নিজস্ব সংবাদদাতা • খয়রাশোল |
অবশেষে খয়রাশোলে জল প্রকল্প নিয়ে জটিলতা কাটতে চলেছে। মাস দু’য়েকের মধ্যেই ওই জল প্রকল্প থেকে পরিস্রুত পানীয় জল পাবেন এলাকার ১৮টি মৌজার ৩৩টি গ্রামের মানুষ। এমনটাই আশা করছেন পিএইচই এবং সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, বছর খানেক আগেই প্রায় নব্বই শতাংশ কাজ হয়ে গেলেও দু’ তিন জন চাষির আপত্তিতে ওই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। নিজেদের চাষজমির চার ফুট নীচ দিয়ে ১০ ইঞ্চি ডায়ামিটারের পরিধিযুক্ত ৩০০ মিটার পাইপ লাইন বসাতে আপত্তি ছিল তাঁদের। ওই পাইপ বসলেও তাঁদের জমি বা ফসলের কোনও ক্ষতি হবে না এই সামান্য কথাটিও ওই চাষিদের বোঝানো যায়নি। এ ক্ষেত্রে ব্লক প্রশাসনের এগিয়ে না আসাকেই তখন দায়ী করেছিলেন পিএইচই-র ইঞ্জিনিয়ারেরা। সংবাদমাধ্যমে ওই প্রকল্পের অনিশ্চয়তার খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই প্রশাসনের কর্তারা নড়েচড়ে বসেন। জটিলতা কাটাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, অনিচ্ছুক চাষি, পিএইচই-র ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে একাধিক বার বৈঠক করেন খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সমীর রায় ও খয়রাশোলের বিডিও মহম্মদ ইসরার। ফলও মেলে হাতেনাতে। খুব সম্প্রতি অনিচ্ছুক চাষিদের শেষ দু’জনও (দুর্গাদাস পাল ও কর্ণ পাল) পাইপ বসাতে দিতে রাজি হয়েছেন। দু’জনেই লিখিত বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, জনস্বার্থে তাঁরা জমির নীচ দিয়ে ওই পাইপ লাইন বসাতে দেবেন। |
খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতি ও জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালে ছয় কোটি ছেষট্টি লক্ষ টাকা ব্যয়ের ওই প্রকল্পের অনুমোদন মিলেছিল। তবে কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। ছ’টি গভীর নলকূপের সাহায্যে অজয় নদ থেকে জল নেওয়া হবে। তার জন্য ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে দু’টি জলাধার। প্রথমটি দু’ লক্ষ সত্তর হাজার লিটার জল ধারণের ক্ষমতাসম্পন্ন। অজয়ের ধার ঘেঁষা চূড়র মৌজায় সেটি তৈরি হয়েছে। তিন লক্ষ বিরাশি হাজার লিটার জল ধারণের ক্ষমতাসম্পন্ন অন্য জলাধারটি হয়েছে খয়রাশোলে। ঠিক হয়েছে, প্রথমে অজয় নদ থেকে জল তুলে পাঠানো হবে চূড়র জলাধারে। সেখান থেকে পরিস্রুত পানীয় জল পাইপ লাইনের মাধ্যমে পাঠানো হবে খয়রাশোলের জলাধারে। সেইজলাধার থেকেই কেন্দ্রগড়িয়া, পানসিউড়ি, নাকড়াকোন্দা, হজরতপুর-সহ ১৮টি মৌজার ৩৩টি গ্রামে জল পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু অজয় থেকে চূড়র জলাধার পর্যন্ত ৩০০মিটার পাইপ লাইন বসানোর ক্ষেত্রেই আপত্তি তুলেছিলেন চাষিদের একাংশ। ওই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পিএইচই-র সহকারী ইঞ্জিনিয়ার সুদীপ ঘোষ বলেন, “ওই ৩০০ মিটারের কিছুটা অংশ খাস জমি। বাকি অংশের মালিক আটজন চাষি। ছয় জন আপত্তি না করলেও দু’জন তাঁদের জমির নীচে পাইপ বসাতে দিতে রাজি ছিলেন না।” আলোচনার শেষে সবার কাছ থেকেই ছাড়পত্র মিলেছে। পিএইচই সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ওই তিনশো মিটার পাইপ বসানোর কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে জোর কদমে চলছে কারিগরী ও বিদ্যুৎ বিভাগের কাজ। ওই কাজের শেষে শীঘ্রই খয়রাশোলের মানুষ পরিস্রুত জল পাবেন বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা।
যদিও একটা চিন্তা এখনও রয়েই গিয়েছে। পিএইচই সূত্রে জানা গিয়েছে, যে যে এলাকায় জল পৌঁছবে সেই এলাকার কোথায় কোথায় নলকূপ বসবে তার কোনও তালিকা এখনও তৈরি হয়নি। এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে স্থানীয় প্রশাসন এখনও ওই তালিকা তৈরি করে উঠতে পারেনি। তবে খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সিপিএমের সমীর রায়ের আশ্বাস, “যথাসময়ে ওই তালিকাও দিয়ে দেওয়া হবে।” |