বাবা জ্ঞান দিয়ো না
কবি হলেন অনুপম

“আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি”
কিংবা
“গভীরে যাও, আরও গভীরে যাও
এই বুঝি তল পেলে এই হারালে
প্রয়োজনে ডুবে যাও”


তাপাতার সঙ্গে ফুল যে ভাবে জড়িয়ে থাকে তেমনই এই সব গানের লাইনগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে যাঁর নাম তিনি অনুপম রায়।
এত দিন তাঁকে শ্রোতারা গীতিকার, সুরকার হিসেবেই জেনেছেন। টিভির অনুষ্ঠানে দেখেছেন তাঁকে গান নিয়ে কথা বলতে। জলসায় জলসায় গান গেয়ে মাত করেছেন অনুপম। গানের সিডি বেরিয়েছে। সেই সিডি রমরমিয়ে বিক্রি হয়ে উঠেছে বেস্টসেলার লিস্টে।
এ হেন গানে ডুবে থাকা অনুপমের জন্য ক্রমশ খুলে যাচ্ছে আর একটা পৃথিবী।
আর সেটা কবিতার পৃথিবী।
গোপনে কবিতা লেখা ছেড়ে প্রকাশ্যে কবি হয়ে উঠছেন অনুপম। ২০১২ সালে যেন তিনি সত্যিই বলে উঠতে চাইছেন তাঁর গানের মতো,
যদি কেড়ে নিতে বলে কবিতা লেখা খাতা
জেনো কেড়ে নিতে দেব না।

২০১২এর বইমেলায় বেরিয়েছিল তাঁর প্রথম কবিতার বই “সারা রাত কেটে যাবে/ তোর কথা ভেবে।’। আর ২০১৩র বইমেলায় আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হতে চলেছে তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ছোঁয়াচে কলম’।
কবিতা লেখার ইচ্ছে ছিল ছোটবেলা থেকেই। ক্লাস সিক্সে যখন পড়তেন প্রথম কবিতা লিখেছিলেন মাংসের দোকানে দেখা একটা কুকুরকে নিয়ে। কবিতার নাম ‘বুচারস ডগ’। জন্তুজানোয়ার নিয়েই কবিতা লিখতেন সেই সময়। পাঠক বলতে ছিলেন মা আর বাবা। বন্ধুবান্ধবদের কবিতা শোনালেও তারা সে ভাবে পাত্তা দিত না। এমনকী স্কুল ম্যাগাজিনেও তিনি ছিলেন প্রায় ব্রাত্য। অথচ মনে মনে কবি হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন অনুপম। বারো ক্লাস পর্যন্ত কবিতার খাতা গোপনেই ভরিয়ে তুলতেন। পাঠক ছিল না কোনও।
সেই অনুপম এ বার সত্যি সত্যি কবিতার সাম্রাজ্যে প্রকাশিত। “যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে যখন পড়ি, তখন ‘ছায়াপথ’ বলে কলেজ ম্যাগাজিনে কিছু কবিতা বেরিয়েছিল। কিন্তু সে সব মনে রাখার মতো নয়। মননশীল ভাবে কবিতা লেখা শুরু করেছি ২০১১ সালের প্রথম থেকে,” বললেন অনুপম।
কী ভাবে অনুপম গান আর কবিতাকে আলাদা করেন? যে সব গান সুরে ফেলা যায় না সেগুলোই কবিতা হয়ে যায়? “ না না তা কেন হবে? গানের জন্য দরকার হয় ছন্দ, সুর। অনেক সময় মাথার ভেতর সুর আর সুরের কথা একসঙ্গে আসে। আবার অনেক সময় শুধু সুরটা মাথায় আসে, কথা পরে বসল। কবিতায় কিন্তু ছন্দের দরকার পড়ে না। প্রধান হচ্ছে আবেগ, দর্শন, স্টাইল, শিক্ষা, ভাবনা। কবিতাকে আমি গানের চেয়েও সিরিয়াস ভাবে দেখি,” বললেন অনুপম।
বেঙ্গালুরুতে চাকরি করতে গিয়েই অনুপম ঠিকঠাক ভাবে কবিতার সান্নিধ্যে আসেন। সেখানে আলাপ হয় ভিশু্যয়াল আর্টিস্ট শমিত রায়ের সঙ্গে। তাঁরই পরামর্শে পড়তে শুরু করেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বিনয় মজুমদারদের কবিতা। কিন্তু নিজে কবিতা লেখা তখনও স্বপ্নের ব্যাপার। “সেই সময় ১৮ ঘণ্টা চলে যেত চাকরিতে। আর ৬ ঘণ্টা ঘুমে। কখন কবিতা লিখব? আর কখন গান লিখব? চাকরিটা ছাড়ার পর থেকেই কবিতা লেখার নেশাটা আবার চাগাড় দিল।” বললেন অনুপম।
সুনীল নন, শক্তিই অনুপমের প্রিয় কবি। তাঁর আজকের এই কবিতা লেখাকে প্রভাবিত করছেন আর্যনীল মুখোপাধ্যায়, শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী সান্যালের মতো কবিরা। দেশের কবিতা ছাড়িয়ে অনুপম এখন বিদেশি কবিতা পড়াতেও মন দিয়েছেন। লিখছেন কিছু কিছু ইংরেজি কবিতাও।
অনুপম যে অনর্গল কবিতা লেখেন তা নয়। বললেন, “বছরে পঞ্চাশ থেকে ষাটটা ভাল কবিতা লিখতে পারলেই হল। এর বেশি আমি চাই না।”
আমারও তারা জমে
অথবা দেহ জল
আঙুলে কত কথা
পকেটে নিশাচর

কিংবা
আধখানা উড়ালপুল
ভাঙা ঈশ্বর চেতনা
ধাক্কা মেরে আলো রাক্ষসের হাতে তুলে দেয়
আমার কাছিম বুদ্ধি।

এই রকম সব লাইন থাকবে আগামী কাব্যগ্রন্থে।
কিন্তু প্রশ্ন একটাই। অনুপমের গা ন যেমন মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে কবিতা কি তেমন জনপ্রিয় হবে? গান তো সকলে শোনে, কবিতা পড়ে কেউ কেউ। কবিতার পাঠক কি আবৃত্তি করবেন অনুপমের কবিতা? অনুপম এ সব প্রশ্নের উত্তর জানেন না। কিন্তু কবিতা লেখার ছোঁয়াচে কলম ছাড়তে চান না সে কথা তো তাঁর গানে কবেই বলে দিয়েছেন।


ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.