নিজস্ব সংবাদদাতা • বহরমপুর |
শীত এ ভাবে মুর্শিদাবাদের পর্যটন শিল্পের উপরে প্রভাব ফেলবে, তা ভাবতে পারেননি লালবাগের ব্যবসায়ীরা। কয়েক দিনের ঠান্ডায় পর্যটকদের ভিড়ে ভাঁটা পড়েছে। প্রতি বছর এই সময়ে শনি-রবিবার ছুটির দিনগুলিতে পর্যটকদের যে পরিমাণ ভিড় থাকে, সেই ভিড় এই রবিবার ছিল না। গত বছর ২৪ ডিসেম্বর ছুটির দিনে হাজারদুয়ারির কাউন্টার থেকে ১০ হাজারের কাছাকাছি টিকিট বিক্রি হয়। এদিন অবশ্য টিকিট বিক্রি হয়েছে প্রায় ৮ হাজার। ফলে এই শৈত্যপ্রবাহ কিছু দিন থাকলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে লালবাগের ব্যবসায়ীদের। লালবাগ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “শীতের সঙ্গে শুরু হয়ে যায় লালবাগের পর্যটন মরশুম। পর্যটকদের দিকে তাকিয়ে ধার-দেনা করে এলাকার সব ধরণের ব্যবসায়ী দোকান ভরিয়ে তোলেন। কিন্তু অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় যদি পর্যটকদের আনাগোনা কমে গেলে ব্যবসায়ীদের যে আর্থিক ক্ষতি হবে, তা সামাল দেওয়া অসম্ভব।”
জেলা জুড়ে গত কয়েক দিন ধরে জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। এদিকে প্রতি বছরই ২৫ ডিসেম্বরের ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকে লালবাগে। এই সময়ে অন্যান্য বছর বহরমপুর-লালবাগের বিভিন্ন হোটেলে ঘর খালি পাওয়া যায় না। চড়া দরে নিলামে ঘর ভাড়া দেওয়ার মত পরিস্থিতি হয়। এবার এখন পর্যন্ত সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এদিকে সোমবার ছুটি নিলেই শনিবার থেকে মঙ্গলবার টানা চার দিনের ছুটি মিলবে সরকারি কর্মী থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। তবে ওই ছুটিতে পর্যটকদের যে পরিমাণ ভিড় হওয়ার কথা ছিল, তা কিন্তু হয়নি। পর্যটকদের অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত ঠাণ্ডাকেই দায়ি করেছেন বিভিন্ন হোটেল কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে শীতে জবুথবু মুর্শিদাবাদবলাই যায়।
বহরমপুরের তাপমাত্রা গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে কমতে শুরু করে। ওই দিন সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল২৫.৬ ও ১৩.৬ ডিগ্রি। ১৮ ডিসেম্বর ছিল ২৫ ও ১৩.৪ ডিগ্রি, ১৯ ডিসেম্বর ২৪ ও ১২.৬ ডিগ্রি, ২০ ডিসেম্বর ২৩.৬ ও ১২.০ ডিগ্রি, ২১ ডিসেম্বর ২২.৪ ও ১২ ডিগ্রি, ২২ ডিসেম্বর ২০.২ ও ১০ ডিগ্রি।
মুর্শিদাবাদে শীতলতম দিন ছিল রবিবার। এদিন বহরমপুরে সর্বোচ্চ ২১.০ ডিগ্রি ও সর্বনিম্ন ৯.৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা ছিল, সেখানে জঙ্গিপুরে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যথাক্রমে ১৮ ডিগ্রি ও ৮.৮ ডিগ্রি। ২২ ডিসেম্বর অবশ্য জঙ্গিপুরে তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ১৮.৫ ডিগ্রি ও সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি।
গত কয়েক দিন ধরে সকালের দিকে ঘন কুয়াশার চাদর বিছিয়ে রয়েছে বহরমপুরের আকাশে। বেলা ১১টার আগে সূর্যের দেখা মিলছিল না। এদিন অবশ্য তার সন্ধান মেলেনি। সূর্য না ওঠার ফলে এদিন তাপমাত্রাও ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ ডিগ্রি বেশি। অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র মেটরোলজিস্ট নিগমানন্দ পাল বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান কম থাকায় কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। সূর্যের দেখা মিললেই ওই কনকনে ভাব কেটে যাবে।”
এদিকে কনকনে ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে শীতের পোশাক কিনতে বহরমপুরের বিভিন্ন দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। কাদাইয়ের এক শীতের পোশাক ব্যবসায়ী সৌমেন সরকার বলেন, “জ্যাকেট, উইন্ডচিটার, মাফলার, মাঙ্কি ক্যাপ বা হনুমান টুপি, গ্লাভস, মোজার চাহিদা রয়েছে। বড়দের জ্যাকেট ৬৫০ থেকে ১৫০০ টাকা, উইন্ডচিটার ৫০০-৭০০ টাকা, মাফলার ১০০-২৫০ টাকা, মাঙ্কি টুপি ১০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও গ্লাভস ১৫০-২০০ টাকা ও মোজা ১৫-১৫০ টাকার মধ্যে বিকোচ্ছে। মেয়েদের মোজাও ২০-৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি।” শীত পোশাক বিক্রেতা শিবশঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “এদিন মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডা পড়ায় শীতের পোশাকের চাহিদাও ছিল ভাল। তবে শীতের শিশুদের নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হতে পারেননি বলে শিশুদের চেয়ে বড়দের শীত পোশাক এদিন ভাল বিক্রি হয়েছে।”
রয়েছে উলিকটেরও চাহিদাও। ব্যবসায়ী অপরেশ মিত্র বলেন, “শীত পড়তেই কম্বলের চাহিদা তৈরি হয়েছে। ডাবল বেডের ৩৩৫-৩১০০ টাকা ও সিঙ্গল বেডের কম্বল ২৪০-১০৮০ টাকায় বিক্রি করছি। মেয়েদের সব ধরণের সোয়েটার ৩৯০-১৬০০ টাকায়, পুরুষদের হাফ ও ফুল সোয়েটার যথাক্রমে ৫০০-৮০০ টাকা ও ৬২০-১০৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিশুদের গরম পোশাক ৪০০-৬০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। চাদর বিক্রি হচ্ছে ১৯০-৮৫০ টাকায়।” |