবের বারো সদস্য মিশে গেলেন স্থানীয় লোকসংস্কৃতির সঙ্গে। শুধু মিশে যাওয়াই নয়, তাঁদের বিহু নাচ যেমন এখানকার লোকেদের শেখালেন, তাঁরাও শিখলেন নবান্নের লোকনৃত্য।
অসমের দলটির ভূপেন রাই, দ্রৌপদী রাই-রা বললেন, “আমাদের ওখানেও নবান্ন উৎসব হয়। পরের বারের নবান্নে এখান থেকে শেখা নাচটাই আমরা নাচতে চাই!” তাঁরা জানালেন, নিজেদের এলাকায় স্বনির্ভর দল গঠন ও গ্রামোন্নয়নের সঙ্গে গভীর ভাবে যুক্ত। তাই এমন কাজ বীরভূমে কেমন চলছে তা দেখতে চান তাঁরা। সেই সুযোগও করে দেয় ‘নেহরু যুব কেন্দ্র অসম’ ও বীরভূমের ‘যুব ও সাংস্কৃতিক সংস্থা’। গত ২১ ডিসেম্বর লাভপুরে পৌঁছয় অসমের ওই দলটি। তাঁদের থাকা-খাওয়া ও বীরভূমের নানা জায়গা ঘোরানোর দায়িত্ব নেয় একটি স্থানীয় সংস্কৃতি সংগঠন বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী।
গত সোমবার বীরভূমের সংস্কৃতি বাহিনী তাঁদের নিয়ে লাভপুরের ভালাস পঞ্চায়েতে যায়। সেখানে স্বনির্ভর দল, ফার্মাস ক্লাব, পঞ্চায়েতের প্রত্যেকের কাছ থেকে খুঁটিনাটি জেনে নেন তাঁরা। বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনীর সম্পাদক উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় জানালেন, প্রতি দিন বিকালে খোলা মাঠে অসমের দলটিকে নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানই দুই দলের সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের মাধ্যম। |
অসমের দলটির কাছে বিহু নাচের তালিম নিয়ে দৃশ্যতই উচ্ছ্বসিত বীরভূমের দলটি। উজ্জ্বলবাবু, “আজকের দিনে এমন সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন খুবই জরুরি। এর ফলে বহু অজানা জিনিস আমরা যেমন শিখে নিতে পারি, তেমনই বাইরের দুনিয়াকেও জানাতে পারি আমাদেরও অনেক কিছু শেখানোর আছে।”পৌষ মেলায় ভূপেন-দ্রৌপদীরা পেয়েছিলেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহকেও। তাঁরা মন্ত্রীর কাছে কৌতূহলে জানতে চান, কী ভাবে উন্নত প্রথায় মাছ চাষ করা যায়। দফতরের নতুন মন্ত্রী অবশ্য সবিনয়ে কলকাতায় তাঁর দফতরে আসতে বলেছেন দলটিকে। মেলায় ঘোরার পর তাঁরা পৌঁছন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মিরিটির বসতবাড়িতে। মিরিটিতে এলে দোতলার একটি ছোট্ট ঘরেই যে রাষ্ট্রপতি থাকেন তা শুনে রীতিমতো অবাক অসমের ওই দল! দলের সদস্যেরা উজ্জ্বলবাবুদের কাছ থেকে বেশ কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলেন। তবে তাঁদের সব থেকে বেশি মনে ধরেছে ‘পুরানো সেই দিনের কথা’। নিজেরাও রপ্ত করার চেষ্টা করেছেন সেই গানটি। গানটি কেন এত পছন্দ হল? ওই দলের আর এক প্রতিনিধি কৌশিলা ফৌজদার বলেন, “২৭ ডিসেম্বর আমরা এখান থেকে চলে যাব। আমাদের মনে থাকবে এখানকার মানুষের আথিতেয়তা, আন্তরিকতা। যাওয়ার সময় সবাই মিলে গাইব পুরানো সেই দিনের কথা...।” |