নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল ও দুর্গাপুর |
ছুটির মেজাজে আলো-রঙের খেলা। সঙ্গে চুটিয়ে পিকনিক। মঙ্গলবার বড়দিনের উৎসবে সকাল থেকেই এ ভাবেই মাতল শিল্পাঞ্চল। আর ছোট থেকে বড়, সকলেই সমান ভাবে তাতে সামিল। আসানসোল থেকে দুর্গাপুর, গত দু’দিন জুড়ে উৎসবের ছবিটা ছিল একই রকম।
বস্তুত, সোমবার বিকেল থেকেই আসানসোল শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ছিল উৎসবের মেজাজ। এক দিন আগেই আলোর মালা, রঙিন কাগজ ও মরসুমি ফুলের বাহারে সেজে উঠেছিল শহরের সমস্ত গির্জা। গত তিনদিন ধরে শহরের তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে স্বাভাবিকের অনেক নীচে। পাল্লা দিয়ে রয়েছে উত্তুরে হাওয়াও। ঠান্ডার কামড় উপেক্ষা করেই উৎসবপ্রিয় বাঙালি বড়দিনের প্রাক সন্ধ্যাতেই নেমে পড়েছিলেন রাস্তায়। তাঁরা রাতভর পালন করেন যিশুখ্রিস্ট্রের জন্মদিন উৎসব। সোমবার রাত বারোটা বাজতেই আসানসোলের সবচেয়ে বড় গির্জাঘর হাটন রোড এলাকার সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল চার্চের বড় ঘণ্টাধ্বনি গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয়ে যায় প্রার্থনা। প্রার্থনায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি যোগ দিয়েছিলেন অন্য ধর্মের মানুষজনও। রাত গভীর হতেই ভিড় বাড়ে রাস্তায়। |
দুর্গাপুর সিটিসেন্টার এলাকার একটি পার্কে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
আর ছিলেন সান্তা। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ‘জিঙ্গল বেল’ হাতে, ঝোলা কাঁধে হেঁটে গিয়েছেন লাল জোব্বা পরা সান্তাক্লজ। ছোট শিশুর দেখা মিলতেই তাঁর ঝোলা থেকে বেরিয়েছে চকোলেট। হাতে তুলে দিয়ে প্রত্যেককে আশীর্বাদ করেছেন খোদ সান্তাবুড়ো!
মঙ্গলবার সারাদিনই উৎসবে মশগুল ছিল শিল্পাঞ্চল। শহরজুড়ে ভেসে উঠেছে বড়দিন উদযাপনের টুকরো মুহূর্ত। সকাল থেকেই চড়ুইভাতির আসর বসেছিল বিভিন্ন ভ্রমণকেন্দ্রে। কয়েক হাজার মানুষের ভিড় হয় বার্নপুরের নেহরু পার্কেই। পিকনিকের পাশাপাশি কচিকাচাদের লাগামছাড়া আনন্দে ভরে ওঠে পার্কের মাঠ। মিঠে কড়া রোদ গায়ে মেখে নানা প্রান্ত থেকে বহু মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন মাইথনেও। পাহাড়-জঙ্গল-নদী ঘেরা এই ভ্রমণকেন্দ্রটি ছুটির দিনে ভ্রমণ পিপাসু বাঙালিদের কাছে এমনিতেই খুবই প্রিয়। এ দিনও প্রকৃতির আনন্দ চেটেপুটে হজম করেছেন তাঁরা। এ ছাড়া চিত্তরঞ্জন হ্রদ অঞ্চল, আসানসোল শতাব্দী পার্ক সর্বত্রই ছিল এক চেহারা।
বড়দিনের উৎসবকে ঘিরে শহরের কোথাও যাতে কোনও আশান্তি না ছড়ায়, তা কঠোর ভাবে দেখতে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা রেখেছিল পুলিশ। প্রতিশ্রুতি মতো এ দিন ভ্রমণকেন্দ্রগুলিতেও ছিল সাদা পোশাকের পুলিশ। সব মিলিয়ে আসানসোল শিল্পাঞ্চলের মানুষ নিরাপদেই উপভোগ করেছেন দিনটি।
মঙ্গলবার প্রায় একই ছবি ছিল দুর্গাপুরেও। পার্ক থেকে দামোদরের চর সর্বত্রই বসেছিল পিকনিকের আসর। সিটি সেন্টারের পার্কটিতে সকাল থেকেই মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেন। ওই পার্কে বোটিংয়ের ব্যবস্থা আছে। আছে রোপওয়ে, বাচ্চাদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ টয় ট্রেনও। পাশেই আবার সিনেমা হল! কাজেই পার্কে সারাদিন কাটানোর পাশাপাশি সিনেমা দেখার সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন অনেকেই। ইস্পাতনগরীর মাঝে কুমারমঙ্গলম পার্কের ছবিটাও ছিল কতকটা এক। শহর ছাড়িয়ে পনেরো কিমি উত্তরেই নাচন পার্ক। ভিড় ছিল সেখানেও। বাদ যায়নি কাঁকসার দেউল পার্কও! দুর্গাপুর স্টেশন থেকে মাত্র চার কিমি দূরে দামোদর নদের উপরই ডিভিসি ব্যারাজ। পার্কগুলির পাশাপাশি বাসিন্দারা পিকনিকে মেতেছিলেন দামোদরের চরেও।
আসানসোলের মতো দুর্গাপুরেও উৎসব শুরু হয়েছিল আগের রাতেই। সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ যোগ দেন সিটি সেন্টার এলাকার চার্চে। দিন দু’য়েক আগে থেকেই সেটি আলোর মালায় সেজে উঠেছিল। সোমবার রাত থেকেই মোমবাতি জ্বেলে চার্চে প্রার্থনায় মেতেছিলেন মানুষ। শহরের শপিং মলগুলিতেও ভিড় ছিল দেখার মতো। উৎসব উপলক্ষে শহরের বাইরে থেকেও এসেছিলেন বহু মানুষ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখতে উপর সতর্ক নজর রেখেছিলেন পুলিশ কর্মীরাও।
এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব জানান, শহরের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং উৎসবে সাধারণ মানুষ যাতে কোনও সমস্যায় না পড়েন, তার জন্য বিশেষ বন্দোবস্ত রাখা হয়েছিল। তিনি জানান, দুর্গাপুর থানা এলাকায় বাড়তি ১২০ জন এবং কোকওভেন ও নিউটাউনশিপ থানা এলাকায় ৭০ জন করে পুলিশকর্মী রাখা হয়েছে। রাতেও বড়দিন উপলক্ষে বেশ কিছু হোটেল ও লজে পার্টির আয়োজন ছিল। উৎসবের সারা রাত পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থার আশ্বাস দেন এডিসিপি (পূর্ব)। আশ্বাসের সঙ্গে বাস্তবতার মিল কতটা থাকে, সেটাই এখন দেখার! |