|
|
|
|
বঞ্চনা আর গঞ্জনা |
এ কাহিনি রঙিন জীবনের নয়। অপমানের। লড়াইয়ের।
অনুমোদিত জীবনীতে লিখেছেন দেব |
নাম কেন দেব
প্রথম ছবি ‘অগ্নিশপথ’-এর কাজ শেষ। দ্বিতীয় ছবি ‘আই লাভ ইউ’-এর শ্যুটিং চলছে। পরিচালক, প্রযোজক সবাই একমতনায়ক হিসাবে দীপক নামটা অচল। আমাকে ‘জিৎ’ দিয়ে কোনও নাম ঠিক করতে বলা হল। ঘটনাক্রমে বাংলা ছবির প্রতিটি জনপ্রিয় নায়কের নামই তখন জিৎ দিয়ে। চিরঞ্জিত, প্রসেনজিৎ, জিৎ ইত্যাদি। কিন্তু আমার ভেতরে ভেতরে একটা জেদ ছিল, কিছুতেই জিৎ-দের ভিড়ে মিশে যাব না। কী নাম রাখব, ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে গেল ‘দেব’ নামটাকে। তার একটা নেপথ্য কাহিনি আছে। আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি, আমার পইতে হয়। পইতের সময় একজনকে ভিক্ষাবাবা হতে হয়। সেই ভিক্ষেবাবা মনোতোষ ঘোষ একবার দিল্লিতে গিয়েছিলেন বেড়াতে। সেখান থেকে আমার জন্য একটা ব্রেসলেট নিয়ে এসে উপহার দিয়েছিলেন আমার জন্মদিনে। সেটা আমার কাছে এখনও সযত্নে রাখা আছে। তাতেই লেখা আছে ‘দেব’ নামটা। ভিক্ষেবাবার ভাইপোরা দিল্লিতে সোনার দোকানে কাজ করেন। জন্মদিনে আমার জন্য কিছু নিয়ে যেতে হবে। সে জন্যই ভাইপোদের দিয়ে বানিয়ে নিয়ে এসেছিলেন ওই ব্রেসলেটটি। হাতে পেয়ে দেখি, তাতে লেখা আছে ‘দেব’। বিস্মিত হয়ে ভিক্ষাবাবাকে জিজ্ঞেস করি, এই নামটা কেন? উনি বলেন, বুঝতে পারছিলাম না, তোমার কোন নামটা লিখব। দীপক, না রাজু। রাজু আমার ডাকনাম। সেই সময় দেব নামটা আমার ভাল লেগেছে, ওই নামটাই লিখে এনেছি। সেই থেকেই দেব নামটার প্রতি ভীষণ লোভ ছিল। শ্রীকান্তদাকে বললাম। আমার একগুঁয়েমি দেখে শেষে শ্রীকান্তদা বললেন, ঠিক আছে দেখা যাক। |
নানা দেব নানা যুগ |
বাড়িতে মায়ের সঙ্গে |
ভাইবোন তখন ক্যারাটে শেখে |
স্কাউট বয় |
|
অভিনেতার জন্ম
যা ঘটছিল, তাতে নিজের ওপরেই যেন আস্থা হারিয়ে ফেলছিলাম। বিরক্ত হচ্ছিলাম। খালি ভাবতাম, পৃথিবীতে আমিই একজন যে কিছুই ঠিকঠাক করে উঠতে পারছি না! ফাইট মাস্টার গালিগালাজ করছেন, অপমান করছেন। মারতেও এসেছেন। শুধু ভাবতাম, এত খাটছি, চেষ্টা করছি, তা সত্ত্বেও শুধু শুধু গালাগালি খাচ্ছি কেন! চেষ্টার তো কসুর করছি না!
দুবাইতে শ্যুটিং। ব্যাপক গরম। আমার নায়িকা পায়েলের ওটা প্রথম ছবি। ও-ও যে ঠিকঠাক পারছিল তা নয়। মল্লিজি ওকে কিছু বলতে পারছেন না, পুরো রাগটা গিয়ে পড়ছে আমার ওপর। মারতে আসছেন। যাচ্ছেতাই ভাবে গালাগালি করছেন। যত গালিগালাজ খাচ্ছি, মনে মনে একটা জেদ তৈরি হচ্ছে।
রবিজিও মাঝে মাঝে মেজাজ হারিয়ে ফেলে আমাকে বকছেন। রবিজি মানে পরিচালক রবি কিনাগি। মুম্বই থেকেই তিনি আমাকে চেনেন। আমার সম্পর্কে খুব উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। কিন্তু আমার কাজেকর্মে মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে বলতেন, ‘কেয়া করতা হ্যায় ইয়ার!’ যখন এগুলো শুনতাম, গায়ে কাঁটার মতো বিঁধত। মরমে মরে যেতাম।
কলকাতায় দেব
বোধহয় ২০০৩-০৪ হবে। প্রথম হাওড়া ব্রিজ দেখলাম। প্রথম বার ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে গেলাম। আমার পরিচিত বাবুলদা এক ক্যামেরাম্যান ভদ্রলোকের কাছে পাঠালেন। সেখানে গিয়ে তাঁর জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম। উনি শট নিচ্ছিলেন। তার পর এলেন। এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, সিরিয়াল করবে? শুনেই আমি আরও ভেঙে পড়লাম। তার আগে আমি একতা কপূরের সিরিয়ালকে ‘না’ বলেছি। বম্বেতে আমার ভাল সোর্স ছিল। অনেক অফার পেয়েছি। চাইলে প্রচুর সিরিয়াল করতে পারতাম। তাই কলকাতায় সিরিয়াল করার প্রস্তাবে খুব অপমানিত হলাম।
স্বপনদা আমাকে পাঠিয়েছিল পরিচালক স্বপন সাহার কাছে। তখন ওঁর ‘দেবী’ ছবির কাজ চলছিল। স্বপনদার ঘরে গেছি। দেখলাম, স্বপনদার মেয়েই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘ভরতনাট্যম জানো?’ স্বপনদা তখন হিট মেশিন। ভেঙ্কটেশও ওঁর হাতে। আমি বললাম, ‘জানি না, তবে সে রকম অফার এলে শিখে নেব।’ বলল, ‘শিখতে তো প্রচুর সময় লাগবে। ঠিক আছে, পরে হবে।’ ওখানে কিছু হল না।
|
জন্মদিনে। বাড়িতে। কলেজ বন্ধুদের নিয়ে |
আশার আলো
এই সময়েই বাবা-মায়ের সঙ্গে মনান্তর শুরু হয়ে গেল। একদিন বাবাকে বেশ রেগেই বলে ফেলেছিলাম, ‘তোমার যদি মনে হয়, আমাকে খেতে দিতে অসুবিধে হচ্ছে, তো বলো, আমি কলকাতায় কোথাও একটা থাকার ব্যবস্থা করছি। প্লিজ, আমারটা আমাকেই বেছে নিতে দাও।’ শুনে খুব আঘাত পেল বাবা। সেটাই শেষ বার। আর কোনও দিন আমার বিষয় নিয়ে কিছু বলেনি।
আমি ঠিক করেছিলাম, আরও ছ’টা মাস অপেক্ষা করব। ইচ্ছে ছিল রবিজির সঙ্গে কাজ করব দ্বিতীয় ছবিটায়। কারণ রবিজির সঙ্গে আমার টিউনিংটা খুব ভাল। মানসিক চাপ কমাতে সেই সময় ওয়ার্কশপ নিয়ে মেতে উঠলাম। ফাইটিং শিখতে আরম্ভ করলাম। শেষমেষ ভেঙ্কটেশ ফিল্ম থেকে ডাক এল ‘প্রেমের কাহিনী’ ছবির জন্য। ডিরেক্টর রবি কিনাগি। কিন্তু তারপর আবার তিন মাস বসে রইলাম।
আমাকে একটাই কথা বলা হত, ‘তোর সঙ্গে মানানসই সাবজেক্ট ফাইনাল হয়নি। ইতিমধ্যে রবিজির সঙ্গে আমার একটা পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। একদিন রবিজি ফোন করে বললেন, “চল, তেরে সাবজেক্ট মিল গয়া। কব আ রহা হ্যায় কলকত্তা।”
|
আমি দেব (অনুমোদিত জীবনী), গ্রেমাইন্ড পাবলিকেশন
দাম ১২৫ টাকা |
|
|
|
|
|