সব্জি বেচতে আসা চাষিদের কাছ থেকে শ্রমিকেরা বিনামূল্যে কোনও সব্জি নিতে পারবেন নানিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির এই ঘোষণাকে ঘিরে বলরামপুর পাইকারি সব্জি বাজারে যে বিভ্রান্তি ও অসন্তোষ ছড়িয়েছিল, তার প্রেক্ষিতে এ বার হস্তক্ষেপ করল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। সমস্যা সরেজমিন খতিয়ে দেখতে রবিবার ওই বাজারে আচমকা হাজির হলেন পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) হৃষিকেশ মুদি।
বলরামপুর পাইকারি বাজারে বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা চাষিদের সব্জির বড় ঝুড়ি বা বস্তা ওজনে সাহায্য করার জন্য শ্রমিকেরা চাষিদের কাছ থেকে বিনামূল্যে কিছুটা সব্জি নিয়ে থাকেন। এই অলিখিত নিয়ম এখানে অনেক দিন ধরে চলে আসছে। গত বৃহস্পতিবার বাজার সমিতির পক্ষ থেকে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে শ্রমিকদের বিনামূল্যে সব্জি নেওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এই ঘোষণার জেরে শুক্রবার দিনভর ব্যাহত হয় বেচাকেনার কাজ। শ্রমিকেরা বাজারের সামনের রাস্তা অবরোধও করেন। তাতে সামিল হন কিছু চাষিও।
অতিরিক্ত জেলাশাসক এ দিন এই বাজারে গিয়ে প্রথমে চাষিদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা কী ভাবে ও কাদের সব্জি বিক্রি করেন, কত দাম পান, তা জানতে চান তিনি। চাষিদের ওজনে সাহায্য করা বাবদ তাঁদের কাছ থেকে শ্রমিকেরা কিছু কিছু সব্জি নিয়ে থাকেন, এ কথাও তাঁকে জানান চাষিরা। এর পর বাজারের কমিশন এজেন্টদের (আড়তদার) সঙ্গেও কথা বলেন হৃষিকেশবাবু। ঘুরে দেখেন গোটা বাজার। |
পরে অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “চাষি, কমিশন এজেন্ট, শ্রমিক সকলের সঙ্গেই কথা বলেছি। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ ভাবে বিনামূল্যে চাষিদের থেকে সব্জি নেওয়া যাবে না। চাষি যে কমিশন এজেন্টকে (আড়তদার) সব্জি বিক্রি করছেন, ওজন করানোর দায়িত্ব তাঁরই। তার জন্য পাইকারি বাজারের ক্রেতা (যিনি এজেন্টের কাছ থেকে সব্জি কিনছেন) তাঁকে শ্রমিকের পারিশ্রমিক বাবদ টাকাও দিচ্ছেন।” তিনি জানান, আর যে সমস্ত এজেন্ট এই বাজারে ব্যবসা করেন, তাঁদের কারও নাম-ঠিকানা বা লাইসেন্স নম্বর কোথাও লেখা নেই। এগুলি থাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি এজেন্টরা কত পরিমাণ সব্জি কিনলেন বা বিক্রি করলেন, তা-ও নথিভুক্ত থাকা দরকার। তাহলে কত পরিমাণ সব্জি কেনাবেচা হল, তার ভিত্তিতে শ্রমিক তাঁর ন্যায্য পারিশ্রমিক পেল কি না, তা দেখা যাবে। হৃষিকেশবাবু বলেন, “এই সব বিষয় আমি বাজারের আধিকারিকদের দেখতে বলেছি।”
বাজারে পানীয় জলের অভাব, সীমানা প্রাচীর না-থাকা, যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপএ সবও দৃষ্টি এড়ায়নি অতিরিক্ত জেলাশাসকের। মূল বাজারের বাড়িটির অবস্থাও ভাল নয়া। তাঁর কথায়, “কিছু সমস্যা রয়েছে। কী ভাবে তার সমাধান করা যায়, দেখা হচ্ছে।”
এই বাজারের শ্রমিক ধরম টুডু, মকর সিং সর্দাররা অবশ্য বলেন, “চাষিদের সাইকেল থেকে বড় বড় ঝুড়ি বা ভারী বস্তা নামিয়ে তা ওজন করা বাবদ আড়তদারের কাছ থেকে আমরা ২০-৩০ টাকা পাই। এই টাকায় কি সংসার চলে?” শ্রমিকদের বক্তব্য, সাহায্য করার জন্য চাষিরা তাঁদের স্বেচ্ছায় সব্জি দেন। সব মিলিয়ে টেনেটুনে তাঁদের দিন চলে যায়। “আমাদের দিকটাও প্রশাসন ভেবে দেখুক।”আর্জি শ্রমিকদের। বাজারে উপস্থিত চাষি ধ্রুবপ্রসাদ মাহাতো, শত্রুঘ্ন কৈবর্ত, জয়চাঁদ মাহাতোরা বলেন, “এডিএম সাহেব তাঁর মোবাইল নম্বর আমাদের দিয়ে বলেছেন, কোনও অসুবিধে হলে সরাসরি জানাতে।” |