রেষারেষি করতে গিয়ে ফের দুর্ঘটনা শহরের পথে। ফাঁকা রাস্তায় একটি বাসের সঙ্গে টক্কর নিতে গিয়ে উল্টে গেল অতিরিক্ত যাত্রীতে বোঝাই আর একটি বাস। রবিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে লেনিন সরণিতে, ওয়েলিংটন মোড়ের কাছে। দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন ৫৬ জন যাত্রী। আট জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যাওয়ার আগে বহরমপুরগামী বাসটি ফুটপাথের রেলিং ও একটি গাছে ধাক্কা মারে। এই ঘটনার জেরে ওই রাস্তায় এ দিন প্রায় ঘণ্টাখানেক যান চলাচল বন্ধ থাকে।
|
লেনিন সরণিতে উল্টে যাওয়া সেই বাস। |
পুলিশ জানায়, রবিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ ধর্মতলা থেকে বহরমপুর রওনা দেয় ‘আরাধনা’ নামের বেসরকারি বাসটি। যাত্রীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ধর্মতলা থেকে ছাড়ার পরেই ফাঁকা রাস্তা পেয়ে চালক বাসের গতি বাড়িয়ে দেন। পাশাপাশি চলছিল আর একটি বাস। রেষারেষি করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় বহরমপুরগামী বাসটি। খবর পেয়ে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন ওই বাসের ভিতরে আটকে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। ঘটনাস্থলে পৌঁছন দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরাও। আহতদের এনআরএস ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
|
এ দিকে, কলকাতা মেডিক্যালে আহত যাত্রীদের অব্যবস্থার শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বৌবাজার থানার অফিসার-কর্মীরা নিজেরাই স্ট্রেচার ঠেলে রোগীদের ভিতরে নিয়ে যান। ভর্তির প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ওষুধ-স্যালাইন ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজও পুলিশকে করতে হয়েছে বলে খবর। পুলিশের একাংশের অভিযোগ, হাসপাতাল-কর্মীদের তরফে কোনও সাহায্য মেলেনি। এমনকী, আহতদের চিকিৎসার জন্য কোনও সিনিয়র চিকিৎসক হাজির হননি। পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩৮ জন যাত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিন জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের ভর্তি করানো হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
|
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটিতে ছিলেন বহরমপুরের বাসিন্দা আশিস পাল। এ দিন কলকাতায় তাঁর ছেলের চাকরির পরীক্ষা ছিল। চালকের ঠিক পিছনের আসনেই ছিলেন দু’জন। আহত হন তাঁরাও। আশিসবাবু বলেন, “বাসটি গুমটি ছাড়ার পরেই গতি বাড়িয়ে দেয়। ট্রামলাইনের উপরে বাসটি প্রচণ্ড দুলতে শুরু করে। তার পরেই বিকট আওয়াজ করে কিছুতে ধাক্কা মারে। সবাই বাসের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়ি।” একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন বাসের আর এক যাত্রী, রানাঘাটের বাসিন্দা তনুশ্রী মাইতিও।
এলাকার বাসিন্দারাই প্রথমে উদ্ধার কাজে হাত লাগান। বাসের উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে, জানলা দিয়ে আহতদের বার করেন তাঁরা। ধর্মতলার বাসিন্দা মন্টু সাহা বলেন, “বাসটা দ্রুত গতিতে এসে প্রথমে রেলিংয়ে ধাক্কা মারে। তার পরে একটি গাছে ধাক্কা মেরে উল্টে যায়। যাত্রীদের আর্তনাদ শুনে আমরা সবাই ছুটে আসি।” |
কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সেন্ট্রাল) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, “কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, ট্রামলাইন থাকায় রাস্তার ওই জায়গাটি অসমান। গতি খুব বেশি থাকায় চালক বাসটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। ঘটনাস্থলে থাকা ট্রাফিক পুলিশের এক অফিসার বললেন, “বাসটির ছাদেও নিয়ম ভেঙে অনেক যাত্রী তোলা হয়েছিল। বাসটির সামনের টায়ারের অবস্থাও ভাল ছিল না। প্রচণ্ড গতিতে থাকায় ভারসাম্য হারিয়ে উল্টে যায় সেটি।” রাত পর্যন্ত বহরমগামী ওই বাসের চালকের খোঁজ মেলেনি।
অন্য দিকে, এ দিনই রাজারহাট রোড ও নিউ টাউন রোডের সংযোগস্থলে একটি গাড়ি ও মিনি ট্রাকের সংঘর্ষে ৬ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের ভিআইপি রোড সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। |