ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা, প্রতিবাদে দিদির ভাই-ও
প্রকাশিত পুস্তিকার প্রচ্ছদ।
ক’দিন আগেই দিদির খাসতালুক থেকে ভাইয়ের ছবি সরিয়ে দিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। দিদির নির্দেশেই। রণে ভঙ্গ না-দিয়ে এ বার কালীঘাট পেরিয়ে রাজ্যের সর্বত্র নিজের কাজের পরিধি ছড়িয়ে দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়। হাতিয়ার করছেন একটি বিতর্কিত বিষয় ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে গ্রামবাংলার গরিব মানুষকে সতর্ক করা।
হরিশ মুখার্জি রোডের দু’ধার থেকে তাঁর ছবি সরিয়ে দেওয়ার পরে দিদির সঙ্গে কার্তিকের দূরত্ব বেড়েছে। এ বার যে বিষয় ধরে গোটা রাজ্যেই প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা করছেন তিনি, তাতে দিদি-ভাইয়ের সম্পর্কের ফাটল আরও গভীর হবে বলেই রাজনীতির কারবারিদের মত। তাঁর পরিচালনাধীন সমাজসেবামূলক সংগঠন ‘কলকাতা বিবেক’-এর মাধ্যমে ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রচারে নামছেন কার্তিক। ওই প্রচারের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছে। পুস্তিকায় সংগঠনের আহ্বায়ক হিসেবে কার্তিক সমাজসেবামূলক কাজে তাঁরা কী ভাবে ক্ষেত্র প্রসারিত করছেন, তা জানাতে গিয়ে লিখেছেন, ‘গ্রামবাংলার গরিব ভাই-বোনেদের মিথ্যা বুঝিয়ে বিভিন্ন ধরনের চিটফান্ডের মাধ্যমে সর্বস্বান্ত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে সব সময়ে এর প্রতিকারের উপায় বার করতে বদ্ধপরিকর।’
দলীয় নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, মমতার নির্দেশে গঠিত তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল যুবা-কে চ্যালেঞ্জ জানাতেই কার্তিকরা সংগঠনের কাজ রাজ্যব্যাপী ছড়াতে চাইছেন। কার্তিক নিজে অবশ্য এই জল্পনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, “আমাদের পুস্তিকায় বিবেকানন্দের একটা বাণী লেখা হয়েছে: ‘খবরের কাগজে হুজুগ করা নয় মনে রাখবে, নাম-যশ আমাদের উদ্দেশ্য নয়।’ আমরা সেই আদর্শে চলছি। কাজও করছি।” অভিষেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে ধরা যায়নি।
এর আগে তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্র ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে সরব হয়েছেন। তিনি রাজ্যে ওই ধরনের কাজকর্ম নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দরবার পর্যন্ত করেছেন। ঘটনাচক্রে, সোমেনবাবুর সঙ্গে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের সম্পর্ক ইদানীং মোটেই ভাল নয়। তাঁর স্ত্রী, দলীয় বিধায়ক শিখা মিত্রকে শো-কজ করা হবে বলেও ঘোষণা করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
পাশাপাশি, ভুঁইফোঁড় এক অর্থলগ্নি সংস্থা চালানোর ব্যাপারে দলীয় এক সাংসদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র সম্প্রতি তদন্ত শুরু করেছে। এই বিষয় নিয়ে তৃণমূল-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও সরব হয়েছে। কিন্তু কার্তিক ও তাঁর সংগঠন এ বার বিষয়টিকে সর্বস্তরে প্রচার করতে চান। সংগঠনের পক্ষে বিপ্লব দাশগুপ্ত, অরূপ দাসেরা জানিয়েছেন, এই বছর স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশতবর্ষ পালনে তাঁরা আর্তের সেবার পাশাপাশি রাজ্য জুড়ে ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রচারেও নামছেন। প্রচার কেমন হবে, তার পরিকল্পনা করতে শনিবার কালীঘাটে এক সভার আয়োজন করেছিলেন কার্তিকরা। সভায় দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, নদিয়া থেকে প্রায় ১৪০ জন স্বেচ্ছাসেবী যোগ দিয়েছিলেন বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এমনকী, তাঁর পরের ভাই সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ও সভায় ছিলেন বলে কার্তিকের দাবি। সভার পরে দুর্গাপুর থেকে আগত স্বেচ্ছাসেবী ভীমসেন মণ্ডল বলেন, “কলকাতা বিবেককে সামনে রেখে আমারা ১২ জানুয়ারি থেকে প্রভাত ফেরি, রক্তদান, বস্ত্রবিতরণ করব। তেমনই বেআইনি চিটফান্ডের বিরুদ্ধে লিফলেট, পোস্টার দিয়ে প্রচারও করা হবে।” সংগঠনের যুগ্ম সচিব কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিভিন্ন জেলা থেকে আগত স্বেচ্ছাসেবীদের দাবি, “আমাদের সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মানুষের সেবার পাশাপাশি অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ বার তার ব্যতিক্রম হবে না।” সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জেলা থেকে ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত প্রচারের কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, গত ২৫ অগস্ট যুবা-র প্রথম সম্মেলনে ‘মা মাটি-মানুষের জন্য’ বলে এক পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই পুস্তিকায় ঘোষণা করা হয়েছিল, দিদি-র ভাবমূর্তিকে সামনে রেখেই এগোতে চায় যুবা। কার্তিকের ‘কলকাতা বিবেক’ এগোতে চায় স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শকে সামনে রেখে।
শেষ পর্যন্ত দিদি-ভাই, কাকা-ভাইপো কে কাকে টেক্কা দেবেন, সেটাই দেখার!
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.