তা রা বা জি
মস্তির প্রাণ, শীতের মাঠ
শিরশিরে হাওয়া। কনকনে ঠান্ডা। পারদ কিন্তু বাড়ছে।
গোলমেলে ঠেকছে? সমীকরণটা তো সহজ।
তাপমাত্রা যত পড়বে, ফুর্তির পারদ তত-ই ছড়বে। হচ্ছেও তেমনটাই। তবে ফুর্তির প্রাণ এখন আর গড়ের মাঠে সন্তুষ্ট নয় মোটেই। বলছে জেন ওয়াই।
দিনের বেলাটা যদিও বা মাঠ-ঘাটে আড্ডা দিয়ে বেড়ানো যেতে পারে, সূর্য ডোবা মাত্র কিন্তু চালু হয়ে যায় পার্টি-টাইম। হাইস্কুলের পড়ুয়া থেকে কলেজছাত্রী, আইটিকর্মী সকলেরই মত এক। বছরভর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বিদেশবাসী বন্ধুদের পার্টির ছবি দেখে দিন কাটে। কিন্তু সেই ‘কেয়ার করি না’ পার্টি মেজাজটা এ শহরে তোলা থাকে শুধু বছর শেষের কয়েকটা দিনের জন্য। থার্মোমিটারে মার্কারির লেভেলটা যত নামে, তত-ই জমে সেই মুডটা। তাই পড়ে পাওয়া এ কটা শীতের সন্ধ্যা মোটেই মাঠে মারা যেতে দেওয়া যায় না। চাই ফুলটুস মস্তি। নানা রঙের হাল্কা আলো, লাউড মিউজিক, উদ্দাম নাচ, নেশা। এক কথায় যার নাম, রর্কিং পার্টি।
সারা বছর তো ছোটখাটো কাফে, গড়ের মাঠ, পার্ক, সিনেমা-থিয়েটার চলতেই থাকে। এই ক’টা দিনই তো একটু জমিয়ে ফুর্তি করার। বলল প্রেসিডেন্সির অঙ্কন। বন্ধু টোরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার ছাত্র অনীক দু’বছর পরে বাড়ি ফিরেও একই কথা বলছে। ওর মতে, “বিদেশে সারা বছরে যখন-তখন নাইট আউট চলতে থাকে। কলকাতায় যতই নাইটক্লাব চালু হোক না কেন, পার্টি টাইম বলতে শীতের এই ক’টা দিনই। তাই এই সময়টা অন্য কিছুতে নষ্ট করা যায় না। চাই রাতভর হার্ড রক আর লিকারের উদ্দাম মজা।”
তবে পার্টি মানেই যে হতে হবে মাথা ঝিমঝিম, পা টলমল এমনটায় বিশ্বাসী নয় অনেকেই। যেমন লা মার্টিনিয়ারের সম্পূর্ণা বন্ধুদের সঙ্গে পার্টির জায়গা বলতেই পছন্দ করে কোনও হুকা বার। আপেল, মিন্ট, পান রসনার মতো নানা ফ্লেভারের হুঁকোর ধোঁয়ার মাঝে জমাটি হুল্লোড়ই পছন্দ ওর বন্ধুদের। তার পর কিছু ক্ষণেই হাল্কা মিউজিক আর আলো-আঁধারীর আমেজে যেন রোজের চেনা জগৎ থেকে অনেক দূর হারিয়ে যাওয়া। নিষিদ্ধতার আনন্দ যেমন থাকল, তেমনই বজায় থাকল নিরাপত্তা। বার থেকে বেরিয়েই অনায়াসে ফিটফাট হয়ে বাড়ি। ওদের কথায় এর নাম ‘স্মার্ট পার্টি’।
আর তার জন্য সঙ্গে চাই গুছিয়ে সাজগোজ। মানে সারা বছর যেই পোশাকগুলো কলকাতার আবহাওয়া আর মেজাজের সঙ্গে মানানসই হয় না, সে সব সাজে সাজতেও তো চাই শীতের পার্টি।
‘কিস’মে কিতনা হ্যায় দম
এক পার্টিতে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ও রাইমা সেন। ছবি সৌজন্যে: স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়
কালীপুজো যেতে না যেতেই শুরু হয়ে যায় বছর শেষের পার্টি সিজনের প্রস্তুতি। দুর্গাপুজোর সময়ে কেনা সবচেয়ে কায়দার জামাটাও যে এ সময়ে পরার নয়। এখন চাই কোনও ফাংকি পার্টি ওয়্যার। শীত যতই বারুক জামা হতে হবে খুল্লম-খুল্লা। হাল্কা উলেন অথবা নেট, ভেলভেট, স্যাটিন, সিল্ক। যে ভাবেই হোক, লুকটা বেশ হটকে করে তোলা মাস্ট।
তন্ত্রা-ভেনমে বয়ফ্রেন্ডকে সঙ্গ দেওয়া বা শিশায় গার্লস নাইট আউট, সাজটা হতেই হবে তাক লাগানো। ট্রেন্ডি। নখ থেকে চুল, এখন সবের দিকেই দিতে হয় বিশেষ যত্ন। বলল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যলয়ের পৌষালী। ক্যান্টিনে পাশে বসা বান্ধবী মৌমিতার সাফ কথা, “সাজেও তো একটা মস্তি আছে। সারা বছর প্যাচপ্যাচে ওয়েদারে স্যাটিন বা সিল্ক তো ঠিক জমে না। তাই এই সময়টাই বেছে নেওয়া।” আর ওই সাজ মোটেই চলে না চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া, নিকোপার্কের হইহই-এ।
আইটি-কর্মী সুলেখা আবার বাৎসরিক বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে কেনা সবচেয়ে স্টাইলিশ পোশাকটা রেখে দেয় থার্টি ফার্স্ট নাইটে অফিস পার্টির জন্য। রোজের কর্পোরেট সাজে বোর হয়ে গিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে অন্য বেশে এই এক দিনের হুল্লোড়ের জন্য সে মুখীয়ে থাকে সারা বছর।
তবে সব সময়ে পরিচিত হিন্দি, ইংলিশ গানের সঙ্গে উদ্দাম নাচের পার্টিতে সন্তুষ্ট নয় জেন ওয়াই। তাদের কাছে নাইটক্লাব, ডিস্কোথেক এক্কেবারে নো নো। নিজের মতো গুছিয়ে নিয়ে পছন্দের কয়েক জন বন্ধুকে ডেকে নিরিবিলি পার্টিও এখন বেশ ট্রেন্ডি। ওদের ভাষায় এগুলো হাউস পার্টি।
সেন্ট জেভিয়ার্সের রোহন বলে, “আমরা হার্ড রক পছন্দ করি। বেশি লোকজনও ভালবাসি না। তাই কয়েক জন বন্ধুকে ডেকে নিয়ে চলে রাতভর হার্ড রকের সেশন।” তার জন্য সব সময়ে কোনও কারণ লাগে না। ফুর্তি করতে ইচ্ছে হলেই কোনও এক বন্ধুর বাড়িতে একজোট হয়ে যায় ওরা। এই পার্টিতে অবশ্য সাজগোজের কোনও ব্যাপার নেই। বাড়ির নাইট-স্যুটটা পরে এলেও সবচেয়ে মানানসই এখানে।
কী সাজ ও কেন?
এই পার্টি সিজনে আমার পছন্দ এলবিডি- লং ব্ল্যাক ড্রেস। যা ঠান্ডা পরেছে তাতে আমার
পার্টি স্পিরিট কমছে না। পার্টিতে, ইফ ইউ ওয়ান্ট টু ফিল ওয়ার্ম তার জন্য
ওয়াইন তো আছেই। সাথে ভাল বন্ধু থাকলে তো উষ্ণ লাগতে বাধ্য

রাইমা সেন
‘গালর্স ওনলি’ পায়জামা পার্টিও আবার বেশ ট্রেন্ডি এখনকার তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। উৎসবের মরসুমে রাতভর কেক বানানোও কখনও কখনও হয়ে ওঠে এই সব পার্টির উপলক্ষ। বড়দিনে ওয়াইন কেক বানানো ঘিরে চলে হইচই, খাওয়া-দাওয়া, নাচ-গান। জানাল প্রেসিডেন্সি কলেজের রীতি আর মিতা। বাড়ির লনে জায়গা থাকলে উপলক্ষটা হয়ে উঠতে পারে বার্বিকিউ-ও। একটা গ্রিল করার যন্ত্র মাঠের মাঝখানে বসিয়ে, পাশে আগুন জ্বেলে রেড ওয়াইন আর পছন্দের গান। এ সবের মধ্যে কেক বা কাবাবের স্বাদ কেমন হল, সে প্রসঙ্গে অবশ্য কোনও প্রশ্ন করা এক্কেবারে বারণ। ওদের কথায়, ফুর্তিটাই তো আসল।
তবে হাউস পার্টি মানেই যে তা কোনও বাড়ির ভিতরে আটকে থাকবে হবে, এমনটাও নয়। নিজেদের পছন্দের মিউজিক, নেশার সামগ্রী আর বন্ধুদের নিয়ে উন্মাদনায় মাততে ভাড়া করে নেওয়া হয় কোনও কমিউনিটি সেন্টার বা ব্যঙ্কোয়েট হলও। অতিথিদের উত্তেজনার পারদটা আরও একটু তুলে দিতে সঙ্গে চাই বিশেষ ভাবে সাজানো উষ্ণ আলোর ব্যবস্থা। সাউন্ড সিস্টেমের কানটা মুলে উচ্চস্বরে গান। রেড ওয়াইনের গ্লাসটা তুলে শীতের প্রতি টোস্ট ‘টু উইন্টার’। চিয়ার্স!

অতঃপর... অতঃকিম
টিপস দিয়েছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়
• বিভিন্ন ধরনের পানীয় মেশাবেন না। তাতে ভয়ঙ্কর ক্ষতি হতে পারে। যে কোনও এক ধরনের পানীয় খাওয়াই ভাল। এক বার বিয়ার, এক বার ভদকা, একবার ওয়াইনএ ভাবে খেলে পর দিন সকালে মাথা ব্যথা হবেই।

• রঙিন পানীয় বেশি মাত্রায় খাবেন না। কলেজ পড়ুয়ারা সদ্য যাঁরা পান করতে শুরু করেছেন তাঁরা এই ভুলটা করে থাকেন। তাঁদের সাবধান।

• খালি পেটে মদ খাবেন না। এতে শরীরের খুব ক্ষতি হয়। হজম প্রক্রিয়া এতে খুব ধীরে ধীরে হতে থাকে।

• কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেলে হ্যাংওভার এড়ানো যায়। কার্বোহাইড্রেট খেলে পেট কড়া পানীয় তাড়াতাড়ি শুষে নেয়।

• দুধের তৈরি কোনও খাবার না খাওয়াই ভাল। খাওয়ার আগে, পরে বা খাওয়ার সময় দুগ্ধজাত খাবার বাদ দিন।

• লেবুর জল খেলে পর দিন সকালে হ্যাংওভারটা তাড়াতাড়ি কেটে যায়।

• পেট ঠিক রাখাটা খুবই দরকার। তার জন্য অ্যান্টাসিড, বিশেষ করে ‘ইনো’ খেয়ে ফেলুন।

• বিদেশে অ্যান্টি হ্যাংওভার লিকুইড পাওয়া যায়, সেটা খেলেও বেশ কাজে দেয়।

• বেশি মাত্রায় জল খাওয়া সব চেয়ে বেশি জরুরি। শরীরে যদি লিক্যুইড ইনটেক বাড়াতে পারেন, তা হলে আপনার শরীর থেকে টক্সিন আর অ্যালকোহল দুটো সহজেই বেরিয়ে যাবে।

• অনেকেই বলেন যে, আদা-চা খেলে কাজে দেয়। মাথা-ধরা কমে। নেশা করার পর দিন কলা খেলেও শরীরে ঝিমঝিম ভাব কমে। তবে কলা বা আদার টিপসটা কোনও দিন আমার প্রয়োজন হয়নি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.