বিক্ষোভের গর্জনে ব্রাত্য, উদ্বেগে রাজনীতি
রাজধানীতে মানুষের ক্রোধ, অসন্তোষ, বিক্ষোভ, বিদ্রোহ দেখে শুধু শাসক দল কংগ্রেসই নয়, বিরোধী দল বিজেপি-সহ দেশের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা প্রমাদ গুনছেন।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের ব্যর্থতা অবস্থাকে জটিল করে তুলেছে বলে বিরোধী নেতারা মনে করলেও লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো প্রবীণ সাংসদের মতেও, এই বিক্ষোভের মধ্যে শুধুই যে রাগ আছে, তা নয়। আছে মানুষের বেদনা। তিনি বলেন, রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই এটা একটা চ্যালেঞ্জ। এই আন্দোলনে মানুষের সংসদীয় দলীয় ব্যবস্থা থেকে বিযুক্তি এবং নিঃসঙ্গতার প্রকাশ ঘটছে। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “মূলত যুব সমাজের অরাজনৈতিক স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ-প্রক্রিয়াকে দোহাই সামাজিক ব্যধি বলবেন না। এটি আসলে ব্যধিগ্রস্ত সমাজের বিরুদ্ধে আদর্শবাদী, ভাবপ্রবণ যৌবনের প্রতিক্রিয়া।”
বিরোধী শিবির এই ঘটনারও রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য সনিয়া গাঁধী ও শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে মুখর হয়ে উঠেছে। সঙ্ঘ পরিবার থেকে বিজেপি, টিম-অণ্ণা থেকে কেজরিওয়াল সকলেই ‘ভিড়ের মনস্তত্ত্ব’কে উস্কে দিয়ে রাজনীতির পারানির কড়ি জোটাতে মরিয়া। কিন্তু প্রকাশ্যে না হলেও ভিতরে ভিতরে সব দলের নেতারাই বুঝতে পারছেন, এই ঘটনাকে শক্ত হাতে মোকাবিলা না করলে আগামী দিনে দেশে গৃহবিদ্রোহের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আপাত ভাবে একটি ধর্ষণের ঘটনা। কিন্তু দলহীন, নেতাহীন, মূলত শহুরে যুব সমাজের বিক্ষোভের এই বিস্ফোরণ শুধুই ওই একটি ঘটনাতেই কেন্দ্রীভূত নয়। এর মধ্যে আসলে আছে আর্থ-সামাজিক অব্যবস্থার বিরুদ্ধে ঘৃণা এবং রোষের প্রকাশ।
বিক্ষোভকারী সেন্ট স্টিফেন কলেজের ছাত্র পুরুষোত্তম সিন্হা বললেন, “আমরা এমন একটা সমাজে বাস করি, যেখানে ধর্ষণ করলে শাস্তি হয় না। ধনী চিত্রতারকা আইন ভেঙে বিরল প্রজাতির প্রাণীকে হত্যা করলে শাস্তি হয় না। বিএমডব্লিউ গাড়ি চালিয়ে পথচারীকে হত্যা করা যায়। তাতেও শাস্তি হয় না। সব শেয়ালের একই রা। সব চোরের ভাষাও এক।”
ক’দিন আগে গাজিয়াবাদে এক যুবক আত্মহত্যা করেন দুর্নীতির প্রতিবাদে। এবং মৃত্যুর আগে লিখে যান, এই ব্যবস্থাকে তিনি সহ্য করতে পারছেন না। ব্যবস্থার প্রতিবাদে তিনি মৃত্যু বেছে নিলেন। এবং মৃত্যুর আগের দিন ওই যুবক তাঁর ভাইকে একান্তে বলেছিলেন, পর দিন আত্মহত্যা করবেন। যদি কেউ তাঁকে পাগল
বলে, তখন যেন সকলকে জানিয়ে দেন, তাঁর দাদা পাগল ছিলেন না। শুধু সমাজকে একটি বার্তা দেওয়ার জন্যই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

সংঘর্ষের শহর
ভাঙব বলে কাঁদিয়ে তাড়ানো মানুষের মর্যাদায়

লাঠিতে শায়েস্তা
সকাল সাড়ে ন’টা: বিক্ষোভকারীদের ভিড় ইন্ডিয়া গেটে।

সাড়ে দশটা: ভিড়ের রাস্তা আটকাল পুলিশ। ভাঙচুর শুরু।

এগারোটা: ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে মানুষ। পুলিশ ফেরত পাঠাল ভিড়কে।

বারোটা: সনিয়া-রাহুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ বিক্ষোভকারীদের।

সওয়া বারোটা: ধর্ষিতার স্বাস্থ্যের অবনতি।
সফদরজঙ্গের সামনে প্রার্থনা, প্রতিবাদ।

বেলা দেড়টা: রেলভবনের সামনে দিয়ে
রাইসিনা হিল যাওয়ার চেষ্টা। শুরু খণ্ডযুদ্ধ।


কামানের মুখে
সওয়া দু’টো: লাঠিতেও সরলো না ভিড়। অগত্যা ইন্ডিয়া গেটে জমায়েতের অনুমতি।

তিনটে: ইন্ডিয়া গেটে পুলিশের গাড়ি উল্টে দিল ভিড়। ধর্নায় কেজরিওয়াল।

চারটে: বাসের মাথায় চেপে রামদেবের রামলীলা যাত্রা

সাড়ে চারটে: ইটবৃষ্টি শুরু বিক্ষোভকারীদের।
পুলিশের কাঁদানে গ্যাস, জলকামান, পাল্টা ইট।

পাঁচটার পরে: জরুরি মন্ত্রিসভা বৈঠক শীলা দীক্ষিতের।
পরে বৈঠক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের সঙ্গে ।

আটটার পরে: পুলিশের সমালোচনায় শীলা

রাজধানীর রণচিত্র: পিটিআই এবং এএফপি


আমির খান
সত্যমেব জয়তে করতে গিয়ে শিখেছি, মেয়েদের হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা না এলে অগ্রগতি অসম্ভব।
অভিনেতা
শাবানা আজমি
ভারতীয়দের ৫০ শতাংশের বয়স পঁচিশের নীচে। এই তারুণ্যকে বিক্ষিপ্ত হতে দিও না। বদলের অনুঘটক হও।
অভিনেতা
রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা
সামনের বার সতর্ক হয়ে ভোট দেবেন। দল, জাতপাত, ধর্মের জন্য নয় এবং অবশ্যই ভয় থেকেও নয়।
পরিচালক
শেখর কপূর
তরুণ প্রজন্ম প্রমাণ করে দিয়েছে, অর্থনৈতিক মডেলে তারা শুধু সংখ্যা নয়। বদল আনার ক্ষমতাও রাখে।
পরিচালক

ভাই বুঝতে পারেননি যে, দাদা মজা করছেন না। সত্যি কথাই ভাইকে আগাম জানিয়েছিলেন।
কিছু দিন আগে অণ্ণা হজারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অরাজনৈতিক দলীয় পরিসর করায়ত্ত করেছিলেন। তবে শুধু অণ্ণার ক্ষেত্রে নয়, এর আগে নাগরিক সমাজকে কখনও বাবা আমতে, কখনও মেধা পাটকর, কখনও মহাশ্বেতা দেবী আবার কখনও কেজরিওয়ালের আহ্বানে উদ্বেল হতে দেখেছেন মানুষ। এই অণ্ণা, কেজরিওয়াল থেকে কিরণ বেদীরা হয়তো প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের ঘেরাটোপে বাঁধা থাকেন না, কিন্তু অরাজনৈতিক পরিসরের মধ্যে এঁরাও যেন আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় তৎপর এক-একটি ক্ষমতার কেন্দ্র হয়ে ওঠেন। তাঁদের বিক্ষোভ, প্রতিবাদও ক্রমে ক্রমে এ দেশের গণদেবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর তাই আজ যখন নেতা ছাড়াই দিল্লির চার দিকে এক স্বতঃস্ফূর্ত অভিনব উন্মত্ততা দেখা যাচ্ছে, তখন কিন্তু কিরণ বেদী বা যোগগুরু রামদেবের বিবৃতিতে সমর্থন যতই থাকুক, বাস্তবে কিন্তু দেখা যায়, তাঁরাও এই আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন।
রাজনীতিবিজ্ঞানী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নাগরিক সমাজ এবং রাজনৈতিক সমাজের মধ্যেও একটি বিভেদ করেছেন। নাগরিক সমাজের বিদ্রোহ রাজনৈতিক সমাজের অঙ্গ হয়ে উঠবে কি না, সেটি নির্ভর করে আন্দোলনকারীদের সামিল হওয়ার ধারাবাহিকতা এবং তার গণতান্ত্রিক সাফল্যের উপরে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুদীপ্ত কবিরাজ বলেন, “পৃথিবীর ইতিহাসে নাগরিক সমাজের ধারণাটি নতুন নয়। এবং এটি মূলত জন লকের ভাবনা থেকে উৎসাহিত। কিন্তু পাশ্চাত্যের এই ভাবনা ভারতীয় সমাজের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে ঐতিহাসিক ভাবে।” ফরাসি বিদ্রোহের সময়েও ভলতেয়ার, রুশোর নাগরিক সমাজের তথা মধ্যবিত্ত সমাজের বিচ্ছিন্নতাই বড় বিপ্লবের অনুঘটক হয়ে উঠেছিল। সুদীপ্ত কবিরাজ মনে করেন, উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগে এবং আর্থিক উদারবাদের প্রসারের ফলে অধুনা নাগরিক সমাজের বিক্ষোভের মনস্তত্ত্বটিও ভারতে অনেক আধুনিক ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
আর্থিক উদারবাদ ভারতের মধ্যবিত্ত সমাজের সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের তুলনায় যা অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। প্রায় ত্রিশ কোটি মধ্যবিত্ত মানুষ, যার মধ্যে যুব সম্প্রদায় হচ্ছে নির্ধারক শক্তি। যে যুব সমাজে সততা, নিষ্ঠা, দুর্নীতি-বিরোধী মানসিকতা প্রবল। এবং এই প্রতিবাদী জনসমাজ কিন্তু শুধু গরিব, সমাজের নিচুতলার মানুষ নয়। আমির খানের মতো অভিজাত চিত্রতারকা যখন ‘সত্যমেব জয়তে’ অনুষ্ঠান করেন, তখন কিন্তু দিল্লির সেন্ট স্টিফেন কলেজ বা দিল্লি পাবলিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও তাতে অনুরক্ত হয়। এবং সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি ‘পিপলি লাইভে’র মতো চলচ্চিত্রও সমাজে মানবতা এবং নৈতিকতা বোধের এক নতুন উন্মেষ ঘটায়। সমাজ-মনোবিজ্ঞানী আশিস নন্দী বারবার বলেছেন, যে জনপ্রিয় হিন্দি ছবির মধ্য দিয়েও আম-জনতার ব্যবস্থা-বিরোধী বিদ্রোহের ক্যাথারসিস হয়। সেটি কখনও রাগী যুবক অমিতাভ বচ্চন বা কখনও দাবাংয়ের সলমন খানের মাধ্যমে। এই পরিসরই নৈরাজ্যের পথে চলে যেতে পারে যদি শাসক এবং বিরোধী কোনও পক্ষই সমস্যার গভীরে না যায়। এবং এই কারণেই সমাজবিজ্ঞানী আন্দ্রে বেতেই বলেছেন, “শাসক দল এবং বিরোধী দলের মধ্যে একটা রাজনৈতিক সমন্বয় (পলিটিক্যাল সিমবায়োসিস) গড়ে ওঠা প্রয়োজন।”
আপাতত পুলিশি দমন নীতি এবং বিক্ষোভকারীদের উষ্মাকে ঠান্ডা করে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনা শাসক দলের লক্ষ্য। এই অসন্তোষের উষ্মা হয়তো ক’দিন পরে থিতু হবে। প্রশ্ন থাকছেই, এই রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে আম জনতার বিচ্ছিন্নতা কী তাতে দূর হবে?

তরুণী আবার ভেন্টিলেটরে
বাবা বলছেন, “আমার মেয়ের মনের জোর আছে। ও খুবই সাহসী। আপনারা ওর জন্য প্রাথর্না করবেন।” সারা দেশ বলছে, শীঘ্র সেরে উঠুক মেয়েটি। আর কঠিনতম শাস্তি হোক অভিযুক্তদের। কিন্তু যাঁর জন্য এত কাণ্ড, কেমন আছেন চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার ২৩ বছরের সেই তরুণী? শনিবার মেয়েটির শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও রবিবার তাঁর শ্বাসযন্ত্রে কিছু সমস্যা ধরা পড়ে। ফলে ফের তাঁকে ভেন্টিলেটরে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান সফদরজঙ্গ হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিন্টেনডেন্ট বি ডি আথানি। সংক্রমণ এড়াতে কড়া অ্যান্টিবায়োটিক ও হজমের ওষুধও দেওয়া হয়েছে।

তদন্ত কমিশন
দিল্লি গণধর্ষণের তদন্তের জন্য গঠিত কমিশনের নেতৃত্বে থাকবেন এক প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি। রবিবার এ কথা জানিয়েছেন দিল্লি পুলিশের বিশেষ কমিশনার ধর্মেন্দ্র কুমার। পাশাপাশি ধর্ষণে আরও কড়া শাস্তির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি গড়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। ওই কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল গোপাল সুব্রহ্মণ্যম।

প্রতিদিন শুনানি
দিল্লিতে সব যৌন নির্যাতনের মামলার শুনানি প্রতি দিন করার নির্দেশ দিল দিল্লি হাইকোর্ট। আগে কখনও এই ধরনের নির্দেশ জারি করা হয়নি। দিল্লির সব অতিরিক্ত দায়রা বিচারককেই এই নির্দেশ পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.