|
|
|
|
আমন্ত্রিত জয়া, শীলা, গগৈ |
শপথে আমন্ত্রণ জানিয়ে মোদীর চিঠি, মমতার না |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
নিজের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে অনুরোধ জানালেন নরেন্দ্র মোদী।
আগামী বুধবার শপথ নেবেন মোদী। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য মোদী যে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তা নয়। যেমন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে তিনি আমন্ত্রণ জানাননি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মমতা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এই অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে পারছেন না। সেই সময় তাঁর উত্তরবঙ্গ সফর পূর্বনির্ধারিত রয়েছে।
মমতাকে আমন্ত্রণ জানানো প্রসঙ্গে মোদীর বক্তব্য, “ব্যক্তিগত ভাবে আমি মমতাকে শ্রদ্ধা করি। ৩৪ বছরের বাম সরকারকে উৎখাত করে যখন তিনি ক্ষমতায় এসেছেন, তখনই আমি ফোন করে শুভেচ্ছা জানানোর চেষ্টা করি। মমতার কৃতিত্বকে আমি বারবার ধন্যবাদ জানাই। গুজরাতের সাফল্য গুজরাতি মা-মাটি-মানুষেরও। তাই আমার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এলে আমি খুশিই হব।”
মমতা যাবেন না, জানার পরে গুজরাত সরকারের তরফে বেসরকারি ভাবে একটি অনুরোধ করা হয়েছে। তা হল, তাঁর কোনও প্রতিনিধিকে যেন ওই অনুষ্ঠানে পাঠানো হয়। যেমন পঞ্জাবে প্রকাশ সিংহ বাদল সরকারের শপথে মমতা পাঠিয়েছিলেন মুকুল রায়, কে ডি সিংহ এবং রচপাল সিংহকে। উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদবের শপথে গিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা সুলতান আহমেদ। গুজরাত সরকার ঘরোয়া ভাবে প্রস্তাব দিয়েছে, দীনেশ ত্রিবেদীর মতো কোনও নেতা যদি মমতার প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকেন। কারণ, দীনেশ নিজে গুজরাতি। মমতার প্রতিনিধি হিসেবে এ ধরনের অনুষ্ঠানে তিনি এলে তা সৌহার্দ্যের বার্তা দেবে।
মমতা অবশ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নিজে তো যাবেনই না, কোনও প্রতিনিধিকেও গুজরাতে পাঠাবেন না। তৃণমূলের বক্তব্য, মোদী যতই জনতার ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসুন, তাঁর গায়ে এখনও গোধরার কলঙ্ক লেগে রয়েছে। তার উপর পশ্চিমবঙ্গে সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। এখন মোদীর শপথে গেলে সংখ্যালঘুরা অসন্তুষ্ট হতে পারেন। দিল্লি সফরে গিয়ে সংসদের সেন্ট্রাল হলে অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজদের মতো নেতাদের সঙ্গে দেখা করা এক বিষয়। কিন্তু মোদীর শপথে গেলে তা অন্য বার্তা দেবে। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যেতে পারেন। কারণ, সংখ্যালঘু ভোটের উপর তাঁকে নির্ভর করতে হয় না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই মোদীর প্রস্তাব বিনীত ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন মমতা।
প্রশ্ন হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদী কেন নিজের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সকলকে হাজির করানোর জন্য এত সক্রিয়?
গুজরাত জয়ের হ্যাটট্রিক করার পরে মোদী এখন যথেষ্ট সক্রিয়। বিজেপির সব শীর্ষ নেতাকেই তিনি শপথে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। লালকৃষ্ণ আডবাণীকেও একটি ব্যক্তিগত চিঠি লিখেছেন। যার মূল বক্তব্য, ‘আডবাণী না থাকলে মোদী কখনওই আজকের মোদী হয়ে উঠতে পারতেন না’। অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজদেরও তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রথমে অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর শপথ নেবেন বলে স্থির করেছিলেন মোদী। কিন্তু বিজেপির শীর্ষ নেতারা জানান, ওই দিন
সকালে বাজপেয়ীর বাড়ি গিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর কর্মসূচি রয়েছে। সন্ধ্যায় বিজেপি নেতা বিজয় গোয়েলের উদ্যোগে ‘ভজন-গজল-সন্ধ্যা’রও আয়োজন করা হয়েছে। এ সব শুনে মোদী তাঁর শপথ এক দিন পিছিয়ে দেন। মমতাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মোদী তাঁকে একটি বার্তাও দিতে চাইছেন। উন্নয়ন ও সুশাসনকে সামনে রেখেই গুজরাতে এ বারের নির্বাচন লড়েছেন মোদী। এখন এই মডেলকে গোটা দেশে প্রচারের অঙ্গ হিসেবে তুলে ধরতে চান তিনি। তা ছাড়া তাঁর শপথে প্রথম সারির শিল্পপতিরাও হাজির থাকবেন। পশ্চিমবঙ্গে মমতা সুশাসনের চেষ্টা করছেন। রাজ্যে শিল্পায়নেও আগ্রহী তিনি। মোদী চাইছেন, সুশাসনের প্রশ্নে উন্নয়নমুখী মুখ্যমন্ত্রীরা একজোট হোন। শীলা দীক্ষিত বা তরুণ গগৈ-এর মতো অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মোদী। তাঁর কথায়, “যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই সুসম্পর্ক রাখা জরুরি।” মোদী কিন্তু নীতীশকে আমন্ত্রণ জানাননি। নীতীশও অবশ্য মোদীর জয়ের পরে তাঁকে অভিনন্দন জানাননি। ঘরোয়া মহলে নীতীশের ব্যাখ্যা, তাঁর জয়ের পরে মোদীও তো তাঁকে শুভেচ্ছা জানাননি। নীতীশের বক্তব্য, “মোদী সম্পর্কে আমার অবস্থানের তো কোনও পরিবর্তন হয়নি। বিজেপি তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করলে তো আমার পদক্ষেপ কী হবে, তা তো তাঁদের বলাই রয়েছে।” শপথে উপস্থিত থাকার জন্য মোদী অনুরোধ জানিয়েছেন বিরোধী দলের নেতা শঙ্করসিন বাঘেলাকেও।
|
|
|
|
|
|