এক বার কারও কোলে উঠলে নামতে চাইছে না। ‘মা, মা’ করে কেঁদেও উঠছে মাঝে-মধ্যে। তবে আগের থেকে স্বাস্থ্যের অনেকটাই উন্নতি হয়েছে ঝোপ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া তিন বছরের শিশুটির। মঙ্গলবার সে দুধ, কেক, পাঁউরুটিও খেয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে তার নাম-পরিচয় এখনও মেলেনি।
সোমবার সকালে কাটোয়া শহর থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে গোয়াই লেভেল ক্রসিংয়ের কাছে শিশুটিকে উদ্ধার করেন স্থানীয় কুলডাঙা গ্রামের বধূ সোহাগি দাস। তিনিই রাতে কাটোয়া থানায় অভিযোগ করেন, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। পরে ডাক্তারি পরীক্ষাতেও তার প্রমাণ মিলেছে। মঙ্গলবার সিআইডি-র একটি দল কাটোয়ায় এসে পুলিশ ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “আমরা অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছি। কোনও অভিভাবকও খোঁজ করেননি। আমাদের প্রাথমিক অনুমান, অভিভাবকেরা শিশুটিকে ফেলে রেখে গিয়েছে। তার পরেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।”
সোমবার দুপুরেই ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় শিশুটির জামা-প্যান্ট, সোয়েটার, টুপি, হাতমোজা, জুতো। কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে খবর পেয়ে কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের নেতা মহম্মদ সোহরাব রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান।
জেলা পুলিশের এক কর্তা এ দিন বলেন, “ডিজি-র নির্দেশে সিআইডি-র দলটি সোমবার রাতে কাটোয়ায় আসে। তারা মঙ্গলবার ভোরে এসডিপিও-র সঙ্গে ঘটনাস্থলে যায়। মহকুমা হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে কথা বলো। শিশুটির সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করে।” চার সদস্যের দলটির নেতৃত্বে ছিলেন সিআইডি-র ডিএসপি কাজি জাহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “কাটোয়ার পুলিশই ঘটনার তদন্ত করবে। আমরা শুধু বিষয়টির খোঁজ নিয়ে গেলাম।” মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশকে দেওয়া মেডিক্যাল রিপোর্টে কাটোয়া হাসপাতালের সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, এ দিন দুপুরে শিশুটি দুধ, কেক, পাঁউরুটি খেয়েছে। তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাস জানান, শিশুটিকে পাহারা দেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টাই সাদা পোশাকের মহিলা পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে গোয়াই গ্রামের এক যুবক জানান, রবিবার সন্ধ্যায় কাটোয়ার স্টেশন বাজার চৌরাস্তায় এক দম্পতিকে তিন বছরের মেয়ে হারিয়ে গিয়েছে বলে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। পুলিশ জানতে পারে, তাঁরা মুর্শিদাবাদের রানিনগরের বাজারসৌয়ের বাসিন্দা। কিন্তু পরে এলাকায় খোঁজ নিলেও তাদের আর কোনও খোঁজ পায়নি পুলিশ। এ ছাড়া কাটোয়া লাগোয়া ইটভাটাগুলিতেও কারও শিশু হারিয়েছে কি না, সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ। এ দিন বিকেলে প্রদেশ মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী কবিতা রহমান হাসপাতালে গিয়ে শিশুটিকে দেখেন। পরে তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ নেন সুপারের কাছে। নেত্রীর অভিযোগ, “এখনও পুলিশ শিশুটির পরিচয় জানতে পারল না, এটা লজ্জার।” সকালে শিশুটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা আয়া বৃন্দা ডোম বলেন, “ও শুধুই কাঁদছে। আমাকে ছাড়তে চাইছে না।” পুলিশের ধারণা, শিশুটি আরও সুস্থ হলে কিছু সূত্র মিলতে পারে। |