|
|
|
|
উত্তরের চিঠি |
|
কেউ কথা রাখেনি,
কেউ কথা রাখে না |
উত্তরবাংলার কথা ভেবে বিভিন্ন পত্রিকায় উত্তরবঙ্গের পৃথক সংস্করণ আজ আর বিষয় নয়। উত্তরবঙ্গের পাহাড়, হাতি, জঙ্গল, চা-বাগান, মধ্যবিত্ত রাজনীতি নিয়ে কতগুলো পৃষ্ঠার রং-ছবি তাই আমাদের ভরপুর রাখে বছরভর। লড়াই, আন্দোলনের কোনও সূচক নেই। সেটা অনুভূতির বিষয়। কিন্তু দিন দিন বঞ্চনার হিমে উত্তরে শীত বেড়ে যাচ্ছে। কাঁথা দিয়ে যে লড়াই অপর্যাপ্ত নয়, অবাস্তব। প্রতিশ্রুতি চিড়েতে আমাদের কাঁসার বাটি আজ আর ভেজে না। বহু দিনকার নির্জলা উপবাসে রেখেই তিনি চলে গেলেন। কথা বলেছিলেন, রাখেননি। পায়ে হাঁটা সংস্কৃতি উত্তরবঙ্গের অন্ত্যজ মানুষের মন জিতে নিলেও আজ আমাদের হাতে সম্বল সর্বহারার মোয়া। উত্তরবঙ্গের সংস্করণ নয়, প্রয়োজন, ভীষণ প্রয়োজন সংস্কার। মনের সংস্কার। ভাবনার সংস্কার ও প্রজাপতির বাহারি বর্ণের দলগুলোর একটু সংস্কার। রেলের মাঠে চড়া রোদ্দুর উপেক্ষা করে বিপুল মানুষের উপস্থিতি, একটা পুরো দিন লালবাতির দখলে নেওয়া শহর আর মঞ্চে দাঁড়িয়ে চেক বিলি যদি উন্নয়ন হয়, তবে দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে রেলের এক্সেল কারখানা শিল্পায়নের আদি ফলক। কী হবে? শিল্প হবে। রেলের টুলস তৈরি হবে বুনিয়াদপুরে। রেলমন্ত্রিত্ব হাতছাড়া হল আর সঙ্গে সঙ্গে সে দিনকার ফুলপাতার আড়াল থেকে রাখা ভাষণগুলোর ভাসান হয়ে গেল। সবাই বলছেন, উনি চেষ্টা করেছিলেন। আজও বুনিয়াদপুর রেল স্টেশনে রিজার্ভেশন চালু হয়নি। অথচ লালবাতি আসবে বলে নাটকের সেটের মতো ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হল সে দিন। আজও ঝুলছে বঞ্চনার সাইন বোর্ড বুনিয়াদপুর রেল স্টেশনে। দলে দলে মানুষকে সে দিন কাজ না পেলে ঘুগনি-মুড়ি বেচার আহ্বান জানান। তুমি আসবে বলে জেলার মিড ডে মিল, একশো দিনের কাজের প্রকল্প থেকে কোটি টাকা খরচ হল। তোমার সফরসূচির অফিসারদের সার্কিট হাউসে পাঁচশো টাকার ডিনার দিল প্রশাসন। তুমি কিন্তু শসা-মুড়ির আভিজাত্যে ভোর চারটেয় মর্নিংওয়াক করে ভিড় জমিয়ে দিলে। এখন বুঝতে পারি তুমি কেন লালবাতি, কেনও ধর্মতলায় তোমার পাশে টালিগঞ্জ ফিল্মসিটি। এ অর্থ আমার-আপনার সবার। উনি জানেন না। রাজ্যের ভাঁড়ে মা-ভবানী, সত্যিই এত দিনে বোঝা যাচ্ছে কেনও সব কিছু মাটি হয়ে গেলও। মানুষ এখনও আছে তোমাদের পাশে? লালগড়কে সোনা দিয়ে মুড়বে বলে, সে দিন লালমাটিতে সবুজ আবির, শিক্ষাকে রাজনীতিমুক্ত করতেই ভোর ৭টার বোতাম চাপ, রাজ্যের মেরুদণ্ড কিছুটা সোজা হবে জেনেই তোমার সভায় প্লাবন। কিন্তু তোমাদের নির্বাচনী ইস্তেহার অন্য কথা বলে। রায়গঞ্জের পানিশালায় ২০০৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকার ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০ একর জমিতে ৯৬০ শয্যার এইমসের ধাঁচে একটি হাসপাতাল গড়ার অনুমোদন দেয় এবং তৎকালীন রাজ্য সরকারকে বিনামূল্যে জমি দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। এবং তারপর জেলা প্রশাসন ১২৫ একর জমি চিহ্নিত করে। ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শন করে সুবজ সঙ্কেতও দেয়। তখনকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ চিঠি দিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১তে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে যায়। কিন্তু নির্বাচনের ঘোষণায় জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আটকে যায়। এর পর বহু দিন কেটে যাওয়ার পরও উত্তরবঙ্গের মানুষকে অবাক করে কল্যাণীতে এইমস নিয়ে যাবার প্রস্তুতি নেয় এখনকার সরকার। আমরা মেনে নেব? পরিবর্তে ইসলামপুর ও রায়গঞ্জে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের এমন উদারনৈতিক সিদ্ধান্তের পরও শুধুমাত্র জমিজটের জন্য এইমস উত্তরবঙ্গ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিল! এর নেপথ্যে যেহেতু কংগ্রেস, তাই কী আমরা এই অনাস্থার শিকার? সময় বলবে! অথচ এ রাজ্যেরই ডানকুনি-ফুরফুরা শরিফ রেললাইনের জন্য রাজ্য জমি অধিগ্রহণে সম্মত হয়েছে। বস্তুত একই প্রশ্ন উঠছে কাটোয়ার এনটিপিসির প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে। সে ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশের রায়বেরেলি এবং পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জে এইমস ধাঁচের হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত এক সঙ্গে হয়েছিল। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব জমি দেন কেন্দ্রকে। কিন্তু শসা-মুড়ির সংস্কৃতি, পায়ে হাঁটা অনশন যার ঐতিহ্য, তিনি পারেননি। তবু মানুষ তাঁর পাশে, উত্তরবঙ্গে এইমস হবে না জেনেও আমরা শুধু বলছি সবে দেড় বছর। এইমস-এর বদলে হাসপাতালেই ষাট ওয়াট জ্বালানো পার্টি অফিসে উপচে ভিড়। মিছিলে দর্জি, পানওয়ালা, টিকিট ব্ল্যাকার হাঁটছে। কী দাবিতে? ওরা আজ লক্ষ্যহারা ধূমকেতুর মতো ছুটছে প্রতিশ্রুতির পিছনে। কিন্তু যাঁরা প্রতিশ্রুতি পারে রাখতে পারে না, যাদের ‘প্রমিস আর পারফরমেন্স’-এ বিস্তর ফারাক, যাদের দিশাহীন রেলগাড়ি আকাশে ওড়ার স্বপ্নে মশগুল উত্তরবঙ্গের প্রগতিশীল, ধান্দাহীন, উন্নয়নকামী মানুষের পক্ষ থেকে তাদের একটাই শব্দ প্রাপ্য ছিঃ!
সন্দীপন নন্দী। বালুরঘাট
|
এই বিভাগে চিঠি পাঠান সম্পূর্ণ
নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে।
উত্তরের চিঠি
আনন্দবাজার পত্রিকা প্রাঃ লিঃ
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড
শিলিগুড়ি-৭৩৪৪০১ |
|
|
|
|
|
|