পুরাতত্ত্ব বিভাগের ছাড়পত্র না মেলায় কালনা শহরের রাজবাড়ি কমপ্লেক্সে আটকে রয়েছে ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ চালুর কাজ।
প্রাচীন শহর কালনায় রয়েছে প্রচুর মন্দির ও মসজিদ। ১০৮ শিবমন্দির, প্রতাপেশ্বর মন্দির, লালজি মন্দির, কৃষ্ণজি মন্দির, গিরি গোবর্ধনের মন্দির, গোপালবাড়ির মন্দির, মসজিদ-ই-মজলিস-সহ বিভিন্ন পুরাকীর্তির টানে পর্যটকেরা এখানে ভিড় জমান। শীতে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি লক্ষ করা যায়। তাদের কাছে এ শহরকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু উদ্যোগী হন। তিনি রাজ্যের পর্যটন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিধায়কের আমন্ত্রণে তৎকালীন পর্যটন মন্ত্রী রচপাল সিংহ রথযাত্রার দিন শহরে এসে পুরাকীর্তিগুলি ঘুরে দেখেন। মন্দিরের গায়ে টেরাকোটা-সহ বিভিন্ন কারুকাজ দেখে মন্ত্রী আপ্লুত হন। মন্ত্রী তাঁর দফতরে ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’-এর একটি পরিকল্পনা তড়িঘড়ি পাঠানোর নির্দেশ দেন। পুরসভার তরফে একটি ৫৫ লক্ষ টাকার পরিকল্পনা জেলাশাসকের কাছে জমা দেওয়া হয়। সেখান থেকে পরিকল্পনাটি রাজ্য পর্যটন দফতরে পাঠানো হয়। |
এই লাইট অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম ঠিক কী? পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পদ্ধতির মাধ্যমে মহকুমার বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন আলো এবং সুরেলা শব্দের মাধ্যমে পর্যটকদের কাছে পরিবেশন করা হবে। এর জন্য রাজবাড়ি কমপ্লেক্সের মধ্যে একটি খাস জমিও চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সব কিছুর যাবতীয় বিবরণ কালনা ১ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনা সঠিক ভাবে রূপায়ণের জন্য পর্যটন দফতর টাকা বরাদ্দ করে। এমনকী, দরপত্র আহ্বায়নের পর্বও মিটে যায়। এই কাজের জন্য বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি তৈরির ব্যাপারে একটি সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়। যদিও সংস্থাটি এখনও কাজের নির্দেশ পায়নি। কালনার পুরপ্রধান বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “লাইট অ্যান্ড সাউন্ড যেখানে হবে সেই রাজবাড়ি চত্বরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে কেন্দ্রীয় পুরাতত্ব বিভাগ। এই সংস্থার দিল্লি কার্যালয় থেকে ছাড়পত্র (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) এখনও না এসে পোঁছনোয় কাজ শুরু করা যায়নি।” বিধায়কের দাবি, এই ছাড়পত্র জোগাড়ের ব্যাপারে পর্যটন দফতরের আগের মন্ত্রী কয়েক বার চেষ্টা চালিয়েছেন। নতুন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, ‘‘শীতকালে মানুষ বেড়াতে বেশি ভালবাসেন। এই সময়ে মন্দির প্রাঙ্গণ আলো দিয়ে সাজানো হলে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হত। সরকারি ভাবে টাকা বরাদ্দ হলেও পুরাতত্ত্ব বিভাগের ছাড়পত্র না মেলায় কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না।” পুরাতত্ব বিভাগের কালনার কর্মীরা অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
জেলাশাসক জানান, সেই সময়ে পর্যটনমন্ত্রী পূর্বস্থলী ১ ব্লকের গোপীনাথ মন্দিরটিও দেখে যান। সেই মন্দির সংস্কারে ১১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। এখন কাজ শেষের পথে। পুরসভার আলো বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর আনন্দ দত্ত বলেন, “লাইট অ্যান্ড সাউন্ড চালু হলে পর্যটকদের আকর্ষণ আরও বাড়বে। ইতিমধ্যে রাজবাড়ি চত্বরে থাকা মালঞ্চী মন্দিরের পাশের একটি পুকুরের পাড় বাঁধানো এবং নালা সংস্কারের কাজ করা হয়েছে পুরাতত্ব বিভাগের ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দে। পাশাপাশি, পর্যটকদের সুবিধার কথা ভেবে খেয়াঘাটের কাছে বিশ্রামাগার এবং মহিষমর্দিনী তলায় লঞ্চঘাট তৈরির জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকার একটি পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে পর্যটন দফতরে। এই পরিকল্পনার ব্যাপারেও ইতিবাচক আশ্বাস মিলেছে।” |