পথে রাখতে হবে পরিচয়পত্র
নিয়ম আছে, প্রচার না থাকায় দুর্গাপুরে ক্ষুব্ধ বহিরাগতেরা
হরে অপরাধ কমাতে বহিরাগতদের সচিত্র পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার নিয়ম করেছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। তার ফলে দুর্গাপুরে অপরাধের সংখ্যা খানিকটা কমেছে বলেও দাবি পুলিশের। কিন্তু উপযুক্ত প্রচার ছাড়া এই পরিচয়পত্র রাখার নিয়ম জারি হওয়ায় রাস্তায় বেরিয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন নানা কাজে শহরে আসা বেশ কিছু মানুষজন। পুলিশ অবশ্য প্রচারের অভাবের কথা মানেনি। তবে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব।
দুর্গাপুর শহরে গত কয়েক মাসে বেশ কিছু মোটরবাইক চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রাজমিস্ত্রি, নির্মাণ শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, সাফাই কর্মীর কাজের ছলে সদ্য শহরে আসা কিছু লোকজন। শহরে এসে তারা তথ্য সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দেয় দুষ্কৃতীদের কাছে। দুষ্কর্মের পরে এই বহিরাগতেরা সহজেই গা-ঢাকা দিতে পারে। কারণ, তাদের সম্পর্কে কোনও তথ্য পুলিশের হাতে থাকে না। যেখানে কাজ করতে আসে তারা, সেখানেও ঠিক নাম-ঠিকানা দেয় না। ফলে এই অপরাধীদের খুঁজে বের করতে পুলিশ সমস্যায় পড়ে। সে কারণে পুজোর আগে পুলিশ সিদ্ধান্ত নেয়, কাজের সুবাদে শহরে আসা সমস্ত বহিরাগতের সঙ্গে সচিত্র পরিচয়পত্র রাখার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক পুলিশের তরফে যোগাযোগ করা হয় সেই সব সংস্থার সঙ্গে যেখানে এই ধরনের বহিরাগতেরা কাজ করতে আসেন। পুলিশ একটি বিশেষ ধরনের ফর্ম তৈরি করে। তাতে স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, ফোন নম্বর, যে সংস্থায় কাজ করছে তার নাম, আধিকারিকের নাম ও মোবাইল নম্বর, পাসপোর্ট ছবি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। অনেকে সচিত্র পরিচয়পত্র তৈরিও করে ফেলেছেন। অনেকে আবার পুলিশের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানেনই না। তাঁরাই মূলত বিপাকে পড়ছেন।
সিটি সেন্টারের একটি গেস্ট হাউসের দুই অস্থায়ী কর্মীর অভিযোগ, পরিচয়পত্রের কথা জানা না থাকায় সম্প্রতি দু’বার তাঁরা হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁরা জানান, এক সন্ধ্যায় সিটিসেন্টারে রাস্তায় হাঁটছিলেন। পুলিশ তাঁদের ধরে ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ জেরা করে। কয়েক দিনের মধ্যে পরিচয়পত্র তৈরি করে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁরা ছাড়া পান। কিন্তু দু’দিন পরেই আবার রাস্তায় পুলিশ ধরে। তাঁদের অভিযোগ, দু’দিন আগের ঘটনার কথা জানানো হলেও পুলিশ শুনতে চায়নি। তাঁদের কলার ধরে সিটিসেন্টারে ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের বক্তব্য, “সচিত্র পরিচয়পত্রের বিষয়টি আমরা আগে জানতাম না। প্রথম বার পুলিশ ধরলে জানতে পারি। শীঘ্র তা তৈরি করে নেব বলেও জানাই। কিন্তু তার আগেই ফের আমাদের ধরে হেনস্থা করা হল।”
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ভবন নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থার এক কর্তারও অভিযোগ, “মাঝে মধ্যেই নির্মাণ শ্রমিকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আমি গিয়ে ছাড়িয়ে আনছি।” মাঝে মাঝে টাকাও চাওয়া হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। এই সচিত্র পরিচয়পত্র রাখার বিষয়টি ঠিক মতো প্রচার না হওয়ার কারণেই এমন সব সমস্যা হচ্ছে বলে তাঁদের দাবি। অনেক বহিরাগতের মতেই, শহরে দুষ্কর্ম কমাতে পুলিশের এমন উদ্যোগ অবশ্যই ভাল। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের কথা সকলে না জানায় বিপাকে পড়ছেন। পুজোর আগে কয়েক বার মাইকে জানানো ছাড়া এ নিয়ে কোনও প্রচার হয়নি বলে তাঁদের দাবি।
আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব অবশ্য জানান, মানুষকে হেনস্থা করা তাঁদের উদ্দেশ্য নয়। তিনি বলেন, “রাস্তায় বহিরাগতদের দেখলে তাঁর পরিচিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পুলিশ পরিচয়পত্র চাইছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে কেউ যেন অহেতুক বিড়ম্বনায় না পড়েন, সে ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক থাকবে।” তাঁর দাবি, অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যেই ফল মিলছে। মোটরবাইক চুরি এক ধাপে অনেকটাই কমেছে। কমেছে চুরি, ছিনতাইয়ের সংখ্যাও। প্রচারের অভাবে কথাও মানতে চাননি এডিসিপি (পূর্ব)। তাঁর দাবি, নতুন এই ব্যবস্থা চালু করার আগে মাইকে ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থাকেও জানানো হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.