স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নিয়ম অগ্রাহ্য করে কলকাতার এক সরকারি হাসপাতালে দুই রোগীর দেহে পরীক্ষামূলক ভাবে কর্ডব্লাড স্টেমসেল প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। যে হাসপাতালে এটি করা হয়েছে তার কর্তৃপক্ষকেও স্টেমসেল প্রয়োগের আগে কিছু জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। ‘স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন’ কর্তৃপক্ষ জানান, ৩ ও ৪ অগস্ট দুই রোগীর দেহে মেডিক্যাল কলেজ থেকে আনা দু’টি আম্বিলিক্যাল কর্ড (যে নাড়ির মাধ্যমে মায়ের সঙ্গে মাতৃগর্ভে শিশু যুক্ত থাকে ও শিশু জন্মের পরে যা খসে পড়ে)-এর রক্ত থেকে পাওয়া স্টেমসেল দেওয়া হয়। দু’দিন পরে তাঁরা বিষয়টি জেনে স্বাস্থ্য ভবনে লিখিতভাবে জানান। প্রসঙ্গত, অতীতেও এই চিকিৎসক নিরঞ্জন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে রোগীদের দেহে কর্ডব্লাড স্টেমসেল প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছিল। সরকারি তদন্তে তাঁর বদলিও হয়।
আইসিএমআর-এর সহ-অধিকর্তা গীতা জেঠওয়ানি জানান, কর্ডব্লাড স্টেমসেল ব্যবহারের জন্য প্রথমে আইসিএমআর-এর ন্যাশনাল অ্যাপেক্স কমিটিকে জানাতে হয়। তার পরে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকে এথিক্যাল কমিটি গঠন করতে হয়। কমিটি বিষয়টি অনুমোদন করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের খসড়া জমা দিলে কমিটিকে ‘ট্রায়াল রেজিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া’-য় নথিভুক্ত করে আইসিএমআর। তার পরে ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমতি মিললে ওষুধ প্রয়োগের প্রসঙ্গ ওঠে। জেঠওয়ানির মতে, “এই ঘটনায় অবিলম্বে এমসিআই-এর হস্তক্ষেপ করা উচিত। সরকারি হাসপাতালে রোগীদের গিনিপিগ করা হলে নিরাপদ চিকিৎসা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।” |
ট্রপিক্যাল সূত্রের খবর, নিরঞ্জনবাবুর চাপেই গত জুলাইয়ে কর্ডব্লাড স্টেমসেল পরীক্ষামূলক ভাবে রোগীদের উপরে প্রয়োগ করতে চেয়ে আইসিএমআর-এ চিঠি লেখেন কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, উত্তরের অপেক্ষা না-করে রোগীর দেহে কর্ডব্লাড স্টেমসেল প্রয়োগ করেন তিনি। আরও অভিযোগ, তিনি মেডিক্যালের স্ত্রীরোগ বিভাগ থেকে বেআইনি ভাবে আম্বিলিক্যাল কর্ড সংগ্রহ করেন।
ওই দুই রোগীর এক জন রক্তাল্পতায় আক্রান্ত ছিলেন, অন্য জনের বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলে গ্যাংগ্রিন হয়েছিল। কর্ডব্লাড স্টেমসেল দেওয়ার পরেও তাঁরা রোগমুক্ত হননি। গ্যাংগ্রিনের রোগী হিল্লোল বসুর কথায়, “চিকিৎসক বলেছিলেন কর্ডব্লাড দিয়ে নতুন চিকিৎসা করবেন। তাতে দ্রুত সেরে উঠব। তিনি যে আমাকে নিয়ে পরীক্ষা করছেন, তা বুঝতে পারিনি।”
কেন নিরঞ্জনবাবু আইসিএমআরের অনুমতির অপেক্ষা করলেন না? তাঁর বক্তব্য, “আমি এক জন দক্ষ, অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আমার মতো গবেষণার অভিজ্ঞতা রাজ্যে অধিকাংশ ডাক্তারের নেই। রোগীরা যখন এত কষ্ট পাচ্ছেন, তখন কি ডাক্তার হিসাবে দাঁড়িয়ে দেখা যায়? অত নিয়ম মানা যায়? অনুমতির জন্য এত দিন অপেক্ষা করা যায়?” আরও বলেন, “আমি তো জানি, ঠিক করছি। কর্ডব্লাড নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছি। আগেও বহু রোগীকে দিয়েছি। ল্যাবরেটরিতে কর্ডব্লাডের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে প্রয়োগ করেছি। সবই রোগী-কল্যাণের জন্য। এর মধ্যে অভিসন্ধি খোঁজা ঠিক নয়।” স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, অনুমতি না নিয়ে নিরঞ্জনবাবু ভুল করেননি। তিনি বলেন, “সব ক্ষেত্রে আইসিএমআর-এর অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। কর্ডব্লাড নিয়ে বিশ্বের বহু দেশে গবেষণা হচ্ছে। এখানেও হওয়া দরকার।” |