এক মৃত যুবক প্রতিবন্ধী ছিলেন কি না, সে সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী শংসাপত্র দেওয়ায় বর্ধমানের এক চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন তিন মাসের জন্য রদ করেছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল।
ডিসেম্বরের গোড়ায় চিঠি দিয়ে কাউন্সিলের দিলীপকুমার ঘোষ জানান, ২০০৬ সালের ২২ নভেম্বর থেকে যে তদন্ত চলছিল তাতে উৎপল সেন নামে ওই চিকিৎসক দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। তাই তিন মাসের জন্য রেজিস্ট্রেশন নম্বর রদ করে তাঁর নাম ‘মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার’দের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তবে এর বিরুদ্ধে তিনি সরকারে কাছে আপিলও করতে পারেন।
ঘটনার সূত্রপাত ২০০২ সালে। ওই বছরের ২৮ জানুয়ারি নবাবহাটের বাসিন্দা শেখ লিয়াকত ভারতীয় জীবন বিমা নিগমের সিঙ্গুর শাখায় ৫ লক্ষ টাকার বিমা করান। সে বছরই ১৮ মে তাঁর মৃত্যু হয়। বিমার টাকা দেওয়ার আগে নিয়মমাফিক তদন্ত শুরু করেন জীবন বিমা কর্তৃপক্ষ। মৃতের স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হয়। সেই সময়েই উৎপলবাবু তিন বার তিন ধরনের শংসাপত্র দেন বলে অভিযোগ।
জীবন বিমা সূত্রের খবর, প্রথমে ২০০২ সালের ২২ নভেম্বর শংসাপত্রে চিকিৎসক জানান, লিয়াকত শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলেন। এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে ফের রিপোর্ট চাওয়া হলে ২০০৩ সালের ১৭ নভেম্বর চিকিৎসক লিখে দেন, আগের বার দেওয়া শংসাপত্রই অভ্রান্ত। ইতিমধ্যে মৃত লিয়াকতের পরিবারের তরফে বিমা সংস্থার হাতে আসে উৎপলবাবুরই স্বাক্ষরিত অপর একটি শংসাপত্র। ২০০২ সালের ২২ নভেম্বরের এই শংসাপত্রে লেখা হয়েছিল, ৩৮ বছরের শেখ লিয়াকত সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন।
এর পরেও জল গড়াতে থাকে। বিমা সংস্থা ফের সঠিক তথ্য জানতে চাইলে ২০০৪ সালের ৪ নভেম্বর উৎপলবাবু লিখিত ভাবে জানান, লিয়াকত ‘সুস্থ’ ছিলেন বলে যে শংসাপত্র পেশ করা হয়েছে তার লেখা বা সই তাঁর নয়। এর পরেই জীবন বিমা নিগমের হাওড়া ডিভিশন অফিসের তরফে তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য মেডিকাল কাউন্সিলে অভিযোগ দায়ের করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে উৎপলবাবুকে নিজের রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট কাউন্সিলের কাছে জমা রেখে তাঁর বক্তব্য জানাতে বলা দেয়। গত ৪ ডিসেম্বর চিঠি পাঠিয়ে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল আপাতত তাঁর রেজিস্ট্রেশন রদের সিদ্ধান্ত জানায়।
এখন উৎপলবাবু অবশ্য দাবি করছেন, “লিয়াকত সুস্থই ছিলেন। কিন্তু জীবন বিমা নিগমের তরফে কিছু লোক আমায় দিয়ে জোর করে লিখিয়ে নিয়েছিল, তিনি শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। তাদের বিরুদ্ধে আমি আদালতে মামলা করেছি।” তবে সেই মামলা দায়ের করতে তাঁর আড়াই বছর সময় লাগল কেন, চিকিৎসক তার সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। সিজেএম আদালতে ২০০৫ সালের ৩০ জুনের মামলাও টেকেনি। ২০০৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মামলার তৎকালীন তদন্তকারী অফিসার, বর্ধমান থানার এসআই শ্রীকান্ত পন্ডা ওই আদালতে রিপোর্ট জমা দেন। তাতে বলা হয়েছিল, ভুল শংসাপত্র দিয়ে ফাঁপড়ে পড়েই উৎপলবাবু জীবন বিমা নিগমের অফিসারদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দায়ের করেছিলেন। উৎপলবাবুর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে বলা হয়েছে, তিনি মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। |