মালগাড়ির বেশ কয়েকটি কামরা লাইনচ্যুত হওয়ায় ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হল হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইনে। মঙ্গলবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটে বর্ধমানের দেবীপুর ও বৈঁচি স্টেশনের মাঝে। ফলে, বেশ কয়েকটি লোকাল ও দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করা হয়। হাওড়া-বর্ধমান কর্ড ও ব্যান্ডেল-কাটোয়া-আজিমগঞ্জ দিয়ে অনেক দূরপাল্লার ট্রেন ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাত পর্যন্ত ওই লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান পূর্ব রেলের কর্তারা।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়লা বোঝাই মালগাড়িটি আসানসোল থেকে ব্যান্ডেল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাচ্ছিল। এ দিন দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ দেবীপুর স্টেশনের কাছে লেভেল ক্রসিং পেরনোর পরেই সেটির গোটা তেরো কামরা লাইনচ্যুত হয়। আপ লাইনের প্রায় ১৫০ মিটার ও ডাউন লাইনের প্রায় ২০০ মিটার ভেঙে যায়। ছিঁড়ে যায় ওভারেহেড তার। দু’টি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যায়। প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে চোট পান মালগাড়ির গার্ড রাম পারভেজ। তাঁকে প্রথমে বর্ধমান রেল হাসপাতাল, সেখান থেকে হাওড়া অর্থোপেডিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। |
ঘটনার পরে দেরিতে হলেও হাওড়া থেকে ব্যান্ডেল পর্যন্ত ট্রেন চলেছে। কিন্তু ব্যান্ডেল-বর্ধমান মেন লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে দুপুর থেকে হাওড়া মেন ও কর্ড শাখায় ট্রেন চলাচলে দেরি হওয়ায় যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। বিপাকে পড়েন শিয়ালদহ থেকে ছাড়া অনেক দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীও। শিয়ালদহ থেকে যে সব ট্রেন নৈহাটি-ব্যান্ডেল হয়ে যায়, সেগুলি দমদম-ডানকুনি হয়ে কর্ড লাইনে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
পূর্ব রেল সূত্রে খবর, এই ঘটনার জেরে বাতিল হয়েছে শিয়ালদহ-আসানসোল ইন্টারসিটি, শিয়ালদহ-রামপুরহাট, কলকাতা-মজফ্ফরপুর, লালকিলা এক্সপ্রেস, হাওড়া-দিল্লি জনতা এক্সপ্রেস, হাওড়া-মালদহ এক্সপ্রেস-সহ আরও ৬টি এক্সপ্রেস ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন। সন্ধ্যায় হাওড়া থেকে বৈঁচি এবং বর্ধমান থেকে মেমারি পর্যন্ত ট্রেন চালানো হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দেবীপুরের বাসিন্দা মহম্মদ মুস্তাফা, তাপসী বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপন রায় বলেন, “হঠাৎ বিকট শব্দ। তার পরেই দেখি, মালগাড়ির অনেকগুলি কামরা লাইন থেকে ছিটকে পড়েছে।”
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় রেলের উদ্ধারকারী দল ও রিলিফ ট্রেন। রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, কামরাগুলি খুব এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকায় কাজ শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়। দু’টি ক্রেন নিয়ে গিয়ে কামরাগুলি লাইন থেকে তুলে পাশে সরিয়ে রাখার কাজ চলছে। বর্ধমানের স্টেশন ম্যানেজার অসীমকুমার রায়ের মতে, “যে ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে তাতে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে অন্তত ১২ ঘণ্টা লাগবে।”
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে রেল কর্তৃপক্ষ কিছু জানাতে পারেননি। দিন কয়েক আগেই বর্ধমানের অন্ডালে একটি মালগাড়ির চারটি কামরা লাইনচ্যুত হয়েছিল। কেন বারবার এই লাইনে দুর্ঘটনা ঘটছে, তা আলাদা ভাবে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। রেলের একটি সূত্রের খবর, মালগাড়িতে নির্দিষ্ট ওজন বহনের অনুমোদন থাকে। তার চেয়ে বেশি মাল চাপানোয় দুর্ঘটনা ঘটছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। |