|
|
|
|
অশোকনগর-কল্যাণগড় |
তোলাবাজদের দৌরাত্ম্য, অতিষ্ঠ পুরবাসী |
সীমান্ত মৈত্র • অশোকনগর |
ধরপাকড় চলছে। পুলিশ বিশেষ দলও গড়েছে। কিন্তু অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর এলাকায় তোলাবাজদের দৌরাত্ম্য কমছে না। পরিস্থিতি এমনই যে, তোলাবাজদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করছেন না ব্যবসায়ী বা সাধারণ মানুষ। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতে যাওয়া তো দূরের কথা। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তোলাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান জারি রয়েছে।
তোলাবাজদের দৌরাত্ম্য এই পুর এলাকায় অবশ্য নতুন নয়। পুলিশি অভিযানে তা মাঝেমধ্যে কমে এই যা। গত ৬ মাসে তোলাবাজদের সেই উপদ্রব বেড়েছে। মাস খানেক আগে বসাকবাড়ি এলাকার এক ব্যক্তি তাঁর বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর অভিযোগ, সে কথা জানতে পেরে তোলাবাজরাই তাঁর বাড়ি বিক্রির ব্যবস্থা করে দু’লক্ষ টাকা আদায় করে নেয়। ভয়ে তিনি সে কথা পুলিশকে জানাননি। কচুয়া মোড় এলাকার এক ইমারতী সরঞ্জাম ব্যবসায়ী বলেন, “কিছু দিন আগে অনুষ্ঠানের অজুহাত দেখিয়ে তোলাবাজরা ৫০ হাজার টাকা নেয় আমার কাছ থেকে।”
এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। ভুক্তভোগীদের বক্তব্য, অনেক সময়ে তোলাবাজরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েও হানা দিচ্ছে। টাকা না দিলে কখনও ফোনে, কখনও রাস্তাঘাটে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। মূলত, কল্যাণগড়, কচুয়া মোড়, গোলবাজার ও রাধা কেমিক্যাল এলাকায় তোলাবাজির ঘটনা বেশি ঘটছে। অনেকের অভিযোগ, তোলাবাজদের পিছনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদেরও মদত রয়েছে। বিভিন্ন রকম নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলি তোলাবাজদের দৌরাত্ম্য নিয়ে প্রচারে মুখ খুললেও ভোটের পরে পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয় না।
অশোকনগর থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, ওসি সুরেন্দ্র সিংহের নেতৃত্বে তোলাবাজি রুখতে একটি বিশেষ দল গড়া হয়েছে। গত ৬ মাসে বেশ কয়েক জন তোলাবাজ-সহ প্রায় ৪০ জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলিও মিলেছে। বৃহস্পতিবার রাতেই হরিপুর এলাকা থেকে সুরজ দে নামে বছর বত্রিশের এক তোলাবাজকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে একটি পাইপগান এবং গুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ধৃতের বাড়ি স্থানীয় কল্যাণগড়ে। অতীতে সে কয়েক বার হাজতবাস করেছে। দেড় বছর আগে জামিন পেয়ে সে ফের তোলাবাজি এবং চোলাইয়ের ব্যবসা শুরু করে। পুলিশের দাবি, এলাকায় আরও অন্তত সাত জন তোলাবাজ রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তৃণমূল বিরোধী দলে থাকার সময়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে তোলাবাজদের মদত দেওয়ার অভিযোগ হামেশাই তুলত। কিন্তু এখন রাজ্য সরকারের পাশাপাশি অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভাতেও ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। কিন্তু তোলাবাজি বা অপরাধমূলক কাজকর্ম বন্ধ হয়নি।
সিপিএম তোলাবাজি বন্ধ না হওয়ার দায় তৃণমূলের উপরেই চাপিয়েছে। পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএমের শর্মিষ্ঠা দত্ত বলেন, “ঢিলেঢালা প্রশাসনের জন্যই দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে পুলিশও দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভয় পাচ্ছে।”
তবে, পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান তৃণমূলের সমীর দত্তের দাবি, “তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেই পুলিশকে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে ছিনতাইবাজ, তোলাবাজ বা চোলাই কারবারিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে। আমরা পুলিশকে এ বিষয়ে সব রকম সাহায্য করব। সে কারণেই দুষ্কৃতীরা ধরা পড়ছে।” |
|
|
|
|
|