নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কোথাও সিপিএম বনাম তৃণমূল, কোথাও তৃণমূল বনাম তৃণমূলস্কুল নির্বাচন ঘিরে গণ্ডগোল চলছেই পশ্চিম মেদিনীপুরে।
রবিবার স্কুল ভোট ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছল পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায়। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে পোস্টার সাঁটাল, বিলি করল লিফলেট। গোষ্ঠী সংঘর্ষের আশঙ্কায় এলাকায় ১৪৪ ধারাও জারি করতে হয়েছে প্রশাসনকে। আবার ঘাটালের সুলতানপুর হাইস্কুলে ভোট চলাকালীন তৃণমূল সমর্থকদের সঙ্গে সিপিএম সমর্থকদের হাতাহাতি হয়। উভয়পক্ষের ১৪ জন জখম হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ জন ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ও ৫ জন বীরসিংহ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি। পরে অবশ্য ফলাফল বেরোলে দেখা যায়, অভিভাবক প্রতিনিধির ছ’টি আসনেই জিতেছেন তৃণমূল সমর্থিতেরা। ধান্যগাছি হাইস্কুলে পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে ক’দিন ধরেই গণ্ডগোল চলছিল চন্দ্রকোনায়। তবে, এ দিন প্রচুর পুলিশ মোতায়েন থাকায় কোনও গোলমাল বাধেনি। মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাথরাতেও স্কুল নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষ বাধে এ দিন।
রবিবার পিংলার জলচক বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিতে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে সিপিএমের কোনও প্রার্থী ছিল না। তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠীই পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল। দু’পক্ষ জোর-কদমে প্রচারও চালায়। এরপরই শনিবার দলের ব্লক সভাপতি গৌতম জানা লিফলেট ছড়িয়ে নিজেকে অঞ্চল সভাপতি হিসেবে দাবি করা পিনাকী চক্রবর্তীকে বহিষ্কার করেন। গৌতমবাবু বলেন, “স্কুল নির্বাচনের আগে সকলকে জানানো প্রয়োজন, কারা আসল তৃণমূল। তাই পোস্টার সাঁটানো।” পাল্টা লিফলেট ও পোস্টারে পিনাকীবাবুকে বহিষ্কারের নিন্দা করা হয়। এই পোস্টার-লিফলেটে নাম ছিল ব্লক কমিটির চেয়ারম্যান অতুল জানার। যদিও অতুলবাবুর দাবি, “আমি ওই পোস্টার ছাপাইনি। কাউকে লিফলেট ছড়াতেও বলিনি।” দল থেকে বহিষ্কৃত পিনাকীবাবু এখনও নিজেকে ১০ নম্বর জলচক অঞ্চল কমিটির সভাপতি বলে দাবি করছেন। তাঁর কথায়, “দলীয় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই কেন এ ভাবে আমাকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করা হল বুঝতে পারছি না।” গৌতমবাবু অবশ্য বলেন, “উনি স্বঘোষিত অঞ্চল সভাপতি। ওই অঞ্চলের অঞ্চল সভাপতি মুকুল মান্না। জলচক বালিকা বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে ওই স্বঘোষিত অঞ্চল সভাপতি অফিসিয়াল গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছেন। দল বিরোধী কাজ করায় তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।” দীর্ঘদিন ধরেই পিংলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছে। এক সময় গৌতম জানাকে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে কোর কমিটি করে দল চালানো হচ্ছিল। পরে ফের গৌতমবাবুকে ব্লক সভাপতি করা হয়। তবে কোন্দল থামেনি। এ দিন পিনাকীবাবুকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। প্রসঙ্গত, স্কুল ভোটের ছ’টি আসনেই জিতেছেন গৌতম অনুগামীরা।
মেদিনীপুরের পাথরায় মহাতাবনগর সারদা বিদ্যায়তনের পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন ছিল রবিবার। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই এলাকায় উত্তেজনা ছিল। এক সময় এলাকায় সিপিএমের একাধিপত্য ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। এ দিন সকালে হঠাৎই দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তৃণমূলের অভিযোগ, ভোট দিতে আসার পথে শেখ আলাউদ্দিন নামে তাদের এক সমর্থককে মারধর করেন সিপিএমের লোকজন। ঘটনার জেরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। সিপিএমের পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন তপন মাইতি নামে তাদের এক সমর্থককে মারধর করেছেন। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। স্থানীয় সিপিএম নেতা আব্বাস আলি বলেন, “নির্বাচনে তৃণমূলই সন্ত্রাস করেছে। আমাদের সমর্থকদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। ভোট দিতে আসার পথেও হুমকি দেওয়া হয়েছে।” অভিযোগ উড়িয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা মহম্মদ আকবর খান বলেন, “এলাকার মানুষ পাশে নেই বুঝেই অপপ্রচার করছে সিপিএম।” |