অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় • নলহাটি |
মাত্র ৫ একর জমি। তার মালিক মোট ৪৫ জন! তাঁদের মধ্যেও স্রেফ ২৩ জনের বাধায় থমকে গিয়েছে বীরভূমের নলহাটিতে রেলসেতু নির্মাণের কাজ। রবিবার তাঁদের বাধায় মাটি ফেলার কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
অথচ ঘটনা হল, ওই জমি রেলের হাতে তুলে দিয়েছে রাজ্যই! রেলের অভিযোগ, প্রশাসন তৎপর হলে জট কাটানো যেত। সমস্যা মেটাতে তৎপর হচ্ছে না সিপিএম, তৃণমূল বা কংগ্রেস, কোনও দলই। হাত গুটিয়ে পুলিশও। এক অফিসার বলেন, “এই জেলারই লোবায় যা হল, তার পরে কে যাবে জমির ব্যাপারে নাক গলাতে? উপরের নির্দেশ না এলে কিছু করব না।”
পূর্ব রেলের বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ লুপলাইনে ব্রাহ্মণী নদীর উপরে এই সেতু তৈরির কাজ হচ্ছে। রেল সূত্রের খবর, ২০০৬ সালের ১১ জুলাই বন্যায় নলহাটি থানার জগধারী গ্রাম সংলগ্ন ব্রাহ্মণী নদীর উপরে পুরনো রেলসেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেরামতি করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হলেও বিপদের ঝুঁকি এড়াতে নতুন সেতুর সিদ্ধান্ত হয়। ৩০০ মিটার লম্বা ওই সেতুর জন্য প্রয়োজন মাত্র ৫.৮৫৫ একর জমি। তার মধ্যে ৪৫ জন চাষির কাছ থেকে ৪.৮৩৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকার।
নদীর অংশের উপরে কাজ শুরু করা গেলেও ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’ তৈরি করে জগধারী, পানিটা ও করিমপুর মৌজার চাষিদের বাধায় বাকি জমিতে কাজ করতে পারেনি রেল। পরে প্রশাসনিক বৈঠকে ওই ৪৫ জনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বীরভূম জেলা জমি অধিগ্রহণ বিভাগের স্পেশাল ল্যান্ড অফিসার রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, কয়েক মাস আগে রেলকে প্রয়োজনীয় জমি হস্তান্তর করা হয়েছে।
সমস্যা তা হলে কোথায়? প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২২ জন চাষি ক্ষতিপূরণের চেক নিয়ে নিলেও ২৩ জন বেঁকে বসায় গোল বেধেছে। রেলের ইনস্পেক্টর অব ওয়ার্কাস মুকেশ কুমার বলেন, “এক শ্রেণির লোক মাটি ফেলার কাজে বাধা দিচ্ছে।” পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার (নির্মাণ) রামেশ্বর প্রসাদও বলেন, “এ বছর মার্চেই সরকার রেলকে জমি হস্তান্তর করেছে। আমরা মাস তিনেক আগেই বিডিওকে জানিয়ে কাজ শুরু করেছি। কিন্তু এ ভাবে বাধা এলে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণে দেরি হবে। এ ক্ষেত্রে এলাকার মানুষের সহযোগিতা দরকার।” রেল কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, জমি নিয়ে এখন যা সমস্যা এ রাজ্যে, তাতে প্রশাসন অবিলম্বে হস্তক্ষেপ না করলে সেতু তৈরির কাজই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিয়েও পুরনো সেতু দিয়ে ট্রেন চালাতে হবে।
জমি পাওয়ার পরে নির্বিঘ্নে কাজ চলছিল। তা হলে ফের বাধা কেন? ওই ২৩ জনের অন্যতম কামারুজ্জামান শেখ, কৈলাস কেশরী, সুকুমার পালের অভিযোগ, “আমাদের অন্ধকারে রেখে জমি নিয়েছে সরকার। মাসখানেক আগে যখন বাধা দিয়েছিলাম, তখন মাটি তুলে নিয়েছিল রেল। ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও পরিবার পিছু এক জন চাকরি পেলে আপত্তি নেই। তার সুরাহা না করে রেল ফের কাজ শুরু করায় বাধা দিয়েছি।” তাঁদের দাবি, রেল বিঘা প্রতি ৬০ হাজার টাকা দিতে চাইছে। বর্তমানে এলাকায় বিঘা প্রতি জমির দাম ৩ লক্ষ টাকা। |