রাজ্যে বন্ধের মুখে ১৩০টি হিমঘর
কৃষিপণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা এমনিতেই শোচনীয়। শুধু চলতি বছরেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে এক ডজন হিমঘর। এ বার সেই সমস্যাই বহুগুণ বাড়ার আশঙ্কা জাগিয়ে রাজ্যে আরও ১৩০টি হিমঘর বন্ধ হওয়ার মুখে।
এই আশঙ্কা প্রকাশ করে ওয়েস্ট বেঙ্গল কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রামপদ পালের অভিযোগ, “এক দিকে গত দু’বছরে হিমঘরের ভাড়া বাড়েনি। অন্য দিকে জারি হয়েছে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নয়া এক বিজ্ঞপ্তি। এই দুই কারণই এমন অবস্থার জন্য দায়ী।”
ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে নভেম্বরে এক দিনের ধর্মঘট পালন করেছিলেন হিমঘর মালিকেরা। জানিয়েছিলেন, অবিলম্বে ভাড়া না বাড়লে হিমঘর চালানোই অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাঁদের পক্ষে। এই পরিস্থিতিতে রামপদবাবুর অভিযোগ, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে হিমঘরের ভাড়া কম। অন্য রাজ্যে যেখানে হিমঘরে আলু রাখতে কুইন্টাল-প্রতি ১৩৫-১৫০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়, সেখানে দক্ষিণবঙ্গে তা মাত্র ১০১ টাকা। আর উত্তরবঙ্গে ১০৮ টাকা। তা ছাড়া, দেশে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই হিমঘরের ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করে রাজ্য সরকার। এই ব্যবস্থা চালু থাকায় আধুনিকীকরণের জন্য কেন্দ্রের কাছে প্রাপ্য ভর্তুকি থেকেও হিমঘরগুলি বঞ্চিত হচ্ছে বলে রামপদবাবুর অভিযোগ।
উল্লেখ্য, রাজ্যে মোট ৫০৩টি হিমঘর রয়েছে। এর মধ্যে ৪২৫টি আলু রাখার জন্য। ভাড়া নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি শুধু আলু রাখার হিমঘরগুলির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
থাকবে কোথায়? —ফাইল চিত্র
ভাড়া না-বাড়ার পাশাপাশি, হিমঘর মালিকদের দুশ্চিন্তার বড় কারণ সম্প্রতি রাজ্য পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক নোটিস। ওই নোটিস অনুযায়ী, হিমঘর ঠাণ্ডা রাখতে আর অ্যামোনিয়া গ্যাস ব্যবহার করা যাবে না। তার বদলে পর্ষদ যে বিকল্প গ্যাস ব্যবহারের সুপারিশ করেছে, তা ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু রামপদবাবুর দাবি, এই নির্দেশ কার্যকর করতে হলে হিমঘর চালানোর খরচ প্রায় ৩ গুণ বাড়বে। সে ক্ষেত্রে ব্যবসা চালানোই দুষ্কর হয়ে পড়বে তাঁদের পক্ষে। এ নিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সঙ্গে আলোচনার জন্য রাজ্যকে অনুরোধও জানিয়েছেন হিমঘর মালিকেরা।
হিমঘরগুলির এই জোড়া সমস্যা নিয়ে দু’রকম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজ্যের কৃষিপণ্য বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়। এক দিকে, অ্যামোনিয়া গ্যাস ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়টি নিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে, সরাসরি প্রতিশ্রুতি দেননি এখনই ভাড়া বাড়ানোর।
অরূপবাবুর দাবি, “চিঠি দিলে পর্ষদের সঙ্গে কথা বলব। যাতে আপাতত সমস্যার সমাধান করা যায়। কিন্তু সেই সঙ্গে অ্যামোনিয়ার বিকল্পও ভাবতে হবে হিমঘর মালিকদের। কারণ, এটি পরিবেশ রক্ষার বিষয়। তাই অবহেলা করা যাবে না।”
হিমঘরের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে সরাসরি প্রতিশ্রুতি না দিয়ে বরং অরূপবাবুর পরামর্শ, “খরচ কমানোর অনেক রাস্তা রয়েছে। সেগুলি নিয়ে মালিকদের ভাবনাচিন্তা করতে হবে। আমরা শীঘ্রই কৃষিপণ্য বিপণন আইন সংশোধন করছি। আশা করি এতে সমস্যার কিছুটা সুরাহা হবে।” মাস ছয়েকের মধ্যেই নতুন কৃষি বিপণন আইন কার্যকর হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজ্যের কৃষিপণ্য বিপণন দফতরের সচিব সুব্রত বিশ্বাসও।
অনেকেই মনে করেন, মন্ত্রীর পরামর্শ মেনে যদি খরচ কমাতেই হয়, তবে তার অন্যতম রাস্তা হিমঘর আধুনিকীকরণ। কিন্তু এখানে হিমঘরের ভাড়া রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করায় সে ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ভর্তুকি থেকে বঞ্চিত হয় এই শিল্প। এই বিষয়টি অবশ্য ভেবে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন অরূপবাবু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.